নিয়ম ভেঙে স্টেশনে বিক্রি বিড়ি-সিগারেট

রেলের আইন এবং রেল পুলিশের নজরদারির জেরে স্টেশন চত্বর, প্ল্যাটফর্ম এমনকি, ট্রেনের মধ্যে ধূমপান অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। কিন্তু ধূমপান সংক্রান্ত রেলবিধির দ্বিতীয় ধাপটি মানা হলেও ওই বিধির প্রথম ধাপটি নিয়ে হেলদোল নেই কারও। 

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:০৬
Share:

অবাধে: হৃদয়পুর স্টেশনের দোকানে বিকোচ্ছে ধূমপানের উপাদান। ছবি: সুদীপ ঘোষ

দমদম জংশন স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। দোকান থেকে সিগারেট কিনে ধরানোর জন্য দেশলাই চাইলেন এক ব্যক্তি। দোকানি বললেন, ‘এখানে ধরাবেন না। রেল পুলিশ ধরবে। প্ল্যাটফর্মের নিচে গিয়ে খান।’ ওই ব্যক্তি চলে যেতে হাতের আড়ালে বিড়ি ধরিয়ে সুখটান দিতে লাগলেন দোকানিই।

Advertisement

রেলের আইন এবং রেল পুলিশের নজরদারির জেরে স্টেশন চত্বর, প্ল্যাটফর্ম এমনকি, ট্রেনের মধ্যে ধূমপান অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। কিন্তু ধূমপান সংক্রান্ত রেলবিধির দ্বিতীয় ধাপটি মানা হলেও ওই বিধির প্রথম ধাপটি নিয়ে হেলদোল নেই কারও।

ধুমপান সংক্রান্ত রেলের প্রথম নিয়মটি (৬ এ) হল, রেলওয়ে চৌহদ্দির মধ্যে সিগারেট, বিড়ি বা ধূমপানের সরঞ্জাম বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রেলের চৌহদ্দি তো বটেই প্রায় প্রতিটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের দোকানে অবাধে চলছে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি। বরং এমন নিয়ম যে রয়েছে তা জানেন না বলেই দাবি অনেকের। রেলের আইনে ধূমপান সংক্রান্ত দ্বিতীয় নিয়মটি (৬ বি) হল, ট্রেন তো বটেই রেলওয়ে চৌহদ্দির মধ্যেও ধূমপান নিষেধ। কিন্তু সিগারেট, বিড়ি রেলের চৌহদ্দির মধ্যেই বিক্রি হলে সেটাও তো বিধিভঙ্গেরই আওতার মধ্যে পড়বে! অভিযোগ, রেলপুলিশের একাংশের প্রশ্রয়েই এমনটা ঘটছে।

Advertisement

যদিও পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্টেশন চত্বর এবং প্ল্যাটফর্মে সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ। স্টেশনে কারা ধূমপানের সরঞ্জাম বিক্রি করছে তা নিয়ে নজরদারি চলে।’’ তা সত্বেও কোন কোন স্টেশনে সিগারেট বিক্রি চল‌ছে তা জানার পরে নিখিলবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই সব স্টেশনে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। কড়া ব্যবস্থা নিয়ে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা হবে।’’

বস্তুত এক দিকে হাওড়া অন্যদিকে শিয়ালদহ স্টেশন ছাড়িয়ে আপের দিকে এগোলেই পরপর স্টেশনের দোকানগুলিতে ঢালাও মিলবে বিড়ি-সিগারেট। শিয়ালদহ স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় সিগারেট বিক্রি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ওই স্টেশন থেকে মেন, দক্ষিণ কিংবা বনগাঁ শাখার যে দিকেই যাওয়া হোক, সে দিকেই দেখা যাবে নিয়ম শিথিল হচ্ছে। স্টেশন চত্বর, প্ল্যাটফর্মে সিগারেট বিক্রির ধুম দেখা যাবে। কেন সিগারেট বিক্রি করছেন প্রশ্ন করতেই দমদম স্টেশনের এক দোকানির জবাব, ‘‘কে বলে এ সব নিয়মের কথা! আপনার অন্য কোনও কাজ নেই?’’

বিধাননগর স্টেশনে দেখা গেল, তবুও কিছুটা আড়াল করে চলছে সিগারেট বিক্রি। কিন্তু দমদম জংশন, ক্যান্টনমেন্ট, দুর্গানগর, বিরাটি থেকে বারাসত হয়ে বনগাঁ ও বসিরহাট কিংবা মেন শাখার ব্যারাকপুরের দিকে রাখঢাক না রেখেই বিক্রি হচ্ছে বিড়ি-সিগারেট। দমদম স্টেশনের এক দোকানি জানালেন, রেল পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে সিগারেট-বিড়ি বিক্রির ছাড় মেলে। সেই অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি পুলিশ এবং রেল। আবার বারাসত বা ব্যারাকপুর স্টেশন ছাড়িয়ে আপের দিকে একটু এগোলে দেখা যাবে অন্য চিত্র। দোকানিরাই জানিয়েছেন, সেখানে সিগারেট বিক্রির জন্য মাসোহারার চল নেই। মফস্সল বা গ্রামে যাত্রী ও হকারদের মধ্যে এখনও স্টেশনে বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার চল রয়েছে। তাই সেখানে প্ল্যাটফর্মে সিগারেট বিক্রি যেন অন্যায় নয়।

রেলই জানাচ্ছে, জরিমানার অঙ্ক বাড়িয়ে ৫০০ টাকা, অনাদায়ে গ্রেফতার ও কারাবাসের বিধানে কড়াকড়ি করায় স্টেশনে ধূমপানের প্রবণতা কমেছে। ট্রেনে সিগারেট খেলে এখন যাত্রীরাও প্রতিবাদ করেন। ধুমপানের মতো সিগারেট-বিড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও কড়া শাস্তির বিধান এনে সেই প্রবণতা রোখার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন জনসংযোগ আধিকারিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন