ছোটবেলা থেকেই পাড়ায় সঙ্গে আমার দারুণ ভাব! ঠিক যেমনটা আপনজনের সঙ্গে হয়ে থাকে। বন্ধু বললেও খুব একটা ভুল হবে না। আবার এ যেন সুখ-দুঃখে এক অনাবিল শান্তির ঠাঁই। নাম তার মোহনচাঁদ রোড। খিদিরপুর অঞ্চলের এক বর্ধিষ্ণু এলাকা। আন্তরিকতা, সহমর্মিতা আর পরিচ্ছন্নতা এ পাড়ার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
এটা সম্প্রীতির পাড়া। রয়েছে এক মিশ্র সংস্কৃতি। তবু নেই কোনও রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা। সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। একে অপরের পাশে থাকেন। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলালেও পাড়ার প্রশস্ত ফুটপাথ আজও এখানকার মানুষের গর্ব। সেখানে গাছপালা লাগিয়ে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে।
এ পাড়ায় আজও রয়েছে কিছু ঔপনিবেশিক ধাঁচের বাড়িঘর। পাশাপাশি মাথা তুলেছে বেশ কিছু বহুতল। এসেছেন কত নতুন মানুষ। পুরোনো বাসিন্দারা অনেকে পাড়া ছেড়ে চলে গেলেও ফিরে আসেন পড়শিদের টানে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যস্ততা গ্রাস করায় আগের মতো যাতায়াত না থাকলেও শীতকালে পাড়ার পিকনিকের রেওয়াজটা হারিয়ে যায়নি। বিশেষ করে পুজোর সময়ে পাড়াটা হয়ে ওঠে এক মিলনমঞ্চ। থিমের চাকচিক্য নয় ২৬ পল্লির এই পুজোটায় আজও আছে ঘরোয়া পরিবেশ।
আগের চেয়ে রকের সংখ্যা কমলেও হারিয়ে যায়নি এ পাড়ার আড্ডা। রবিবার এবং অন্যান্য ছুটির দিনে অবশিষ্ট দু’-একটি রক আর কয়েকটি দোকানের সিড়িতে বসে আড্ডা। যোগ দেন নানা বয়সের মানুষ।
গতি: রৌদ্রদগ্ধ দিনে পাড়ার দৃশ্য। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
এ পাড়ায় বরাবরই খেলাধুলোর চল ছিল। মাঠে নয়, পাড়ার চওড়া ফুটপাথেই চলত ফুটবল, ক্রিকেট। সেই ছবিটাও অনেকটাই বদলেছে। পড়াশোনার চাপে কমেছে ছোটদের খেলার সময়। তবে ছুটির দিনে মাঝেমাঝে ছোটদের অল্প সময়ের জন্য খেলতে দেখা যায়। কাছেই পদ্মপুকুরের ধারে বসে একটি বাজার, তবে বাজারটি উঠে যাওয়ার পরেই নিয়মিত হয় এলাকা সাফাই। উন্নত হয়েছে এলাকার নাগরিক পরিষেবা।
অতীতে এ পাড়ায় ছিল সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশ। অতীতের সেই জৌলুস নেই, তবে এখনও হয় ছোটখাটো সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠান। পাড়াতেই রয়েছে হেমচন্দ্র পাঠাগার। মাঝে একটু ঝিমিয়ে পড়লেও আবার কিছু মানুষের মধ্যে বই পড়ায় আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আর আছে বঙ্কিম ঘোষ মেমোরিয়াল স্কুল, এবং সাসেক্স ট্রাস্ট মডেল স্কুল।
পাড়ার রাস্তাটা চওড়া হলেও মাঝেমাঝে পার্কিং সমস্যা বিব্রত করে তোলে। কারা যেন দীর্ঘ সময়ের জন্য গাড়ি রেখে উধাও হয়ে যান। তবে বন্ধুত্বের টানের কাছে সে সব সমস্যা তুচ্ছ বললেই চলে। ফলে দিনের শেষে ফিরতে এখানে ভাল লাগে।
লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক