জ্যামের চোটে ট্যাক্সির আকাল, দমদমে নেমে চরম ভোগান্তি যাত্রীদের

চতুর্থীর বিকেলে বাগডোগরা থেকে বিমানে এসে নেমেছিলেন সুবীর ভট্টাচার্য। পেশায় পশু চিকিৎসক। বিমানবন্দরের কাছে লেকটাউনে বাড়ি। বাগডোগরা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ৫০ মিনিটে। আর বিমান থেকে নেমে ট্যাক্সি পেয়ে বাড়ি পৌঁছোতে লেগেছে তিন ঘন্টা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ১৮:৪২
Share:

চতুর্থীর বিকেলে বাগডোগরা থেকে বিমানে এসে নেমেছিলেন সুবীর ভট্টাচার্য। পেশায় পশু চিকিৎসক। বিমানবন্দরের কাছে লেকটাউনে বাড়ি। বাগডোগরা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ৫০ মিনিটে। আর বিমান থেকে নেমে ট্যাক্সি পেয়ে বাড়ি পৌঁছোতে লেগেছে তিন ঘন্টা। তার মধ্যে ২ ঘন্টা ৫ মিনিট লেগেছে বিমানবন্দরে ট্যাক্সির অপেক্ষায়।

Advertisement

একই অভিজ্ঞতা আভেরী দাসের। বেঙ্গালুরুতে চাকরি করেন এই যুবতী। পুজোর ছুটি নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি কলকাতায় নামার পরে বিমানবন্দরের ভিতরে প্রি-পেইড ট্যাক্সি কাউন্টারের সামনে লাইনে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন প্রায় ৪০ মিনিট। তাঁর কথায়, ‘‘প্রি-পেইড কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। চিৎকার-চেঁচামিচি। খারাপ লাগে নিজের শহরের এই অবস্থা দেখে।’’

পুজোর ভিড় কার্যত শুরু হয়েছে তৃতীয়া থেকে। আর চতুর্থীর বিকেলের পর তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কলকাতা বিমানবন্দরে। একটি ট্যাক্সি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে যাত্রী তুলে বেরিয়ে গিয়ে ফিরছে অনেক পরে। আটকে পড়ছে শহরের ব্যাপক যানজটে। অনেক চালক তো ট্যাক্সি নিয়ে একবার বেরিয়ে যানজটে পড়ে ফিরছেনই না। সুবীরবাবু যে ট্যাক্সি ২ ঘন্টার চেষ্টার পরে পেয়েছিলেন, তার চালক তাঁকে বলেন, ‘‘বিমানবন্দরের প্রি-পেইড থেকে স্লিপ কাটিয়ে যাত্রী নিলে বেঁধে দেওয়া টাকা পাই আমরা। রাস্তায় এতক্ষণ যানজটে পড়ে আমাদের লোকসান হচ্ছে।’’ অনেক ট্যাক্সি-চালক তাই চুক্তি ভিত্তিতে পুজোর দর্শনার্থীদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছেন। তাতে তাঁদের রোজগার অনেক বেশি হচ্ছে।

Advertisement

গোদের উপরে বিষ ফোড়ার মতো, বিমানবন্দরে পুজোর ক’টা দিন যাত্রী সংখ্যাও বাড়ছে। সাধারণ দিয়ে যেখানে কলকাতা থেকে ১৩ হাজার যাত্রী অন্য শহরে উড়ে যান, চতুর্থীর দিন উড়ে গিয়েছেন ২০ হাজার ৫০০ যাত্রী। ধরে নেওয়া হচ্ছে শনিবার সম পরিমান যাত্রী কলকাতাতেও এসেছেন। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘সাধারণত দিন গড়ে ২২০০ ট্যাক্সি বিমানবন্দর থেকে যাত্রী তুলে নিয়ে যায়। এই হলুদ ট্যাক্সির বাইরে সাদা গাড়ি, লাক্সারি ট্যাক্সি এবং ভাড়ার গাড়িও কিছু থাকে। এক দিকে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে, তার উপরে বাইরে যানজটে ট্যাক্সি ফিরছে না বিমানবন্দরে।’’ জানা গিয়েছে, চতুর্থীর দিন বিমানবন্দর লাগোয়া ভিআইপি রোড ও যশোহর রোডে গিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ট্যাক্সিকে অনুরোধ-উপরোধ করে বিমানবন্দরের ভিতরে পাঠিয়েছে যাত্রীদের কথা ভেবেই। কিন্তু, তাতেও সুবীরবাবুদের অতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে ট্যাক্সি পেতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সারা দিনে তিন হাজারের বেশি ট্যাক্সি লেগেছে বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের শহরে পৌঁছে দিতে। তার মধ্যে অনেক ট্যাক্সি একাধিকবার বিমানবন্দরে এসে যাত্রী তুলে নিয়ে গিয়েছে।

হলুদ ট্যাক্সির বাইরে মেগা ক্যাব বা লাক্সারি ট্যাক্সিও হিমসিম খেয়েছে যাত্রীদের চাহিদা পুরণ করতে গিয়ে। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘আমি হলুদ ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়িয়ে মেয়েকে লাক্সারি ট্যাক্সির লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানেও গাড়ি পাইনি। এমনকী দেড়ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরে প্রি-পেইড কাউন্টার থেকে স্লিপ কেটে বাইরে আসার পর দেখি একটাও ট্যাক্সি নেই। সেখানে আরও প্রায় ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে ট্যাক্সি পেতে।’’

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, উদ্ভুত এই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বাসের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই বাতানুকুল বাসগুলি নিয়মিত বিমানবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে। তারা প্রধানত টার্মিনাল থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবেই পুজোর ক’টা দিন সেই সব বাসগুলিকে একেবারে টার্মিনালের গেটের সামনে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ অফিসার। তাতেও পঞ্চমীর সকাল থেকে সন্ধ্যায় সমস্যা এড়ানো যায়নি। বিধাননগর ট্রাফিকের এডিসিপি শিবানি তিওয়ারি বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত ট্যাক্সি যাতে বিমানবন্দরে পৌঁছোয়, যাত্রীদের নিয়ে যেতে পারেন তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন