Sonagachi

নৃত্যশিল্পীর হাত ধরে সোনাগাছি থেকে লন্ডনে

সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির কর্ণধার, প্রয়াত স্মরজিৎ জানার উদ্যোগ ও প্রশ্রয়ে এক সময়ে গড়ে উঠেছিল ‘কোমল গান্ধার’— যৌনকর্মীর সন্তানদের সাংস্কৃতিক সংগঠন।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

তালে তালে: নৃত্যশিল্পী জয়বন্ত পটেলের কর্মশালায় ‘কোমল গান্ধার’-এর সদস্যেরা। —নিজস্ব চিত্র।

‘মোহে রং দো লাল, নন্দ কে লাল...’।

Advertisement

শোভাবাজারের বড় হলঘরটিতে গমগম করে বক্সে বাজছে বলিউডি গানটি। তার সঙ্গে কত্থকের ছন্দে পা মিলিয়েছে ওরা ন’জন— কেউ যৌনকর্মীর সন্তান, কেউ সেই সঙ্গে রূপান্তরকামীও। আর তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে নাচের মুদ্রা থেকে প্রত্যেকের ভুলত্রুটি হাতে ধরে দেখিয়ে দিচ্ছেন বিলেত থেকে আসা নৃত্যশিল্পী জয়বন্ত পটেল। শুধু তা-ই নয়, জয়বন্তের হাত ধরেই এ বার নাচের মঞ্চে পা রাখতে লন্ডনে পৌঁছে যেতে চলেছেন যৌনকর্মীদের সন্তানদের সংগঠন ‘কোমল গান্ধার’-এর এই ছেলেমেয়েরা।

সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির কর্ণধার, প্রয়াত স্মরজিৎ জানার উদ্যোগ ও প্রশ্রয়ে এক সময়ে গড়ে উঠেছিল ‘কোমল গান্ধার’— যৌনকর্মীর সন্তানদের সাংস্কৃতিক সংগঠন। সেই সংগঠন থেকেই বাছাই করা কয়েক জনকে সোনাগাছির ঘুপচি ঘর থেকে তুলে সোজা বিলেতের মাটিতে নৃত্য পরিবেশনের সুযোগ করে দিচ্ছেন নৃত্যশিল্পী জয়বন্ত। আর তারই প্রস্তুতি হিসাবে সম্প্রতি কলকাতায় এসে জয়বন্ত তিন দিনের কর্মশালা করলেন ‘কোমল গান্ধার’-এর সঙ্গে।

Advertisement

আদতে গুজরাতের বাসিন্দা জয়বন্ত নিজে কুইয়ার সম্প্রদায়ের সদস্য বলেই প্রান্তজনেদের বঞ্চনার যন্ত্রণা সহজেই বুঝতে পারেন। জানেন, ইংল্যান্ডের মাটিতে তিনি সমানাধিকার পেলেও এ দেশে এখনও পরিস্থিতি তেমনটা নয়। এ দেশে আজও আর পাঁচ জনের থেকে ‘আলাদা’ হয়েই বাঁচতে হয় প্রান্তজনদের। প্রতিভা থাকলেও সুযোগের অপেক্ষায় মাথা কুটতে হয় যৌনকর্মীর সন্তান, রূপান্তরকামীদের। জয়বন্ত বলছেন, ‘‘এ দেশে কোমল গান্ধারকে ততটা সুযোগ, সম্মান দেওয়া হয় না, যতটা ওদের প্রাপ্য। ওরাও সমানাধিকারের দাবি রাখে। তাই চাই, ওদের প্রতিভা বিকাশের একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠুক লন্ডন। ওদের সঙ্গে একযোগে কী ভাবে আরও ভাল নৃত্য পরিবেশন করা যায়, তারই কিছুটা প্রস্তুতি করে গেলাম কলকাতায় বসে।’’

প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, আগামী বছর ‘কোমল গান্ধার’-এর লোনা ভট্টাচার্য, রাজকুমারী দাস ও সানি মুখোপাধ্যায় পাড়ি দিতে পারেন লন্ডনে। সেখানে একাধিক জায়গায় জয়বন্তের দলের হয়ে একযোগে নৃত্য পরিবেশন করবেন তাঁরা। তবে আর্থিক সাহায্য মিললে লোনাদের সঙ্গী হতে পারবেন অভিজিৎ-প্রিয়া-তোড়া-পায়েলদের পুরো দলটিও।

শহরের প্রান্তিক এলাকা থেকে এই সব ছেলেমেয়েদের লন্ডনের পথটা অবশ্য এক দিনে তৈরি হয়নি। তা সহজও ছিল না। দুর্বারের তরফে মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, লন্ডনের রয়্যাল হলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপিকা প্রার্থনা পুরকায়স্থের মাধ্যমেই কোনও এক আলোচনাসভায় প্রথম ‘কোমল গান্ধার’-এর সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল লন্ডনের। সেখান থেকেই যোগাযোগ হয় জয়বন্তের সঙ্গে। আর তার পরেই বিলেত যাওয়ার রাস্তা আরও পোক্ত হয় সোনাগাছির ছেলেমেয়েদের সামনে।

কেমন লাগছে? কর্মশালার শেষ দিনে নাচের তালিমের ফাঁকে রূপান্তরকামী রাজকুমারী বলে উঠলেন, ‘‘লন্ডন আগে যাইনি। সেখানে গিয়ে মঞ্চে নাচতে পারব ওঁর সঙ্গে, এটা ভেবেই রোমাঞ্চ হচ্ছে। কত্থকের খুঁটিনাটি শিখছি এই কর্মশালায়, যা আমার কাছে নতুন।’’ আর ‘কোমল গান্ধার’-এর জন্মলগ্ন থেকে তার সঙ্গে থাকা লোনা বলছেন, ‘‘এ ভাবেই হয়তো আস্তে আস্তে মানুষ আমাদের আর আলাদা চোখে না দেখে তাঁদেরই এক জন করে নেবেন। যৌনকর্মীর সন্তান বা রূপান্তরকামী হিসাবে দেগে না দিয়ে শিল্পীর মর্যাদা দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন