তৃতীয় লিঙ্গ, তাই কি ক্লাবে ঢুকতে বাধা

নিমন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও রবিবার শহরের একটি ক্লাবে ঢুকতে পারেননি শ্রেয়া কর্মকার, রাত্রীশ সাহা ও উজি নামে তিন রূপান্তরকামী। ঘটনাটি ঘটেছে শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার একটি নাইটক্লাবে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ১৪:০১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

দেশের শীর্ষ আদালত এঁদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এঁরা অন্য নাগরিকদের সমানাধিকার পাবেন। কিন্তু এর পরেও কলকাতা শহরে শুধুমাত্র ‘রূপান্তরকামী’ হওয়ার জন্য একটি নাইটক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠল।

Advertisement

অভিযোগ, নিমন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও রবিবার শহরের একটি ক্লাবে ঢুকতে পারেননি শ্রেয়া কর্মকার, রাত্রীশ সাহা ও উজি নামে তিন রূপান্তরকামী। ঘটনাটি ঘটেছে শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার একটি নাইটক্লাবে। ক্লাবের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করে অপারেশনস ম্যানেজার ইমরান খান বলেন, ‘‘ওঁরা যখন এসেছিলেন তখন ‘গেস্ট লিস্ট ক্লোজড’ হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ নিমন্ত্রিতদের ঢোকার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল। তাই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পার্টি যিনি দিয়েছিলেন, তাঁকেও নিমন্ত্রিতেরা ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। তাই মনে হয়েছে আমন্ত্রণকারী ব্যক্তিই ওঁদের ওই পার্টিতে ঢুকতে দিতে চাইছিলেন না।’’

শ্রেয়ার কথায়, রবিবার ববি দাস নামে তাঁর এক বন্ধু ওই ক্লাবে একটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন। সেখানে তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন ববি। কিন্তু তিনি যখন তাঁর দুই বন্ধু রাত্রীশ ও উজিকে নিয়ে ক্লাবে পৌঁছন, তাঁদের বলা হয় সেখানে ‘রূপান্তরকামী’দের প্রবেশ নিষেধ। নিমন্ত্রিত থাকার পরেও ক্লাবে ঢুকতে না পারায় শ্রেয়া ফোন করেন ববিকে। কিন্তু ববির ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি শ্রেয়া।

Advertisement

এর পর পুরো বিষয়টি জানিয়ে শ্রেয়া এক আইনজীবী বন্ধুকে ফোন করলে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন। অভিযোগ, থানায় যাওয়ার পরে কর্তব্যরত অফিসার জানিয়ে দেন, ওই ক্লাবে শাড়ি পরে গেলে ঢুকতে দেওয়া হয় না। যদিও ক্লাব কর্তৃপক্ষ শাড়ি পরার ক্ষেত্রে সে দিন নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে জানাননি। শহরের অন্য কয়েকটি ক্লাবেও কথা বলে জানা গিয়েছে, শাড়ি পরে ঢোকার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।

শ্রেয়া জানান, সেই রাতে রাত্রিশ ও উজি শাড়ি পরে থাকলেও তিনি ‘লং ড্রেস’ পরেছিলেন। তা হলে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হল না কেন? সে প্রশ্নেরও কোনও উত্তর ক্লাব কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি।

রেস্তোরাঁ বা ক্লাবে রূপান্তরকামী হওয়ার কারণে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও ভবানীপুরের একটি ক্লাবে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন রাজ্যের ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের’ সদস্য রঞ্জিতা সিংহ।

মঙ্গলবার শ্রেয়া বিষয়টি রঞ্জিতাকে জানান। রঞ্জিতা বলেন, ‘‘আমি বোর্ডের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকতে পারিনি। বোর্ডকে জানিয়েও কোনও প্রতিকার হয়নি।’’

শেক্সপিয়র সরণি থানার সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, ক্লাবের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা এক্তিয়ারের বাইরে। ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠীকে ফোন করা হলে তিনি পুরো বিষয়টি শোনার পরে ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন