ফের সল্টলেকে পুরসভার সরবরাহ করা ‘পরিস্রুত’ জলে মিলল ব্যাঙাচি। এ বারও সেই বি এইচ ব্লকেরই দু’টি বাড়িতে। শনিবার দুপুরে ও রাতে সেখানে ব্যাঙাচি মেলা নিয়ে বাসিন্দারা সরব হন রবিবার। গত তিন দিনে তিনটি বাড়িতে ব্যাঙাচি মিলল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরে পুরসভার দাবি, তাদের জলে পোকামাকড় বা ব্যাঙাচি মেলেনি। রবিবার ব্যাঙাচি-বিপত্তির পরে পুর-প্রশাসন জানিয়েছে, আজ, সোমবার সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলিতে পরীক্ষা করবেন পুরকর্মীরা।
এ দিকে, ফের ব্যাঙাচির দেখা মেলায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, ব্যাঙাচি কোথা থেকে এল না খুঁজে উল্টে কার্যত বাসিন্দাদের উপর দায় চাপাচ্ছে পুরসভা। রবিবারের ঘটনায় দুই বাড়ির বাসিন্দাদের দাবি, টাইম কলের জলে ওই ব্যাঙাচির দেখা মিলেছে। তবে পরিমাণে অনেক কম। দু’দিন আগেই ওই ব্লকের বাসিন্দা চন্দন লাহিড়ীর বাড়িতে জলে ব্যাঙাচি মিলেছিল। তখন পুরসভার দাবি ছিল, তাদের জলের গুণমান নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। ওভারহেড ট্যাঙ্কও সাফ হয়েছে। তাই জলে ব্যাঙাচি আসতেই পারে না।
রবিবার সল্টলেক পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দায়িত্বে এসেই জল সরবরাহের বেহাল অবস্থার সংস্কার করেছি। তিন মাস অন্তর নিয়মিত জল পরীক্ষা হয়। ওভারহেড ট্যাঙ্কগুলিও সাফ করা হচ্ছে। কোথাও এই সমস্যা হয়নি।” তবে তাঁর বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে বাড়ির ট্যাঙ্ক, রিজার্ভার নিয়মিত সাফ না করায় সমস্যা হয়।
সল্টলেকে পরিস্রুত এবং ভূগর্ভস্থ জল মিশিয়ে ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে পাইপলাইনে বাড়ি বাড়ি যায়। ফেরুলের মাধ্যমে তা জমা হয় ভূগর্ভস্থ রিজার্ভারে। ওভারহেড ট্যাঙ্কে সেই জল তুলে ব্যবহার করেন বাসিন্দারা। ফেরুল থেকে আসা পাইপলাইনের আউটলেট রয়েছে বাড়িগুলিতে। ফলে রিজার্ভারে যাওয়ার আগেও বাসিন্দারা জল ব্যবহার করছেন। সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রেই এ ভাবে জল নেওয়া হয়েছে। তাতেই ব্যাঙাচির দেখা মিলেছে।
ব্যাঙাচি কোথা থেকে এল, তার সদুত্তর মেলেনি। পুর-প্রশাসনের একাংশের দাবি, অনেকে ভূগর্ভস্থ রিজার্ভারের আয়তন বাড়ানোয় সোক পিট (বৃষ্টির জল বার করে দেওয়ার পথ) থেকে তার দূরত্ব কমছে। বৃষ্টিতে সোক পিটের জল উপচে অনেক ক্ষেত্রে রিজার্ভারের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। রিজার্ভারের উচ্চতা খুব বেশি না হলে বৃষ্টির জল মিশেও এমন হতে পারে। পাশাপাশি জল ও নিকাশি নালা মিশে গেলেও এমন ঘটতে পারে। বি এইচ ব্লকের তিনটি ক্ষেত্রে তেমন প্রমাণও মেলেনি।
স্থানীয় কাউন্সিলর অনিতা মণ্ডল বলেন, “পুরসভাকে আরও বিশদে তদন্তের আর্জি জানাচ্ছি।” সল্টলেকের আবাসিক সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “এক বার ওই এলাকার সামগ্রিক জল সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ওই বাড়িগুলিতে জলের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আদতে সমস্যা কোথায়, এতে তা বোঝা যাবে।”
বিধাননগর পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা মহকুমাশাসক সঞ্জয় দাস প্রথম বার ব্যাঙাচি মেলার পরে বলেছিলেন, ওই বাড়িতে পুরকর্মীরা গিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তাঁর দাবি, ভূগর্ভস্থ জলে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। এলাকায় অন্য কোনও বাড়িতেও এমন ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে এমন হলে একাধিক বাড়িতে এই সমস্যা হত। রবিবারের ঘটনার পরে কৃষ্ণাদেবী বলেন, “পুরসভার জল নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। বছরভর জল সরবরাহের বিষয়টিতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে একাধিক বাড়িতে একই সমস্যা হয়েছে। পুরকর্মীরা গিয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখবেন।”