পরীক্ষার সঙ্গে দায়িত্ব ভোটেরও, বিপাকে স্কুল

পরীক্ষা ও নির্বাচনের যুগ্ম দায়িত্ব কাঁধে পড়েছে বারাসতের বনমালিপুর প্রিয়নাথ ইনস্টিটিউশন, অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি, কল্যাণগড় বিদ্যামন্দিরের মতো স্কুলে। তাদের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনিক কর্তার কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৭
Share:

এ বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পরিচালিত ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা ২৮ জানুয়ারি। তার পরের দিনই নোয়াপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচন। সরকারি দফতরে সমন্বয়ের অভাবে পরীক্ষা নেওয়া ও নির্বাচন পরিচালনা— দুই গুরু দায়িত্বই পড়ে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি স্কুলের ঘাড়ে। কিছু স্কুলের আবার একটিও দায়িত্ব পড়েনি। যাদের দু’টি দায়িত্বই পড়েছে, সে সব স্কুল সম্প্রতি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু স্কুলগুলিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দু’টি দায়িত্বই পালন করতে হবে। এমনিতেই ভোটের আগের দিন সকালে ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারে গিয়ে, তার পরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে কাজ করতে হয় কর্মীদের। ফলে পরীক্ষার দিনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত দায়িত্ব তাঁরা কী ভাবে সামলাবেন, তা নিয়ে আতান্তরে শিক্ষকেরা।

Advertisement

পিএসসি সূত্রে খবর, শেষ মুহূর্তে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার কেন্দ্র বাতিল কার্যত অসম্ভব। চাকরিপ্রার্থীরা ইতিমধ্যে অ্যাডমিট কার্ড পেয়ে কেন্দ্রের নামও জেনে গিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা পড়েছে এমন স্কুলগুলিকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’

পরীক্ষা ও নির্বাচনের যুগ্ম দায়িত্ব কাঁধে পড়েছে বারাসতের বনমালিপুর প্রিয়নাথ ইনস্টিটিউশন, অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি, কল্যাণগড় বিদ্যামন্দিরের মতো স্কুলে। তাদের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনিক কর্তার কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে পরীক্ষা শেষে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে হবে। বনমালিপুর প্রিয়নাথ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস পোদ্দার বলেন, ‘‘সরকারি অফিসারদের সমন্বয়ের অভাবেই শিক্ষকদের অহেতুক হয়রান হতে হচ্ছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে পরিচালনা কার্যত অসম্ভব।’’

Advertisement

কেন? ২৮ তারিখ ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর আড়াইটেয়। তার পরে উত্তরপত্র, প্রশ্নপত্র মেলাতে মেলাতে বিকেল হয়ে যাবে। এ দিকে যেখান থেকে ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে যেতে হয় (ডিসিআরসি), সেখানে ভোটের আগের দিন অর্থাৎ ২৮ তারিখ সকালেই পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। সেখান থেকে সে দিনই ইভিএম ও সরঞ্জাম নিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে হয়। শিক্ষকদের বক্তব্য, পরীক্ষা শেষে বিকেলের দিকে স্কুল থেকে অন্তত তিন-চার ঘণ্টা দূরের ডিসিআরসি যেতে রাত গড়িয়ে যাবে।

ভোট পরিচালনার জন্য প্রতিটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পোলিং অফিসার নিয়ে দল তৈরি হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা, ওই দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মীরা বুথ ভিত্তিক দল করে কাগজপত্র ও ইভিএম পরীক্ষা করে নেন। এর পরে পুলিশ নিয়ে কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত গাড়ি করে আগের দিনই দলটি নির্দিষ্ট বুথে পৌঁছে যায়।

রয়েছে আরও সমস্যা। কর্মীদের বক্তব্য, আগের দিন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গিয়েও রয়েছে হাজারো কাজ। যে ঘরে বুথ তৈরি হচ্ছে তার ব্যবস্থাপনা করে, নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে, ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও দেওয়াল লিখন বা নির্বাচনী কার্যালয় রয়েছে কি না, এমন সব ঝক্কি সামলাতে হয়। পরদিন সকাল ৭টায় ভোট শুরুর আগে প্রতিটি দলের প্রতিনিধিকে নিয়ে নকল (মক) ভোট করে, ইভিএম সিল করে তবেই ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শিক্ষকদের অভিযোগ, পরীক্ষা নেওয়ার পরে এত সব নির্দেশ মানা কার্যত অসম্ভব।

কল্যাণগড় বিদ্যামন্দির স্কুলে আবার সব শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর উপরে পড়েছে নির্বাচনের দায়িত্ব। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবব্রত সিংহ বলেন, ‘‘অবস্থা এমন হয়েছে যে, সবাইকে নির্বাচনের প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে দু’দিন স্কুল ছুটিও রাখতে হচ্ছে। সবার যদি নির্বাচনের দায়িত্ব না পড়ত, তা হলে হয়তো পরীক্ষা ও নির্বাচনের দায়িত্ব সামলানো যেত। কী করব, বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন