বাবাকে মেরে থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ

লিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোর থানায় আত্মসমর্পণ করে জানিয়েছিল, মায়ের উপরে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করতেন তার বাবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

রাত সাড়ে তিনটে বাজতে তখনও কিছুক্ষণ বাকি। হন্তদন্ত হয়ে বছর পনেরোর একটি ছেলে থানায় ঢুকেই কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিককে জানাল, বাবাকে সে মেরে ফেলেছে। শনিবারের ওই ঘটনা প্রথমে বিশ্বাস করেননি ওই আধিকারিক। পরক্ষণেই দেখেন, ছেলেটির হাতে রক্ত লেগে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিকে নিয়ে রাজারহাট থানা এলাকায় তার বাড়ি গিয়ে পুলিশ দেখে, মেঝেতে পড়ে রয়েছে তার বাবার রক্তাক্ত দেহ। পাশেই পড়ে রক্তমাখা কুড়ুল এবং পাথরের চাঁই। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য আর জি কর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোর থানায় আত্মসমর্পণ করে জানিয়েছিল, মায়ের উপরে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করতেন তার বাবা। শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাবা-মায়ের মধ্যে ফের অশান্তি শুরু হয়। অশান্তি চরমে উঠলে ঘরে ঢুকে কুড়ুল দিয়ে বাবার মাথায় আঘাত করে ওই কিশোর। মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এর পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে একটি পাথরের চাঁই দিয়ে ফের তাঁর মাথার পিছনে আঘাত করে ছেলে। থানায় গিয়ে এমনটাই জানায় সে। তদন্তকারীদের মতে, ওই কিশোর একাই খুন করেছে না কি তাঁর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত, এ নিয়ে সংশয়ে তাঁরা। কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে খোঁজ মিলছে না মৃতের স্ত্রী, বড় ছেলে এবং এক মেয়ের।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মৃত ব্যক্তি নিউ টাউনের আকাঙ্ক্ষা মোড়ের কাছে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসা করতেন। বছর সাত-আট আগে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রী বনগাঁয় থাকেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। এক মেয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, প্রায়ই মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি এবং মারধর করতেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে বনগাঁ থেকে বর্তমান ঠিকানায় এনে রাখার ইচ্ছা ছিল মৃতের। তাই নিয়েই প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি চরমে ওঠে। এমনকি, প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তিনি মারার হুমকিও দিতেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারাও পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি প্রায়ই তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতেন। পুলিশের সন্দেহ, দিনের পর দিন ধরে মায়ের উপরে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই সম্ভবত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই কিশোর।

Advertisement

তবে কিছু ক্ষেত্রে সংশয় রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। যেমন, ঘটনার নেপথ্যে যদি শুধু ছোট ছেলেরই ভূমিকা থাকে, তবে তার মা, দাদা এবং বোন কেন বাড়িতে নেই? ঘটনার সময়ে ওই ব্যক্তির স্ত্রীর ভূমিকা কী ছিল? ওই সময়ে দম্পতির বড় ছেলে এবং মেয়ে কোথায় ছিলেন? এ সব প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট নয়। ফলে খুনের ঘটনায় তাঁদেরও যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। মৃতের নিখোঁজ স্ত্রী ও বড় ছেলের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পরেই ঘটনাক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ দিকে, মৃতের এক আত্মীয় তাঁর স্ত্রী এবং দুই ছেলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করা হয়েছে। ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করে নমুনা সংগ্রহ করবে বলে

জানায় পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement