নিগ্রহের মামলা না তোলায় তাণ্ডব এলাকায়

যৌন নিগ্রহের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল নিগৃহীতা কিশোরীর পরিবারকে। তাতে কাজ না হওয়ায় এ বার দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২১
Share:

ঘটনাস্থল: গলির মধ্যে পড়ে থাকা ভাঙা মোটরবাইক সরাচ্ছে পুলিশ। সোমবার, মনোহরপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

যৌন নিগ্রহের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল নিগৃহীতা কিশোরীর পরিবারকে। তাতে কাজ না হওয়ায় এ বার দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার গভীর রাতে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় টালিগঞ্জ থানার মনোহরপুকুর এলাকা।
অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা প্রথমে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেয়। তার পরে তাণ্ডব চালায়। এই ঘটনায় ওই পাড়ার সাত জন বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সোমবারও উত্তেজনা থাকায় সেখানে দিনভর পুলিশের টহলদারি চলে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর। অভিযোগ, ওই এলাকায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে শঙ্কর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই কিশোরীর মা ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাঁকে শঙ্কর ও তার ছেলে সোনু মারধর করে বলে অভিযোগ। পরে টালিগঞ্জ থানায় যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের হলে গ্রেফতার হয় শঙ্কর ও সোনু দু’জনেই। কিন্তু মাস দু’য়েকের মধ্যেই তারা জামিন পেয়ে যায়।

ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, জামিন পেয়েই মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া শুরু করে সোনু ও শঙ্কর। অভিযোগ, গত জানুয়ারিতে ওই ছাত্রীর মাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও হয়। সেই সময়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়। কিন্তু তার পর থেকে ফেরার হয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ফের মাসখানেক আগে এলাকায় ফিরে আসে তারা।

Advertisement

এ দিন ওই ছাত্রী বলে, ‘‘ফের যে ওরা বাড়ি এসে হুমকি দেবে, ভাবতে পারিনি। রবিবার সন্ধেবেলা আমি টিভি দেখছিলাম। এমন সময়ে সোনু ও শঙ্কর এসে বলল, মামলা তুলে না নিলে খুন করে দেবে।’’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাতে সোনু ও শঙ্কর সদলবল এসে পাড়ায় তাণ্ডব চালায়। সন্তোষকুমার ঝা নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ওরা ছুরি নিয়ে আমাদের উপরে চড়াও হয়। পিন্টু বাগ নামে এক জন প্রতিবাদ করায় তাঁর পেটে ছুরি মারে। পিন্টু হাসপাতালে ভর্তি। পাড়ার আরও দু’জন জখম হয়ে
হাসপাতালে রয়েছে।’’

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরের সামনে রক্তের ছোপ। একটি মোটরবাইক ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে গলির মুখে। কয়েক জন যুবকের মুখে, মাথায় ব্যান্ডেজ। ওই কিশোরীর বাবা কাঠের মিস্ত্রি। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু থানাতেই নয়, মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, লালবাজার— সর্বত্রই আমার মেয়ের নিরাপত্তা চেয়ে ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে চিঠি দিয়েছি। পুলিশের সামনেই তো সোনু আর শঙ্কর ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’

পুলিশের দাবি, শুধু ওই যৌন নিগ্রহের মামলা নয়, এলাকার দুই দলের মধ্যে ক্লাব দখল ও অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়েও সমস্যা আছে। ডিসি (সাউথ) মিরাজ খালিদ বলেন, ‘‘মনোহরপুকুরে দুই দলের মারামারি হয়েছে। অভিযুক্ত সোনু ও শঙ্কর বাদে আরও কয়েক জনকে খোঁজা হচ্ছে। দ্রুতই তারা ধরা পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন