রাতে খাওয়ার পরেই খুন, জানাল পুলিশ

পরিবার কোনও অভিযোগ না করলেও পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়। প্রায় ৫০ দিন পরে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানতে পারে, চান্দ্রেয়ীদেবীর মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধের জেরে। তাঁর শরীরের ভিতরেও আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৪
Share:

এই বাড়িতেই খুন হয়েছেন চিকিৎসক চান্দ্রেয়ী দাসচৌধুরী।-নিজস্ব চিত্র।

রাতের খাবার খাওয়ার পরেই খুন হয়েছিলেন রবীন্দ্র সরোবরের বাসিন্দা চান্দ্রেয়ী দাসচৌধুরী। গত ২২ মে-র ওই খুনের ঘটনার কিনারা না হলেও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে পুলিশ এ বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত। কারণ, এসএসকেএম হাসপাতালের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট বলছে মৃত্যুর সময়ে মৃতার পাকস্থলীতে খাবারের অংশ মিলেছিল। আর পুলিশের কাছে চান্দ্রেয়ীদেবীর পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, সাধারণত সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে রাতের খাবার খান তাঁরা। রাত ১১টা নাগাদ ঘুমোতে যান। পুলিশ জানায়, চান্দ্রেয়ীদেবীর পাকস্থলীতে সেই খাবারের অংশ মিলেছে। ফলে পরিবারের বয়ানের সঙ্গে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মিলিয়ে পুলিশ জানাচ্ছে, খাবার খাওয়ার ঘণ্টা তিন-সাড়ে তিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মহিলার।

Advertisement

কিন্তু কে করল খুন?

পুলিশের বক্তব্য, মৃতার পরিবারের সদস্যদের লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁদের বয়ানে একের পর এক অসঙ্গতি মেলায় তদন্তকারীরা মোটের উপরে নিশ্চিত যে, চান্দ্রেয়ীদেবীকে খুনের পিছনে কোনও বহিরাগত নন, পরিচিত কেউই জড়িত। সেই পরিচিতকে বাঁচাতেই মৃতার মা এবং ভাই বারবার ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে ধারণা পুলিশের।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ২২ মে সকালে চান্দ্রেয়ীদেবীকে ঘরে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান তাঁর ভাই জয় দাসচৌধুরী। পরিবার কোনও অভিযোগ না করলেও পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়। প্রায় ৫০ দিন পরে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানতে পারে, চান্দ্রেয়ীদেবীর মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধের জেরে। তাঁর শরীরের ভিতরেও আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এর পরেই পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের মামলা রুজু করে। পুলিশের কাছে জয় প্রথমে দাবি করেন, দিদি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ভেবে তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে চান্দ্রেয়ীদেবীকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সচালক এবং কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, এসএসকেএমের আগে চান্দ্রেয়ীদেবীকে শরৎ বসু রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসকেরা চান্দ্রেয়ীদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিতে অস্বীকার করায় জয় ওই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সোজা চলে যান এসএসকেএমে। তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার পরে জয় জানিয়েছিলেন, চান্দ্রেয়ীদেবী কসবা রাজডাঙা এলাকায় একটি বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসক ছিলেন। সেখানেই চাকরি করতেন মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে পর্যন্ত। পুলিশ ওই তথ্য খতিয়ে দেখতে গিয়ে সেই বৃদ্ধাশ্রমের সন্ধান পায়নি। পরে আবার তদন্তকারীদের হাতে তথ্য আসে, চান্দ্রেয়ীদেবী বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ছিলেন। কিন্তু চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে চলে আসেন। তা হলে তাঁর পরিবারের লোকজন কেন প্রথমে চান্দ্রেয়ীদেবীকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।

পুলিশের দাবি, ওই মহিলা খুন হয়েছেন জেনেও তা স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন মৃতার মা এবং ভাই। তদন্তকারীদের অনুমান, ইচ্ছে করেই পরিবারের সদস্যেরা ভুল তথ্য দিচ্ছেন। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ওই বাড়িতে মা এবং ভাইয়ের সঙ্গেই থাকতেন ওই মহিলা। ঘটনার আগে ওই তিন জনের বাইরে কেউ ছিলেন না বাড়িতে। সেই সঙ্গে একের পর এক বয়ান বদল। ফলে বহিরাগতের বদলে পরিচিতেরাই যে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন