‘থিম’ পুজো বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। পুজো মানে এখন বাজেট পারমিট করে না এমন জিনিস বাজেটের মধ্যে দেখারও আনন্দ। পাশের ফ্ল্যাটের ঘোষরা যখন বলে, ‘বাড়ি ফাঁকা, আপনাদের ভরসায় ক’টা দিন ঘুরে আসি’ সামনে দেঁতো হাসি দিলেও আপনার মনটা হু হু করে ওঠে। কিছু পরে রান্নাঘরের বাসন দুমদাম পড়ে, বানান ভুলে টুবলু ঠাস ঠাস চড় খায়। কিন্তু থিম পুজো মধ্যবিত্তের ফ্রাস্টেশনের চড়তে থাকা শেয়ার এক ধাক্কায় নামিয়ে এনেছে প্রায় রিশেসন মার্কেটে।
ঈশ্বরের আপন দেশ ঘোরার সাধ হলে চলে যান এন্টালি উদয়ন সঙ্ঘে। থিম কেরালা। কেরালার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, নৃত্য, ওনাম উৎসব, বাইচ প্রতিযোগিতার দেখা মিলবে। বেহালা ক্লাবের মণ্ডপে গেলে পৌঁছে যাবেন এক লোকায়ত সহজিয়ার দেশে। ওড়িশার সাউরা উপজাতির রোজনামচায় সাজবে মণ্ডপ।
হাজরা রোডের উদয়ন সঙ্ঘের থিম ‘ছাতার সাজে মুখোশের মাঝে’। সৃষ্টির আদি থেকে ঘটে যাওয়া অগুণতি ঘটনার সাক্ষী ছত্ররূপী আকাশ। নানা রং ও আকারের ছাতায় সাজবে মণ্ডপ। থাকবে পুরুলিয়া থেকে আনা অজস্র মুখোশ। কারণ পুরাণে রূপ বদলের ক্ষেত্রে সব সময় মুখোশের প্রয়োজন পড়েছে। যেমন উমা একাধারে দশভূজা, কালী তথা চণ্ডী। প্রতি বার বদলে যায় তাঁর মুখোশ।
গড়িয়ার রামকৃষ্ণনগর সর্বজনীন শারদোৎসব কমিটির মণ্ডপে থাকবে টেরাকোটার কাজ। টেরাকোটার মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে বেহালার সম্মিলিত জয়রামপুরের মণ্ডপ। প্রতিমা সাবেক। সকলে মিলে আনন্দই এখানে মূল থিম। হরিদেবপুরের অজেয় সংহতি’র এ বার ৫৪তম বছর। মণ্ডপে থাকবে অন্ধকার থেকে আলো ও আশার পথে যাত্রার বাণী। মণ্ডপ সাজবে অসংখ্য প্রদীপে। ধ্যানমগ্ন দুর্গামূর্তির হাতে শুধু ত্রিশূল।
খিদিরপুর পল্লি শারদীয়ার থিম ‘হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’। উদ্যোক্তারা জানালেন, প্রতিটি মানুষের অবচেতনে হারিয়ে যাওয়ার বাসনা থাকে, তাকেই একটু উস্কে দিতে সাজছে মণ্ডপ। আয়না, আলোর ব্যবহারে মণ্ডপে সৃষ্টি হবে মায়াবী পরিবেশ। খিদিরপুরেরই ভেনাস ক্লাবের ভাবনা ‘অকালবোধন’। বরাহনগর কামারপাড়া সর্বজনীনের পুজোর এ বার ৮৮তম বছর। পুজো হবে সাবেক। ডি এন ঘোষ রোডের মণ্ডপ হবে বেজিংয়ের ‘টেম্পল অফ হেভেন’-এর অনুকরণে। সজ্জা হবে ভারতীয় রীতিতে।
এ বার আর গিন্নিকে ইএমআই এর গল্প শোনাতে হবে না। বরং সাধাসাধি চলবে আগে আইফেল টাওয়ার না হাওয়া মহল। গিন্নির সাজতে সময় বেশি লাগলেও কোনও তাড়া নেই। ট্রেন ফেল হওয়ার কোনও চান্স নেই।