বেলেঘাটার মহিলা হস্টেলে ভাঙচুর, অভিযুক্ত শাসকদল

একতলায় রাজ্য সরকার পরিচালিত একটি প্রাথমিক স্কুল চলে। সেই স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের সঙ্গে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। তারই প্রতিবাদে পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা এ দিন সেখানে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বলে দাবি করেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৫
Share:

হামলার পরে আতঙ্কে হস্টেল ছাড়ার তোড়জোড় আবাসিকদের। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দিনেদুপুরে দুষ্কৃতীদের চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হস্টেলে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের ওই তিনতলা বাড়িটির দখল নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার চড়াও হয়েছিল তৃণমূল সমর্থক কিছু দুষ্কৃতী। অভিযোগ, তারা ক্লাসরুম ও তিনতলায় মেয়েদের হস্টেলের ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে। সেই সঙ্গে হস্টেল খালি করে দেওয়ারও হুমকি দেয় তারা। অন্য দিকে, এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিই জোর করে ওই বাড়িটি দখল করে রেখেছে। ওই বাড়ির

Advertisement

একতলায় রাজ্য সরকার পরিচালিত একটি প্রাথমিক স্কুল চলে। সেই স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের সঙ্গে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। তারই প্রতিবাদে পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা এ দিন সেখানে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বলে দাবি করেন তাঁরা।

বাইপাসের বেলেঘাটা মোড়ে তিনতলা বাড়িটিতে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ক্রেশ, নার্সারি স্কুল, বিভিন্ন রকমের বৃত্তিমূলক কোর্স ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলে। মেয়েদের একটি হস্টেলও আছে তাদের। সল্টলেকের সাই-তে যে মেয়েরা খেলাধুলো শেখেন, তাঁদের অনেকেই ওই হস্টেলের আবাসিক। অভিযোগ, এ দিন প্রথমে হামলা হয় মেয়েদের হস্টেলে। সেখানকার আবাসিক, খেলোয়াড় রোকেয়া খাতুনের অভিযোগ, ‘‘কিছু ছেলে আমাদের ঘরে ঢুকে হুমকি দিয়ে বলে যায়, দশ মিনিটের মধ্যে হস্টেল খালি করে দিতে হবে। জিনিসপত্রও লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়। মদের খালি বোতল ঘরের সামনে ভেঙে ফেলা হয়।’’

Advertisement

এই ঘটনায় আতঙ্কে ভুগছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। সংস্থার প্রেসিডেন্ট বাণী ভট্টশালী বলেন, ‘‘ওরা আমাদের অফিসঘর থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। বেলেঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি আমরা।’’ ভাইস প্রেসিডেন্ট কৃষ্ণা ভুঁইয়ার দাবি, বাড়িটির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্ত বৈধ কাগজপত্রও তাঁদের রয়েছে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলায় মেয়েদের হস্টেলের ঘরটি লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। বারান্দায়, ডাস্টবিনে পড়ে রয়েছে মদের ভাঙা বোতল। মেয়েরা আতঙ্কে হস্টেল ছেড়ে দেওয়ার জন্য জিনিসপত্রও ব্যাগে ভরতে শুরু করেছেন। তাঁদেরই এক জন বনশ্রী রায় বললেন, ‘‘শুধু ভিন্ জেলাই নয়, ভিন্ রাজ্যের মেয়েরাও এখানে থাকেন। আমরা কোথায় যাব?’’ তাঁদের অভিযোগ, পাড়ার তৃণমূল সমর্থক দুষ্কৃতীরা তৃণমূল কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাসের মদতেই এই কাণ্ড করেছে। যদিও কাউন্সিলরের দাবি, ‘‘পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নই। রাজ্য সরকার পরিচালিত একটি প্রাথমিক স্কুল ওখানে চলে। সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরাই আমাদের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে বারবার থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছি শুধু।’’

এ দিন খবর পেয়ে ওই স্কুলে যান কলকাতা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না। কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি আমাদের ক্লাসঘরের সংখ্যা ক্রমেই কমিয়ে দিচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ওদের কাছে মালিকানার বৈধ কাগজপত্র থাকলে আমরা ওদের সঙ্গে পাকাপাকি চুক্তিও করতে পারি।’’ অন্য দিকে, বেলেঘাটা থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গোলমালের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। পরে অভিযোগ দায়ের করেছে ওই সংস্থা। সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন