স্কুল সরেছে ৮ কিমি, বিপাকে প্রতিবন্ধীরা

স্কুলের পড়ুয়াদের বয়স ৪-৫ বছর থেকে ২০-২২ বছরের মধ্যে। সাধারণ স্কুল নয়, বিশেষ স্কুল। মানসিক ভাবে যারা একটু অন্য রকম, ওই স্কুল তাদের জন্য। স্কুলের বয়স ৬৫ বছরের উপর। এখন মানসিক প্রতিবন্ধীদের সহায়, বহু পুরনো এই সরকারি স্কুল ‘বোধিপীঠ বিদ্যালয়’-ই ধুঁকছে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০০:২৮
Share:

স্কুলের পড়ুয়াদের বয়স ৪-৫ বছর থেকে ২০-২২ বছরের মধ্যে। সাধারণ স্কুল নয়, বিশেষ স্কুল। মানসিক ভাবে যারা একটু অন্য রকম, ওই স্কুল তাদের জন্য। স্কুলের বয়স ৬৫ বছরের উপর। এখন মানসিক প্রতিবন্ধীদের সহায়, বহু পুরনো এই সরকারি স্কুল ‘বোধিপীঠ বিদ্যালয়’-ই ধুঁকছে।

Advertisement

মানিকতলা এলাকার সুকিয়া স্ট্রিট লাগোয়া হরিনাথ দে রোড থেকে স্কুলটিকে তিন বছর আগে ‘নতুন ভবন নির্মাণ হবে’ বলে লিখিত ভাবে জানিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে সল্টলেকের মহিষবাথানে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরেই সমস্যার শুরু। সুকিয়া স্ট্রিট বা আশপাশে কাজ করা মা-বাবা কাজে যাওয়ার সময়ে সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন, আবার কাজ শেষে সন্তানকে নিয়ে ফিরতেন।

স্কুল সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের সবাই দরিদ্র বা হতদরিদ্র পরিবারের। রোজ ২০-৩০ টাকা দিয়ে তাদের বাড়ির লোকজনের পক্ষে মহিষবাথানে যাতায়াত করাও বিলাসিতা। স্কুলে কেবল ভর্তির সময়েই ১০০ টাকা নেওয়া হয়, অনেকের কাছ থেকে সেটাও নেওয়া হয় না। ওই স্কুলে পড়ার আর কোনও খরচ নেই। স্কুল মহিষবাথানে সরে যাওয়ার পর অন্তত ১০ জন পড়ুয়া কমে গিয়েছে। এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ৪২। অধ্যক্ষা-সহ শিক্ষিকা আছেন সাত জন, আর পাঁচ জন শিক্ষাকর্মী।

Advertisement

জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা দফতরের অধীন ওই স্কুলের শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে সমস্যার সুরাহার আবেদন করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের অভিযোগ, মহিষবাথানে স্কুল সরানো হলেও সেখানে উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষই নেই। ক্লাস হচ্ছে অ্যাসবেস্টস-এর চাল দেওয়া একটি ঘরে, যার ফলে তীব্র গরমে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার বৃষ্টি হলে ক্লাসরুমে জল পড়ে, চার দিকে জল জমে থাকে। ওই তল্লাটে সাপেরও উপদ্রব। স্কুলের শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য। আশপাশের পরিবেশ এতটাই অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধে ভরা যে সেখানে আর যা-ই হোক, কোনও স্কুল চলতে পারে না — এমনটাই জানাচ্ছেন বোধিপীঠ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা।

মানিকতলা থেকে ‘অস্থায়ী ভাবে’ সরানোর সময়ে ওই দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, পুরনো স্কুলবাড়ি ভেঙে নতুন ভবন হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানানো শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বক্তব্য, সেই নতুন ভবন তৈরির কোনও উদ্যোগ নেই।

জনশিক্ষা প্রসার ডিরেক্টরেটের এক শীর্ষ আধিকারিক অবশ্য বলছেন, ‘‘স্কুলটি পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনা হবে না। তবে মহিষবাথানে স্কুলের অবস্থা কী ভাবে ভাল করা যায়, সেটা দেখছি।’’

জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘নতুন ভাবে স্কুল ভবন তৈরি করে দেওয়ার অবস্থা আমাদের নেই। দেখছি, কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন