Puja

পুজো-জনতার ‘আচরণ’ই ঠিক করবে সংক্রমণের হার

অনেকের বক্তব্য, এই মুহূর্তে সংক্রমিতের সংখ্যা যা আছে, তা পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু পুজোর সময়ে সুস্থ মানুষেরা যাতে সংক্রমিত না হন, সেটাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া দরকার।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০২:২১
Share:

জমজমাট: দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে তিল ধারণের জায়গা নেই নিউ মার্কেট চত্বরে। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ 

মানুষের দৈনন্দিন আচরণের ধরন অর্থাৎ ‘বিহেভিয়োরাল প্যাটার্ন’-এ পরিবর্তন দরকার। পুজো মরসুম ও তার পরবর্তী সময়ে করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য চিত্র কী দাঁড়াতে পারে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে পুজো-জনতার আচরণ কেমন থাকবে তার উপরে। গত ন’মাসে বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পুজোর আগে এমনটাই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন বিহেভিয়োরাল সায়েন্টিস্টরা।

Advertisement

তাঁদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, সংক্রমণ ছড়ানোর পিছনে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রামক ক্ষমতা, কোনও প্রতিকার না-থাকা, শরীরের দুর্বল প্রতিরোধ শক্তির পাশাপাশি, অন্যতম প্রধান কারণ হল নিয়ম পালনে মানুষের আচরণগত অনীহা বা উদাসীনতা এবং অন্যমনস্কতা।

এই ক’মাসে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচরণ বিশ্লেষণ করে এমনটাই দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিহেভিয়োরাল সায়েন্টিস্টরা। ফলে এক দিকে অতি সতর্কতা এবং অন্য দিকে নিয়ম না-মানার বেপরোয়া মনোভাব— এই দুই বিপরীত গোষ্ঠীর আচরণ পুজোর সময়ে কেমন থাকবে এবং কোন গোষ্ঠী-প্রবণতা প্রাধান্য পাবে, তার উপরেই রাজ্য বা দেশের সংক্রমণের ভবিষ্যৎ চিত্র নির্ভর করছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ক্লাবেই মজুত বোমায় কি বিস্ফোরণ বেলেঘাটায়

আরও পড়ুন: রাজ্যের নিষেধাজ্ঞায় পুজোর মুখে বিমানযাত্রায় বাড়ছে হয়রানি​

একই সঙ্গে এ বারের পুজোয় সরকারি বিধিনিষেধের চেয়েও স্ব-আরোপিত বিধিনিষেধই মূল ‘প্রতিষেধক’ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিহেভিয়োরাল সায়েন্টিস্টরা। কিন্তু পুজোর বাজারেই যে ভাবে প্রতিনিয়ত নিয়ম ভাঙার ‘উৎসব’ দেখা যাচ্ছে, তাতে পুজোয় কতটা নিয়ম পালন করা হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে তাঁরা।

‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড বিহেভিয়োরাল সায়েন্স’-এর পূর্বাঞ্চলীয় কোঅর্ডিনেটর ক্ষীরোদ এম পট্টনায়েক জানাচ্ছেন, চলতি বছরের পুজো অন্য রকম, এটা শুধু মুখে বললেই হবে না। সেই অনুযায়ী নিজস্ব আচরণেও পরিবর্তন দরকার। মাস্ক পরা বা জমায়েত না করার পাশাপাশি এমন জায়গা এড়িয়ে যাওয়া দরকার, যেখানে খুব আওয়াজ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘শব্দের প্রাবল্য বেশি থাকলে মানুষের চিৎকার করে কথা বলার প্রবণতা বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: ‘সুপার স্প্রেডার’ মণ্ডপগুলির সামনে গোটা শহর অসহায়​

এখন স্বল্প পরিসরে চিৎকার করে কথা বললে ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে। ফলে এরকম ছোটখাটো বিষয় মাথায় রেখে সেই অনুযায়ী আচরণে পরিবর্তন করা প্রয়োজন।’’

বিশেষ করে মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মুখে হাত না-দেওয়ার মতো সাধারণ অথচ প্রধান কিছু আচরণ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করা ছাড়া আর অন্য কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ দূরত্ব-বিধি যে ‘সোনার পাথরবাটি’, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। শুধুমাত্র স্থানাভাবই নয়, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারার ক্ষেত্রে জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠের অনীহাও দায়ী। ‘ব্রেন বিহেভিয়ার রিসার্চ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’-র চেয়ারপার্সন মীনা মিশ্র বলছেন, ‘‘দূরত্ব-বিধি পালনের বিষয়টা জনতার উপরে ছাড়লে চলবে না। সেটা যে বাধ্যতামূলক ভাবে মানতে হবে, তা পুলিশ-প্রশাসন ও পুজো উদ্যোক্তাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।’’

অনেকের বক্তব্য, এই মুহূর্তে সংক্রমিতের সংখ্যা যা আছে, তা পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু পুজোর সময়ে সুস্থ মানুষেরা যাতে সংক্রমিত না হন, সেটাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া দরকার। সেখানেও অবধারিত ভাবে চলে আসছে সেই আচরণের ধরনের প্রসঙ্গ। বিহেভিয়োরাল সায়েন্টিস্ট সঞ্জীব বসু আবার জানাচ্ছেন, উপসর্গহীন অথচ সংক্রমিত কোনও ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সেটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। সে জন্য কিছু কিছু আচরণগত পরিবর্তন, যেমন মাস্ক ঠিক ভাবে পরাকে বাধ্যতামূলক করা দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘কান থেকে মাস্ক ঝুলছে বা থুতনির কাছে নেমে গিয়েছে— পুজোর সময়েও এ ভাবে মাস্ক পরলে কিন্তু সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। জামাকাপড়ের মতো মাস্কটাও যে পরতেই হবে, তা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন