‘তোলা-দাবি’ নেত্রীর, আসরে মমতার দফতর

গত ১৫ জুনের ওই ঘটনায় অভিযোগ জানাতে নিউ টাউন থানায় যান দম্পতি। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর দাবি, থানা জেনারেল ডায়েরি করে ছেড়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার সুবিচারের আশায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান অরবিন্দ ও রীতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০৩:১৫
Share:

পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের লিখিত নির্দেশ।

রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের এক নেত্রীর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠায় নিউ টাউন থানাকে এফআইআর করার নির্দেশ দিল মুখ্যমন্ত্রীর দফতর।

Advertisement

অভিযোগ, ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকার জন্য অরবিন্দ নন্দী এবং রীতা নন্দীর কাছ থেকে কাজল দাস নামে ওই নেত্রী তিন দিনের মধ্যে সাত লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন! রাজি না হওয়ায় দলবল নিয়ে হাতিয়াড়ার হেলা বটতলার ওই ফ্ল্যাটে কাজল শুধু চড়াও হননি, বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে সন্তানদের ভয় পর্যন্ত দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ।

গত ১৫ জুনের ওই ঘটনায় অভিযোগ জানাতে নিউ টাউন থানায় যান দম্পতি। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর দাবি, থানা জেনারেল ডায়েরি করে ছেড়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার সুবিচারের আশায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান অরবিন্দ ও রীতা। সব শুনে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) দিব্যজ্যোতি দাস তৎক্ষণাৎ নিউ টাউন থানাকে ফোন করে এফআইআর রুজুর নির্দেশ দেন। সেই মতো লিখিত নির্দেশও পাঠান। যদিও বিধাননগর সিটি পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এ ধরনের কোনও নির্দেশের কথা তাঁর জানা নেই। সোমবার রীতা বলেন, ‘‘নিউ টাউন থানা যদি প্রথমেই এফআইআর নিত, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত ছুটতে হত না!’’

Advertisement

১১০০ বর্গফুটের যে ফ্ল্যাট ঘিরে এই গণ্ডগোল, তার মালিক দীপঙ্কর ঘোষ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে অরবিন্দ ও রীতার ১১ মাসের একটি চুক্তি হয়। সোমবার রীতা বলেন, ‘‘২৫ লক্ষ টাকায় ওই ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলেছিলেন দীপঙ্করবাবু। চুক্তি অনুযায়ী ঠিক হয়, যত দিন না ওই টাকা দিচ্ছি, তত দিন মাসিক আট হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হবে।’’ রীতার স্বামী অরবিন্দের দাবি, ফ্ল্যাট কেনার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। যার প্রেক্ষিতে মিউটেশন, সিসি-সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলে ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার জন্য দীপঙ্কর চাপ দিতে থাকেন। অরবিন্দের কথায়, ‘‘ওই ফ্ল্যাট যে হেতু কেনার কথা, তাই রক্ষণাবেক্ষণে ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছিলাম। দীপঙ্কর বলেন, সেই টাকা তো দেবেনই না, উল্টে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’ দীপঙ্করের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।

ফ্ল্যাটের মালিকের সঙ্গে এই টানাপড়েনের মধ্যেই গত ২৯ মে কাজলের অনুগামীরা ওই দম্পতির বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। রীতার দাবি, কাজল ওই দিন দুপুরে নিজের বাড়িতে তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে তিন দিনের মধ্যে সাত লক্ষ টাকা তোলা চান।

এফআইআরের প্রতিলিপি।

অরবিন্দ জানান, কথা না বাড়িয়ে তাঁরা সেখান থেকে চলে আসেন। কিন্তু ১৫ জুন তাঁদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ওই দিন সকালে ১১ বছরের মেয়ে অনিন্দিতা এবং সাত বছরের ছেলে অংশুমানকে বাড়িতে রেখে বাড়ির কাজে বাইরে গিয়েছিলেন স্বামী-স্ত্রী। রীতা বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণ পরে আমার স্বামীর মোবাইলে ফোন করে মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘বাবাই আঙ্কল-আন্টিরা আবার অ্যাটাক করেছে। বলছে, গলা ধাক্কা দিয়ে তোদের বার করে দেব!’’’ এরই মধ্যে রীতার মোবাইলে ফোন করেন কাজল। রীতার দাবি, ফোনে কাজল বলেন, ‘‘এখন সাত লক্ষ নয়, সাতাশ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তোকে চিরে মারব।’’ রীতার দাবি, গত ১৫ জুন পরিস্থিতি এমনই হয় যে, আতঙ্কে সাত বছরের ছেলে ব্যালকনিতে চেয়ার রেখে নীচে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যা করতে গিয়ে চেয়ার থেকে পড়ে তার বুকের কাছে ছড়ে যায়।

তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে কাজল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এলাকায় আমিই তোলাবাজি বন্ধ করেছি। ওই মহিলা আরও কত ফ্ল্যাটের মালিকের সঙ্গে এই কাণ্ড করেছেন, খোঁজ নিন। আমি ওঁর ফ্ল্যাটে কথা বলতে গিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু শিশুদের কোনও রকম ভয় দেখানো হয়নি। পুজো কমিটি, বাজার কমিটির সদস্যেরা তো সঙ্গে ছিল। ওঁদের জিজ্ঞাসা করুন না।’’

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement