Sealdah

২২ দিনের সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী বাড়িতে, শিয়ালদহে বেপরোয়া বাসের বলি রাহুল! সঙ্গে বোন, শ্যালিকা

দশমীর রাতে কলকাতার রাস্তায় বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের ছ’জন আক্রান্ত হন। এঁদের মধ্যে দুই তরুণী-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।মৃত রাহুল প্রসাদের সন্তান হয়েছিল ঠিক ২২ দিন আগেই।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২২ ১৫:১৮
Share:

ডিসেম্বরেই অদিতির দিদির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রাহুলের। নিজস্ব চিত্র।

তিন সপ্তাহ আগেই সদ্যোজাত সন্তানকে দু’হাতে আগলে ধরেছিলেন। এখন সেই সন্তানের বয়স ২২ দিন। তার মা সবে সেরে উঠতে শুরু করেছেন প্রসব-পর্বের ধকল থেকে। কিন্তু তাঁদের ভরসা দেওয়া উষ্ণ হাত দু’টো এখন নিথর। শরীরটাও পড়ে রয়েছে হাসপাতালের ঠান্ডাঘরের কোণে। ঘণ্টা কয়েক আগে শিয়ালদহ ফ্লাইওভারের উপর বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় রক্তাক্ত হয়ে ছিটকে পড়েছিলেন রাহুল প্রসাদ। পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার এক মাসও হয়নি তাঁর। বিয়ে করেছেন গত ডিসেম্বরে। সবে জীবনের এক নতুন অঙ্কে পা রাখা পরিবারটি এক বাসচালকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় মুহূর্তেই ছারখার হয়ে গেল।

Advertisement

শিয়ালদহের বাস দুর্ঘটনায় যে ১৮ বছরের কিশোরী অদিতির মৃত্যু হয়েছে, তাঁর দিদি নীলমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রাহুলের। এই ডিসেম্বরেই প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালন করার কথা ছিল দু’জনের। তার আগে অবশ্য নীলম সন্তানসম্ভবা হন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি পুত্রসন্তান হয় রাহুল এবং নীলমের। তবে জন্মের তিন সপ্তাহের মধ্যেই বাবাকে হারাল সদ্যোজাত শিশুটি। বিজয়া দশমীর দিন এক লহমায় ছারখার হয়ে গেল পরিবারটি। ‘বাবা’ কী বোঝার আগেই ২২দিনের শিশু হারাল তার বাবাকে।

বুধবার দশমীর দিন নীলমের পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন রাহুল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শ্যালিকা অদিতি, শ্যালক নীলেশ, অদিতিদের দুই মাসতুতো ভাই এবং রাহুলের এক তুতো বোন। রাতে শিয়ালদহ উড়ালপুলের উপর দু’টি বাসের রেষারেষিতে আচমকা একটি বাস পিছন থেকে ধাক্কা মারে রাহুলদের। ঘটনাস্থলে অদিতি মারা যান। পরে এনআরএস হাসপাতালে মৃত্যু হয় রাহুল এবং তাঁর তুতো বোন নন্দিনীর।

Advertisement

পেশায় ব্যবসায়ী রাহুলের পরিবার জানিয়েছে, এখনও রাহুলের স্ত্রীকে এই দুর্ঘটনার খবর দেওয়া হয়নি। সদ্য মা হয়েছেন তিনি। শারীরিক ভাবে এখনও দুর্বল। তাই দশমীর দিন তিনি বেরোতে পারেননি পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে। বাড়িতেই ছিলেন সন্তানকে নিয়ে। রাহুলের পরিবার জানিয়েছে, আপাতত রাহুলের স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়েই চিন্তিত তাঁরা। নীলম এখনও জানেন তাঁর স্বামী, ভাই, বোন ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি। হয়তো আশাও করছেন, দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন সবাই।

আর ২২ দিনের শিশু? এই শোক বোঝার মতো বয়সই হয়নি তার। তবে, তুলতুলে নরম দুটো হাত মাঝেমধ্যেই খুঁজবে পিতার স্পর্শ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন