সমাবেশ উপলক্ষে ময়দানে বসছে জঞ্জালের বাক্স। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
শাসক দলের ব্রিগেড সমাবেশ ঘিরে যানজটের আশঙ্কায় খোদ নবান্নের শীর্ষ মহল। তাই আজ, শনিবার সমাবেশে যোগ দিতে আসা ভিন্ রাজ্যের তিন নেতাকে বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে চাপিয়ে নিয়ে আসা হতে পারে রেস কোর্সে। সেখান থেকে তাঁরা পৌঁছবেন ব্রিগেডের মাঠে। যানজটের আশঙ্কা করেই এই বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা হয়েছে।
পুলিশ জানাচ্ছে, সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার বিকেলেই শহরে পৌঁছেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, অখিলেশ যাদব-সহ একাধিক নেতা। আজ, শনিবার সকালে আসছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং তেজস্বী যাদব। পুলিশ সূত্রের দাবি, রেস কোর্সে হেলিকপ্টার নামার জন্য সেনার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মিলেছে।
লালবাজার বলছে, প্রথমে ভাবা হয়েছিল, বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে ই এম বাইপাস, পরমা উড়ালপুল হয়ে অতিথিদের সমাবেশের মাঠে আনা হবে। কিন্তু ভিড়ের যা আগাম আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে, তাতে যানজট অনিবার্য। ফলে ই এম বাইপাস এবং মা উড়ালপুল ধরে এলেও এসএসকেএম হাসপাতালের মুখে যানজটে আটকে পড়তে পারেন ভিআইপি-রা। তাতে নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। সেই কারণেই বিকল্প পথ বাছতে হয়েছে। অতিথিরা হেলিকপ্টারে এলে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া অনেক সহজ হবে।
‘হেভিওয়েট’ নেতাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অতি সতর্ক পুলিশ। সমাবেশ চলাকালীন এ বারই প্রথম ব্রিগেড সংলগ্ন অন্তত পাঁচটি বহুতলের মাথায় ‘স্নাইপার’ রাইফেল হাতে মোতায়েন থাকবেন কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডোরা। চলবে দূরবীন দিয়ে নজরদারি। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘একাধিক জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাওয়া ভিআইপি থাকলে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।’’ পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরা জেড প্লাস নিরাপত্তা পাবেন। এর বাইরে যাঁদের জেড প্লাস নিরাপত্তা ইতিমধ্যেই রয়েছে, তাঁরাও সেই নিরাপত্তা ব্যূহে থাকবেন।
ভিন্ রাজ্যের নেতারা আলিপুর ও ধর্মতলার দু’টি পাঁচতারা হোটেলে উঠেছেন। সেখানেও কম্যান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে। ব্রিগেডের মাঠে ঢোকার জন্য আটটি প্রবেশপথ থাকছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি-দের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ব্রিগেড চত্বরকে এক ডজন জোনে বিভক্ত করে তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে এক জন করে ডেপুটি কমিশনারের হাতে। মাঠের ছ’টি কোণে থাকা ছ’টি নজর-মিনার থেকেও চার দিকে লক্ষ রাখা হবে। আজ সকাল থেকেই কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা রাস্তায় থাকবেন। সেই সঙ্গেই অতিরিক্ত দশ হাজার পুলিশকর্মীকে নামানো হচ্ছে শহর সামলাতে। ব্রিগেডের মূল মঞ্চ-সহ পাঁচটি মঞ্চের দায়িত্ব রয়েছে পুলিশের হাতে। খোদ পুলিশ কমিশনার থাকবেন মূল সভাস্থলে।
এ ছাড়া, সারা শহরে ২২০টি পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। সঙ্গে থাকছে কুইক রেসপন্স টিম, ডিএমজি এবং অ্যাম্বুল্যান্স। তিন জায়গায় ‘রিজার্ভ’ রাখা হচ্ছে পুলিশবাহিনীকে। যাতে প্রয়োজনে তাদের যে কোনও জায়গায় পাঠানো যায়। মেট্রো স্টেশনেও ভিড়ের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ শহরের ১১টি জায়গা থেকে নেতা-সমর্থকদের নিয়ে বড় মিছিল ব্রিগেডের মাঠের উদ্দেশে রওনা দেবে। এ ছাড়াও, নানা জায়গা থেকে ছোটখাটো মিছিল বেরোবে। থাকবে বাইক-মিছিলও। সেই সব সামাল দিতেও বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে। যে সব জায়গায় ইতিমধ্যেই সমর্থকেরা এসে পৌঁছেছেন, সেখানেও নিরাপত্তা ও নজরদারি রয়েছে। এ দিন দুপুর থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে শুরু করেছে গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক দল। সক্রিয় করা হয়েছে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কর্মীদেরও।