Higher Secondary Examination

সেরিব্রাল পলসিকে জয় করে উচ্চ মাধ্যমিকে সফল অরিজিৎ

জন্মগত সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ওই ছাত্র এ বার বালি শিক্ষা নিকেতন বালক বিভাগ স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। ৫০০-র মধ্যে ৪৩৩ নম্বর পেয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ০৮:১১
Share:

অরিজিৎ বসু।

নিজে নিজে উঠে দাঁড়ানোর বা হাঁটাচলা করার ক্ষমতা নেই তাঁর। তবে ভরসার হুইলচেয়ারে বসেই জীবনের লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ‘নিজের পায়ে’ দাঁড়াতে চান বালির অরিজিৎ বসু।

Advertisement

জন্মগত সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ওই ছাত্র এ বার বালি শিক্ষা নিকেতন বালক বিভাগ স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। ৫০০-র মধ্যে ৪৩৩ নম্বর পেয়েছেন তিনি। অরিজিতের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ওর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে সহপাঠীরা। সকলেই বলছেন, ‘‘অরিজিৎ আমাদের গর্ব।’’ তবে একটু হলেও মন খারাপ সত্যজিৎ রায়-শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়-রাস্কিন বন্ডের ভক্ত অরিজিতের। বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম ৯০ শতাংশ নম্বর পাব। কিন্তু তিন শতাংশ কম হল।’’

২০১৬ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে জামাকাপড় বিক্রি করে, ছেলের লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন মা মিলি বসু। বালির ফকিরচন্দ্র পাঠক লেনের ছোট্ট ফ্ল্যাটে বসে বৃহস্পতিবার তিনি বললেন, ‘‘ছেলে তো মুখ ফুটে কিছু বলে না। রেজাল্ট বেরোনোর পরে একটু মাংস রেঁধে খাইয়েছি। এখন চিন্তা, কলেজের খরচ জোগাড় করা।’’ প্রতিদিন ফিজ়িয়োথেরাপি চলে বছর উনিশের অরিজিতের। তার পরেও যে কোনও দিন নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না, সে কথা বিলক্ষণ জানেন এই তরুণ। তবু দমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। বরং, ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ে আগামী দিনে সেই ভাষায় গবেষণা করার স্বপ্ন দেখেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজিতে অরিজিতের প্রাপ্ত নম্বর ৯৪। তবে ইংরেজি গল্পের বই পড়ার ইচ্ছা থাকলেও তা কেনার সামর্থ্য নেই তাঁর। অরিজিৎ বলেন, ‘‘স্কুলের গ্রন্থাগার থেকে এনে পড়তাম। কলেজেও মনে হয় পাব।’’

Advertisement

উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলা ও ইতিহাসের জন্য এক জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেতেন অরিজিৎ। তবে ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন নিজেই পড়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুল ছুটির পরে স্যর-ম্যাডামেরা আলাদা করে আমায় পড়া বুঝিয়ে দিতেন। সেগুলিই বাড়িতে এসে পড়তাম।’’ আজ, শুক্রবার স্কুলে মার্কশিট আনতে যাবেন অরিজিৎ। স্কুলের পড়ুয়া হিসাবে সেই হবে স্কুলে শেষ যাওয়া। তাই বড্ড মন খারাপ তাঁর। গলা বুজে এলেও, চোখের জল চেপে রেখে বললেন, ‘‘আমার জন্য প্রতি বছর একতলায় ক্লাসঘর নিয়ে আসা হত। স্কুল যাওয়ার টোটোও ঠিক করে দিয়েছিলেন স্যরেরা। প্রয়োজনে বন্ধুরা কোলে করে স্কুলের দোতলায় নিয়ে যেত।’’

অরিজিৎকে ছাড়তে তাঁদেরও কষ্ট হবে— এ কথা জানিয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সুব্রত গোস্বামী বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে তো হবেই। তবে স্কুলের আগামী দিনের পড়ুয়াদের কাছে ও আদর্শ হয়ে থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন