Ladies Compartments

অন্ধকারে ডুবে মহিলা কামরা, ‘জানেই না’ রেল

ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার ভয়ে অন্ধকার কামরাতেই উঠে পড়তে হল। ভিতরে কেউ ঘাপটি মেরে বসে থাকলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সঙ্গী পুরুষ চিত্র-সাংবাদিককে নিয়েই কামরায় ওঠা হল।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০৯:০০
Share:

ঘুটঘুটে: হাওড়ামুখী লোকাল ট্রেনের ফাঁকা মহিলা কামরায় জ্বলছে না আলো। বুধবার রাতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বর্ধমান কর্ড লাইনের বারুইপাড়া স্টেশন। বুধবার, রাত ১১টা ৬ মিনিট। বর্ধমান থেকে হাওড়ামুখী লোকাল ট্রেন ঢুকল প্ল্যাটফর্মে। মহিলা কামরার দিকে এগোতেই গা শিউরে উঠল। ঘুটঘুটে অন্ধকার! শেষ দিকের মহিলা কামরা-সহ পরপর একাধিক কামরা ডুবে ঘন অন্ধকারে। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার ভয়ে অন্ধকার কামরাতেই উঠে পড়তে হল। ভিতরে কেউ ঘাপটি মেরে বসে থাকলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সঙ্গী পুরুষ চিত্র-সাংবাদিককে নিয়েই কামরায় ওঠা হল।

Advertisement

কামরার ভিতরে আলোর একমাত্র উৎস ডিজিটাল বোর্ডের টিমটিমে লাল আলো। তাতে অবশ্য পাশের ব্যক্তিকেও দেখতে পাওয়া যায় না। এমনকি নিজের পা কোথায় পড়ছে, সেটাও বোঝা অসম্ভব। ট্রেন ছুটতে শুরু করেছে পরবর্তী গন্তব্য বেগমপুরের দিকে। অন্ধকার কামরায় আতঙ্ক নিয়েই বেগমপুর, জনাই রোড পেরোনো গেল। গোবরা স্টেশনে ট্রেন থামতেই আলোর সন্ধানে দৌড়ে যেতে হল পাশের কামরায়।

সেই কামরাও ঘুটঘুটে অন্ধকার। কামরায় উঠে চোখে পড়ল, কোণে দু’টি আলোর উৎস। আরও একটু ভাল করে দেখে বোঝা গেল, মোবাইলে চোখ রেখে বসে রয়েছেন দু’জন যুবক। কামরায় তৃতীয় এবং চতুর্থ যাত্রী বলতে, এই প্রতিবেদক এবং তাঁর সহকর্মী পুরুষ চিত্র-সাংবাদিক। আচমকা মনে পড়ে গেল, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনা। দক্ষিণ দিল্লির মুনিরকার সেই রাতের কথা মনে পড়তেই আতঙ্ক যেন চেপে ধরল। প্যারা-মেডিক্যাল ছাত্রী ও তাঁর বন্ধুটির সঙ্গেই বাসে যাত্রা করছিল ছ’জন। বাসে ঘটে যাওয়া পরবর্তী সেই ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ তথা বিশ্ব।

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবে তাই গোবরা স্টেশন থেকে সাধারণ কামরায় উঠে দুই যুবককে দেখে আতঙ্ক চেপে বসছিল। নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করা হল, পরের স্টেশনেই কামরা বদলাতে হবে। অন্ধকার, ফাঁকা মহিলা কামরার থেকেও অনেক বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল সাধারণ কামরায় দুই অপরিচিতের উপস্থিতি। ট্রেন ডানকুনি ঢুকতেই সোজা দৌড় আলোকিত কামরার সন্ধানে। অবশেষে পাওয়া গেল তেমন কামরা। হাওড়ায় যখন ট্রেন পৌঁছল তখন রাত ১২টা ৮ মিনিট। ট্রেন থেকে নামলেন খুব বেশি হলে জনা দশেক যাত্রী!

রবি এবং সোমবারের লোকাল ট্রেনে মহিলা যাত্রী নিগ্রহের পরে রাতের ট্রেন সফর কেমন, সেটাই দেখতে যাত্রা শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার। ওই রাতে সোনারপুরগামী লোকালের রক্ষীবিহীন মহিলা কামরায় তিন সওয়ারির সঙ্গী হয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। মাঝপথে থমকে থাকা ট্রেনে অন্ধকার ফুঁড়ে কেউ উঠে এলে কী করা যাবে, সেই আতঙ্কই ছিল মূলত। কিন্তু এ দিন হাওড়া-বারুইপাড়া এবং তার ফিরতি যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা সেই আতঙ্ককেও ছাপিয়ে গেল।

প্রশ্ন উঠেছে, যাত্রী থাকুন বা না-থাকুন, ট্রেনের কামরায় আলো কেন নেভানো? দূরপাল্লার ট্রেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে গেট বন্ধ থাকে এবং ট্রেনের কামরায় টিকিট পরীক্ষক ছাড়াও থাকেন নিরাপত্তারক্ষী এবং রেলকর্মীরা। ফলে রাতে আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু লোকাল ট্রেনে তো প্রতি স্টেশন থেকেই যাত্রী উঠবেন। তবু কেন নেভানো ছিল আলো?

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তীর বক্তব্য, এ রকম তো কোনও নিয়ম নেই। যাত্রী থাকা বা না থাকার সঙ্গে কামরার আলো জ্বলার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘‘কেন বুধবার রাতের ওই ট্রেনের কামরাগুলি অন্ধকার ছিল, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। এটা একেবারেই অনভিপ্রেত ঘটনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন