যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগত ছাত্রের মৃত্যুর তদন্তে হস্টেলে ‘বহিষ্কারযোগ্য’ ২৪ জন প্রাক্তনীকে চিহ্নিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। ওই প্রাক্তনীরা দীর্ঘদিন হস্টেল দখল করে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক সমীক্ষার রিপোর্টের ছবিতে আবার উঠে আসছে অন্য একটি দিক। রাজ্যে যাদবপুর, কলকাতা বা বর্ধমানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হস্টেলে তুমুল চাহিদার কথা শোনা গেলেও সব সময়ে আসনগুলির সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। আপাত ভাবে এই হিসেবের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব পরিস্থিতি মিলছে না বলে মনে করেন শিক্ষক, অধ্যাপকেরা অনেকেই। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ‘প্রাক্তনী দাদারা’ হস্টেলের আসন দখল করে থাকার ফলেই অনেকে জায়গা পান না বলে অভিযোগও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমীক্ষায় কাগজেকলমে আবাসিক হিসেবে প্রাক্তনীদের নাম উঠে আসছে না-বলেও হস্টেল পরিস্থিতির আসল ছবিটা উঠে আসছে না-বলে কোনও কোনও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভিমত।
হস্টেলে জায়গা পেতে অনেক পড়ুয়াকে কেন অপেক্ষা করতে হয় তার একটি অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন রজত রায়। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের তো বিভিন্ন বিভাগের জন্য আলাদা হস্টেল নেই। বিভিন্ন শিক্ষাক্রমের পড়ুয়া, এমফিলের গবেষক আলাদা সময়ে পরীক্ষা চুকিয়ে হস্টেল ছাড়েন। তাই নবাগতদের হস্টেলের সুযোগও আলাদা সময়ে আসে।”
যাদবপুরেরই প্রবীণ অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলছেন, “যাদবপুরে হস্টেলে আসন সদ্ব্যবহার হচ্ছে না, এ কথা বলা হলেও হস্টেল ফাঁকা পড়ে থাকছে না। পরিসংখ্যান যা-ই বলুক, যাদবপুরে একাধিক নতুন হস্টেল দরকার। ২০১৯-২০ সালের রিপোর্টে যদি বলা হয়, যাদবপুরে হস্টেলে ১৩০০-১৩৫০ ছাত্র এবং ৫০০র বেশি ছাত্রীর থাকার জায়গা আছে এখন হস্টেলের চাহিদা অন্তত ৩০০০-৩৫০০ আবাসিকের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আগেই বাড়তি হস্টেলের বন্দোবস্ত করা উচিত ছিল।” ওমপ্রকাশের কথায়, “হস্টেলে সবার ঠাঁই মেলে না-বলেই তা রাজনৈতিক সংগঠনগুলির ক্ষমতা ফলানোর এলাকা! ছাত্রটির মর্মান্তিক মৃত্যুর পিছনেও হস্টেল পরিস্থিতির যোগ রয়েছে।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা পার্থিব বসুও বলছেন, “যাদবপুরের ঘটনার পরেই হস্টেলে অবৈধ দখলদারদের সরানোর জন্য উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সদস্যদের স্মারকলিপি দিয়েছি।”
উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত ২০১৯-২০ সালের সমীক্ষাটিতেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হস্টেল পরিস্থিতির খুঁটিনাটি উঠে এসেছে। ২০২০-২১ এর সমীক্ষাটিতে হস্টেল পরিস্থিতির ছবিটা স্পষ্ট নয়। প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ সালের রিপোর্টটিতে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হস্টেলে আসন সদ্ব্যবহারের হার ৭৯.৯৬%। যাদবপুর, কলকাতা ছাড়াও বর্ধমান ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকাঠামো অনুযায়ী পড়ুয়া হস্টেলে থাকার সুযোগ পান না। বাস্তবে হস্টেল না-পেয়ে যাদবপুরে সুযোগ পেয়েও না-পড়ার উদাহরণও যথেষ্ট। এর পিছনে হস্টেল দিতে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতার দিকেও কোনও কোনও শিক্ষক বা ছাত্রনেতা আঙুল তুলছেন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অংশুমান করের কথায়, “এটা ঠিকই পড়াশোনার পরিবেশে খামতি বা মেস কমিটির খাবারের মানের জন্যও অনেকে হস্টেলে থাকতে চান না। এর ফলেও হস্টেল ফাঁকা থাকতেই পারে।" খাতায়কলমে এ সব অভিযোগ র্যাগিং বলা যায় না! তবে বর্ধমানের সুপার কামনাশিস সেন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের সতর্ক করেছেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও সম্প্রতি একটি হস্টেল বাড়ি বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত হওয়ায় ছাত্রদের থাকার জায়গা নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।