শহরে ‘শাটার গ্যাং’-এর দাপটের মধ্যেই এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল লালবাজার।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম উপেন্দ্র প্রসাদ। সে ভিন্ রাজ্যের ‘শাটার গ্যাং’-এর অন্যতম পাণ্ডা। চলতি সপ্তাহে বিহারের মোতিহারি থেকে তাকে গ্রেফতার করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের অনুমান, উপেন্দ্র যাদবপুর এবং হরিদেবপুরে দু’টি মোবাইলের দোকানে চুরির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তাকে জেরা করে বাকিদের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
দুষ্কৃতী-দলের এমন নাম কেন? পুলিশ সূত্রের খবর, গত রবিবার কড়েয়া থানার সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের একটি মোবাইলের দোকানের শাটার বেঁকিয়ে ঢুকে কয়েক লক্ষ টাকা দামের হ্যান্ডসেট লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর শোভাবাজারের কাছে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের একটি দোকান থেকেও একই কায়দায় লুঠ হয়েছিল কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের দামি মোবাইল। ওই দুই ঘটনার মাসখানেক আগে যাদবপুরেও একটি মোবাইলের দোকান সাফ করেছিল দুষ্কৃতীরা। একই কাজ তারা করে হরিদেবপুরেও।
পুলিশ আরও দাবি করেছে, দুষ্কৃতীরা কোনও দোকান লুঠ করার আগে সেখানে দামি হ্যান্ডসেট রয়েছে কি না তা জানার জন্য রেইকি করছে। পরে সেখানে হানা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা
দামের মোবাইল নিয়ে চম্পট দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে মোবাইলের বড় দোকানগুলির সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য দোকান-মালিকদের সতর্ক করেছে লালবাজার। পুলিশ সূত্রের খবর, দোকানের মালিকদের বলা হয়েছে দু’দিকে তালার সঙ্গে শাটারের মাঝেও তালা দিতে হবে। সেই সঙ্গে শাটার এবং কাচের দরজার মাঝে বসাতে হবে লোহার কোল্যাপসিব্ল গেট। যাতে শাটার গ্যাং-এর সদস্যেরা শাটার বেঁকিয়ে ভিতরে ঢুকতে পারলেও কোল্যাপসিব্ল গেটে বাধা পায়।
সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের মাসিক অপরাধ-দমন বৈঠকে ‘শাটার গ্যাং’ সম্পর্কে বাহিনীর আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে বলেছিলেন খোদ পুলিশ কমিশনার। তার মধ্যেই কড়েয়ার ওই ঘটনায় চিন্তিত তদন্তকারীরা। তাঁদের মতে, কয়েক বছর আগে শাটার গ্যাং সক্রিয় থাকলেও লাগাতার ধরপাকড়ের পরে তাদের দাপট অনেকটাই কমেছিল। কিন্তু আবার তারা নতুন করে সক্রিয় হয়ে বিভিন্ন দোকানে লুঠপাট চালাচ্ছে। যাতে চিন্তিত কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। তাই চলতি সপ্তাহেই একাধিক ডেপুটি কমিশনার তাঁদের অধীন থানার আধিকারিকদের ডেকে মোবাইলের দোকানের মালিকেরা যাতে ওই দুই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তা দেখতে বলেছেন। পাশাপাশি রাতের শহরে টহলদারি পুলিশকর্মীরা যাতে মোবাইলের দোকানগুলির উপরেও নজর রাখেন, তার জন্য লালবাজারের তরফে প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্রের দাবি।
লালবাজার জানিয়েছে, উপেন্দ্র গ্রেফতার হলেও বড়তলা এবং কড়েয়ার দু’টি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত শাটার গ্যাং-এর খোঁজে বিহারে পাড়ি দিয়েছে গোয়েন্দাদের আর একটি
দল। গোয়েন্দারা আগেই জানিয়েছিলেন, ওই দলটি প্রতিবেশী রাজ্যের, যারা লুঠপাটের পরে সেখানেই ফিরে যাচ্ছে। উপেন্দ্রকে গ্রেফতারের পরে সেটিই প্রমাণ হল বলে দাবি পুলিশের একাংশের।