এই অনুষ্ঠানেই মাইক বাজানোর অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব চিত্র
মাইক বাজানোর জন্য ‘অজুহাতে’রও দরকার নেই দমদমে!
পরীক্ষার মরসুমে রাত ১০টার সময়েও বাতিস্তম্ভে ঝোলানো চোঙার সাহায্যে চার-ছয় পেটানোর ব্যাপারে ‘অমায়িক’ দক্ষিণ দমদমের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে, ফাইনালের রাতে সেই প্রতিযোগিতার মঞ্চে হাজির ছিলেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ও। যিনি আবার শিক্ষকও। অথচ তখনও পুরোদমেই বাজছিল মাইক।
ক্রীড়াঙ্গন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বসবাসকারী আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘সাংসদ তো অধ্যাপকও। পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে তিনি অন্তত বারণ করতে পারতেন!’’ এ বিষয়ে সৌগতবাবু বলেন, ‘‘আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় গিয়েছিলাম। স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে সরাসরি ফোন করে অসুবিধার কথা বলতে পারতেন। তা হলে বন্ধ করে দিতাম। এত বড় এলাকায় কে কোথায় মাইক লাগাচ্ছে তা দেখা আমার পক্ষে কঠিন।’’
আইএসসি পরীক্ষা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। আইসিএসই, মাধ্যমিক, সিবিএসসি পরীক্ষা আসন্ন। সোমবারই বহরমপুরের সরকারি সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘‘মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আসন্ন। খুব ভাল রেজাল্ট করবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক-সহ অন্য পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন।’’
দক্ষিণ দমদমের হিন্দ কলোনির ক্রীড়াঙ্গনে অবশ্য পরীক্ষার্থীরা নয়, দিন-রাতের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় চার-ছয় মারার জন্য অভিনন্দন পেয়েছেন খেলোয়াড়েরা। শনি এবং রবিবার ওই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল দক্ষিণ দমদম (শহর) তৃণমূল যুব কংগ্রেস। বক্সের আওয়াজকে মাঠে সীমাবদ্ধ না রেখে সাতগাছি মোড় থেকে বাতিস্তম্ভে চোঙা লাগানো হয়। যার জেরে সমস্যার সম্মুখীন হন পরীক্ষার্থীরা। যোগীপাড়ার বাসিন্দা আইএসসি’র এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘কাল ফিজিক্স পরীক্ষা। জানলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তবুও আওয়াজ আসছিল। রাত ১০টার অনেক পরে মাইক বন্ধ হয়েছে।’’ বয়সজনিত অসুখে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘অসুস্থতার জন্য চিকিৎসক রাত জাগতে বারণ করেছেন। আমাদের কথা কি কেউ ভাববে না! শব্দে ঘুম আসে?’’
রবিবার রাতে পরীক্ষার্থী, প্রবীণ নাগরিকেরা যখন শব্দ দৌরাত্ম্যে তিতিবিরক্ত তখন মাইকে প্রতিযোগিতার ফাইনালের বিবরণ শোনা যাচ্ছে— ‘‘ব্যাট করছে ডেঞ্জার নাইন। স্ট্রাইকে পন্টি... বোঝাপড়ার অভাবে পন্টি রান আউট হয়ে চলে আসছে।’’
বোঝাপড়ার অভাবে ‘রান আউটই বটে!’ নইলে সাতগাছি মোড় থেকে কামারডাঙা ফাঁড়ির দূরত্ব হাঁটাপথ হলেও পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না? পরীক্ষার মরসুমে কমবেশি ২০টি চোঙা টাঙিয়ে কী ভাবে রাত পর্যন্ত ক্রিকেট প্রতিযোগিতার অনুমতি মিলল, তার কোনও সদুত্তর নেই। রবিবার রাত ১০টার কিছু আগে ক্রীড়াঙ্গনে হাজির হন স্থানীয় সাংসদ। ‘অভিভাবক’কে মাইকে অভিবাদন জানানোর কোনও কসুর করেননি উদ্যোক্তারা। মাইক হাতে বক্তৃতা করার সময় সৌগতবাবু বলেন, ‘‘এত রাতে আসতে পেরেও আনন্দিত। খুব ভাল খেলা হোক। রাত যত বাড়বে খেলার আকর্ষণ তত বাড়বে!’’
ক্রিকেট প্রতিযোগিতার প্রধান উদ্যোক্তা তথা তৃণমূল কাউন্সিলর প্রবীর পাল বলেন, ‘‘পরীক্ষার সময়ে মাইক বাজানো যাবে না। দুপুরে গিয়েছিলাম, রাতে কী হয়েছে জানি না। এটা হয়ে থাকলে উচিত হয়নি।’’ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন-২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘পরীক্ষার মরসুমে কোথাও মাইক বাজানোর বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা পুলিশের নজরে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখবো।’’