local train

আশ্বাস সত্ত্বেও মহিলা কামরায় উদ্বেগের যাত্রা

রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস সত্ত্বেও রাতে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ করার ছবিটা বদলায়নি।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৫২
Share:

বিধি-ভঙ্গ: হাওড়া থেকে ছাড়া রাত ৯টা ৫০-এর ব্যান্ডেল লোকালের মহিলার কামরায় সম্প্রতি দেখা যায় এই দৃশ্য। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

রাত ৮টা ৪৭ মিনিটের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের লোকাল তখনও স্টেশন ছেড়ে যায়নি। চোখের সামনে মহিলা কামরা দেখেও তা এড়িয়ে গিয়ে সাধারণ কামরায় উঠলেন চন্দনপুরগামী এক মহিলা যাত্রী। প্রায় একই ছবি রাত ৯টা ১৫ মিনিটের বজবজ লোকালের। মহিলা কামরা দেখেও এক তরুণী ইতস্তত করছেন, উঠবেন কি না, তা ভেবে। শেষে ওই কামরায় উঠলেও সতর্ক হয়ে দরজার কাছ ঘেঁষে একটি আসনে বসলেন। কামরায় হাতে গোনা যাত্রী থাকলেও চোখ-মুখ থেকে উদ্বেগ গেল না তাঁর।

Advertisement

রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস সত্ত্বেও রাতে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ করার ছবিটা বদলায়নি। গত মাসের মাঝামাঝি শিয়ালদহমুখী দত্তপুকুর লোকালে উল্টোডাঙা আসার সময়ে ভরদুপুরে প্রায় ফাঁকা কামরায় দুষ্কৃতীর আক্রমণের মুখে পড়েন এক কলেজপড়ুয়া। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রানাঘাট লোকালে দুষ্কৃতীদের ভয়াবহ আক্রমণের মুখে পড়েন এক তরুণী। ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলা হয় তাঁকে। রাত বাড়লে কেবলমাত্র রক্ষীবিহীন মহিলা কামরা ফাঁকা হয়ে যাওয়াই নয়, সন্ধ্যার পর থেকেই পুরুষ যাত্রীদের একাংশ খালি মহিলা কামরা দেখে সেখানে উঠে পড়ছেন বলেও অভিযোগ। এ-ও অভিযোগ, মহিলা যাত্রীরা কারণ জানতে চাইলে নিজেদের রেলকর্মী বলেও পরিচয় দিচ্ছেন তাঁরা। কিছু ক্ষেত্রে হাওড়ার মতো বড় স্টেশন থেকে ট্রেনের মহিলা কামরায় পুরুষ যাত্রীদের উঠতে দেখলে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ, ট্রেন বড় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পরেই ঢিলেঢালা নজরদারির সুযোগ নিয়ে ফের মহিলা কামরায় পুরুষ যাত্রীদের আনাগোনা বাড়ছে। দিনকয়েক আগে রাত ৯টা ৫০ মিনিটের ব্যান্ডেল লোকালে ওঠার সময়ে এক মহিলা যাত্রী দেখেন, সামনের দিকে জনা দশেক মহিলা যাত্রী থাকলেও কামরার পিছনের দিকে দিব্যি উঠে বসেছেন জনা সাত-আট পুরুষ। অভিযোগ, তাঁরা কেন সেই কামরায়, তা জানতে চাইলে সদম্ভ উত্তর আসে যে, তাঁরা রেলকর্মী। কেউ কেউ আবার আরপিএফ বলেও পরিচয় দেন।

মহিলা কামরায় পুরুষ যাত্রীদের এই অবাধ আনাগোনা রেলের নিরাপত্তার ফাঁকফোকরই ধরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। রেলের এক আধিকারিক জানান, মহিলা কামরায় নিরাপত্তার দায়িত্ব আরপিএফ এবং জিআরপি-র। কিন্তু, কর্মীর অপ্রতুলতার কারণে সব ট্রেনে নিয়মিত ভাবে রক্ষী দেওয়া সম্ভব হয় না। দূরপাল্লার মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায় নিরাপত্তা দিতে গিয়ে লোকাল ট্রেন উপেক্ষিত হয়। সমস্যা কমাতে আরপিএফ এবং জিআরপি-র সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি নিজস্ব তথ্যভান্ডার তৈরির উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওই আধিকারিক। যাতে অপরাধের প্রবণতা আছে, এমন দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যায়। যদিও যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ধরপাকড়ের নামে আরপিএফ আসলে বয়স্ক এবং অশক্ত যাত্রীদের ধরে। যাঁরা ভিড় কামরায় উঠতে না পেরে বাধ্য হয়ে বা ভুল করে মহিলা কামরায় উঠে পড়েন।

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, নতুন এসে পৌঁছনো রেকগুলিতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও পুরনো অধিকাংশ রেকে ক্যামেরা নেই। ফলে, কারা ওই সব কামরায় উঠছেন, তা সব সময়ে ধরা সম্ভব হয় না। সব কামরায় ক্যামেরা বসানো গেলে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তথ্যভান্ডার তৈরি করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মহিলা যাত্রীদের উদ্বেগের বিষয়টি আমাদের কাছেও চিন্তার। রেলকর্মী বা অন্য যে-ই হন, মহিলা কামরায় কারও ওঠা উচিত নয়। এই ধরনের ঘটনা এড়াতে রেলরক্ষীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন