donation

সমব্যথী হয়ে চিকিৎসায় দান দম্পতির

চেকের অঙ্ক দেখে থমকে গিয়েছিলেন দম্পতির চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৭:৪০
Share:

ছেলে কোলে শৈলেন ও গীতা। বুধবার, গুপ্তিপাড়ার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজেরা দীর্ঘ বছর পরে সন্তানসুখ পেয়ে ভুলে যাননি অন্যদের কথা। তাই সন্তানধারণের আশায় চিকিৎসকের দরজায় আসা পরিবারগুলির পাশে সমব্যথী হয়ে দাঁড়ালেন হুগলির গুপ্তিপাড়ার এক মধ্যবিত্ত দম্পতি। যা দেখে ও শুনে আপ্লুত চিকিৎসক।

Advertisement

বিয়ের ১৪ বছর পরে, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানসুখ পেয়েছেন হুগলির গুপ্তিপাড়ার গোসাইডাঙার বাসিন্দা শৈলেন দাস এবং গীতা দাস। গত বছর ইচ্ছে থাকলেও হয়নি। এ বার সেই ইচ্ছে পূরণ হল ২৮ মে। কী ইচ্ছে? চিকিৎসা চালাতে অপারগ দম্পতিদের জন্য কিছু টাকা তাঁদের চিকিৎসকের কাছে দান করেন সস্ত্রীক শৈলেন।

চেকের অঙ্ক দেখে থমকে গিয়েছিলেন দম্পতির চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর। এক লক্ষ এক টাকা! তিনি জানান, গত চার দশকের চিকিৎসক-জীবনে কোনও রোগীর থেকে এমন উপহার এই প্রথম পেলেন। ভাবেনি কোনও সংগঠন বা কর্পোরেট সংস্থা।

Advertisement

বরাবরই প্রথা ভাঙায় বিশ্বাসী, পেশায় ব্যবসায়ী শৈলেন এর মধ্যে অবশ্য কোনও মহত্ব দেখছেন না। দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়ায় সমাজ যে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে কোণঠাসা করে দিচ্ছিল, তা বুঝেও ভেঙে পড়েননি। সেই অসহিষ্ণুতা মনে পুষে রাখেননি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে শৈলেন বুঝেছিলেন, তাঁদের থেকেও বেশি সমস্যা রয়েছে বহু দম্পতির। দেখেছিলেন, আর্থিক কারণে চিকিৎসা চালাতে না পেরে স্বামী-স্ত্রীর অশান্তিও। তখনই মনে মনে স্থির করেছিলেন, পাশে দাঁড়ানোর উপায় ভাবতে হবে।

গৌতমবাবুর কথায়, “এত রোগী দেখেছি, কিন্তু এমন বড় মনের মানুষ দেখিনি। শৈলেনের মতো রোগী মাসে এক জনও যদি পেতাম, তা হলে আরও অনেক দম্পতি সন্তানসুখ পেতেন।’’ আর শৈলেন বলছেন, “মাসে নয়। দিনে এক জন রোগীও যদি এমন দম্পতিদের কথা ভাবেন, তা হলে আরও অনেক মুখে হাসি ফুটবে। আমাদের মতোই খুশি আসুক সবার ঘরে।”

আর পাঁচটা বাঙালির মতো নেতাজি-ভক্ত শৈলেন। এলগিন রোডে সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়ির কাছেই একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ২৩ জানুয়ারি তাঁদের সন্তান প্রাপ্তি। তাই সদ্যোজাতের নাম সুভাষ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেননি শৈলেন। গত ২৮ মে ছিল ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা দিবস। সন্তানকে কোলে নিয়ে তাই বাবার অঙ্গীকার, “যত দিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পারব, প্রতি ২৮ মে ডাক্তারবাবুর হাতে উপহার দিয়ে আসব। বদলে নিশ্চয়ই আশীর্বাদ পাবে আমাদের সন্তান।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন