হেলে পড়া বাড়ি ভাঙা শুরু আজ

নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি মেরামতি করবেন, কলকাতা পুরসভায় চিঠি দিয়ে আবেদন জানালেন তিলজলার হেলে পড়া বাড়ির বাসিন্দারা। বাড়ি কতটা হেলেছে, তা পরীক্ষা করার পাশাপাশি হাইড্রলিক ব্যবস্থায় তা মেরামতি করা হবে বলেও তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন পুরসভার কাছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

তিলজলার সেই বাড়ি।

নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি মেরামতি করবেন, কলকাতা পুরসভায় চিঠি দিয়ে আবেদন জানালেন তিলজলার হেলে পড়া বাড়ির বাসিন্দারা। বাড়ি কতটা হেলেছে, তা পরীক্ষা করার পাশাপাশি হাইড্রলিক ব্যবস্থায় তা মেরামতি করা হবে বলেও তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন পুরসভার কাছে। কিন্তু সে দাবি উড়িয়ে পুরসভার বক্তব্য, আজ, শনিবার থেকেই ওই বেআইনি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করবে পুরসভা। কারণ, যে প্রযুক্তিগত কৌশলে বাড়িটি সংস্কারের কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাসিন্দারা, সেটা কখনওই সম্ভব নয়। তা ছাড়া বাড়িটি ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক ঘোষিত হয়েছে। ফলে অন্যদের হাতে ওই বা়ড়ি সংস্কারের দায়িত্ব ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই, বিশেষ করে পুরো নির্মাণই যেখানে বেআইনি!

Advertisement

গত ২৪ অক্টোবর তিলজলায় শিবতলা লেনের একটি পাঁচতলা বাড়ি পাশের অন্য আর একটি পাঁচতলা বাড়ির গায়ে হেলে পড়েছে বলে শোরগোল পড়ে যায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে যান পুলিশ এবং পুরসভার আধিকারিকেরা। দু’টি বাড়িই ফাঁকা করে দেওয়া হয়। পরীক্ষার পরে পুর আধিকারিকেরা রিপোর্টে জানান, হেলে পড়া বাড়িটি ভেঙে ফেলা হবে। ততদিন ওই বাড়িতে বসবাসের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুরসভা। ওই ঘটনার পরে রাতারাতি বাড়ি ছাড়া হয়ে যায় ২৩টি পরিবার। তাদের মধ্যেই রয়েছে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জেবা খাতুন। তাদের বাড়িটি যে বাড়ির গায়ে হেলে পড়েছে, সেখানেই এখন পরিবারের সঙ্গে থাকছে জেবা। হেলে পড়া বাড়ির সামনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের গিয়ে সে জিজ্ঞাসা করছে, ‘‘পুরসভা বাড়ি ভাঙবে কবে? সামনেই পরীক্ষা, পড়াশোনা কিছুই হচ্ছে না।’’

সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ছোট্ট ঘরে ডাঁই করে রাখা একের পর এক ব্যাগ। পাশের বাড়ি হেলে পড়ায় ঘরের একমাত্র জানলাও খোলা যাচ্ছে না এখন। জেবা জানাল, মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও পড়াশোনা কিছুই করতে পারছে না সে। তার বাবা মহম্মদ আজম বাড়ি বাড়ি দুধ দেওয়ার কাজ করেন। মা শহনাজ বেগম গৃহবধূ। পরিবারের অন্য কোথাও ঘর নেওয়ার স্বচ্ছলতাও নেই জেবাদের। শহনাজ বলেন, ‘‘বাড়িটা বহুদিন থেকে ওই রকম হেলে ছিল। অন্য কোথাও ঘর নেওয়ার টাকা নেই আমাদের। তাই বিপদ জেনেও ওখানেই থাকছিলাম। মেয়ের সামনে পরীক্ষা। এখন কী করব, জানি না।’’ জানালেন, জেবারা যে ঘরে উঠেছে, সেই ঘরের মালিক দেশের বাড়ি গিয়েছেন। ফলে এখন থাকতে পারছেন। তাঁরা ফিরে এলে কোথায় থাকবে ওই পরিবার, সেটাই এখন চিন্তা জেবাদের।

Advertisement

আজ, শনিবার থেকে হেলে পড়া বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হলেও তাঁদের বাসস্থানের অনিশ্চয়তা কবে কাটবে, বুঝতে পারছেন না হেলে পড়া বাড়ির আর এক বাসিন্দা সালেয়া খাতুন। রাতারাতি গৃহহীন ওই মহিলা এখন তিলজলাতেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হবে। তবে কবে সেই কাজ শেষ হবে এবং আমরা বাড়ি ফিরব, জানি না। ভাল কোথাও থাকার আর্থিক অবস্থাও নেই আমাদের। তাই বিপদ জেনেও ওখানেই থাকছিলাম এতদিন।’’ দ্রুত কাজ এগোতে ওই বাড়ির বাসিন্দারা নিজেদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানালেও পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য, ‘‘বেআইনি বাড়িতে থাকার বদলে বাসিন্দারা নিজেরাই পুলিশ বা পুরসভার দ্বারস্থ হতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে আগেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন