দক্ষিণের বড় পুজোই কি পথ আটকাবে বেহালার

পুলিশ সূত্রের খবর, নিউ আলিপুর, বেহালার অটো চতুর্থী থেকেই বন্ধ হবে। পুজোর দিনে বেহালা ও কলকাতার মধ্যে বাস যাতায়াত করবে বন্দর এলাকার হাইড রোড, রিমাউন্ট রো়ড, মোমিনপুর দিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

সার সার: নিউ আলিপুরে যানজট। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

আলিপুর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্গাপুর সেতু পর্যন্ত পৌঁছতে ঝাড়া আধ ঘণ্টা লেগেছে টালিগঞ্জের বাসিন্দা শাম্ব দে-র। বুধবার দুপুরে বেহালার বাসিন্দা বলরাম ভট্টাচার্যের ট্যাক্সি ধুঁকতে ধুঁকতে তারাতলা মো়ড় থেকে নিউ আলিপুর পেট্রোল পাম্পে পৌঁছেছে।

Advertisement

শুধু এই দু’জন নন, গত ক’দিনে বেহালা থেকে কলকাতার মধ্যে যাতায়াত করতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা বেশির ভাগ নাগরিকের! এ দিন নলিনীরঞ্জন অ্যাভিনিউ, আলিপুর রোড, চেতলা সেন্ট্রাল রোডেও সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে প়ড়েছিল। ফলে সামান্য পথ পাড়ি দেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়েছে। এই কষ্ট আরও বা়ড়বে বই কমবে না।

পুলিশ সূত্রের খবর, নিউ আলিপুর, বেহালার অটো চতুর্থী থেকেই বন্ধ হবে। পুজোর দিনে বেহালা ও কলকাতার মধ্যে বাস যাতায়াত করবে বন্দর এলাকার হাইড রোড, রিমাউন্ট রো়ড, মোমিনপুর দিয়ে। আমজনতার বক্তব্য, এমনিতেই মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে নিউ আলিপুর এলাকার উপরে যানবাহনের চাপ বে়ড়েছিল। তার উপরে পুজো এগিয়ে আসতেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এর পরে সুরুচি সঙ্ঘের পুজোয় ভিড় বাড়লে পরিস্থিতি কী হবে, তা ভেবেই আশঙ্কিত বেহালা, নিউ আলিপুর এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, পুজোর সময়ে বেহালা ও খাস কলকাতার মধ্যে যাতায়াত করতে গেলে ভোগান্তির আশঙ্কা ষোলো আনা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবার বেইলি ব্রিজের উদ্বোধন। পুজোর দিনের সকালে ওই ব্রিজ দিয়ে ছোট গা়ড়ি চালানো হবে। কিন্তু বাসের মূল রাস্তা হবে বন্দর এলাকা। তাঁদের দাবি, নিউ আলিপুর, আলিপুর, চেতলার যানজটের কথা ভেবেই যান নিয়ন্ত্রণের এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু আমজনতার বক্তব্য, বন্দর দিয়ে বাস ঘুরে এলে, অটো চলাচল বন্ধ হলে উৎসবের দিনে ভোগান্তি বাড়বে বই কমবে না। বেহালার বাসিন্দা দামোদর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘অন্যান্য বছর মাঝেরহাট সেতু থাকত। তা দিয়ে বাস যেত। ফলে অটো বন্ধ হলে সমস্যা হত না। এ বার ভাঙা সেতুর কথা মাথায় রেখে কি অটো চলাচল চালু রাখা যেত না?’’ পুলিশের বক্তব্য, পুজোর সময়ে নিউ আলিপুর, চেতলায় যা ভিড় হয়, তাতে অটো চলাচল করলে পদে পদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে।

এর পরেও পুজোর সময়ে নিউ আলিপুর, চেতলায় যে গাড়ির জট পাকবে, তা মেনে নিচ্ছে পুলিশের একাংশও। তাদের মতে, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ক্লাব ‘সুরুচি’র পুজোর ভি়ড় তো রয়েছেই, তার উপরে রয়েছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ক্লাব ‘চেতলা অগ্রণী’র ভিড়। তার পরে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের উপরে গড়িয়াহাট পর্যন্ত একাধিক পুজো রয়েছে। ফলে গোটা রাস্তাটাই কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। এখন যে ভিড় হচ্ছে, তার জন্যও দায়ী নিউ আলিপুর এবং আশপাশের রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ। বেইলি ব্রিজ চালু হলে তা কিছুটা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আমরা নিউ আলিপুরের মূল রাস্তা, সোমনাথ লাহিড়ী সরণির উপরে কোনও ব্যারিকেড করিনি। আলিপুর স্টেশন রোডের দিকে ব্যারিকেড করা হয়েছে। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে বাস, অটো চলে না।’’ তাঁর দাবি, এলাকায় যানজটের জন্য ওই পুজো দায়ী নয়।

যানজট, অটো বন্ধ, বাস ঘুরপথে যাওয়া দেখে চিন্তায় বেহালার অনেক পুজোকর্তাও। নিউ আলিপুরের জট পেরিয়ে মানুষ বেহালায় পৌঁছতে পারবেন তো, আশঙ্কা তাঁদের। ওই পুজোকর্তাদের মতে, বন্দর হয়ে বেহালায় ঢুকলে অনেক স্বস্তিতে ঠাকুর দেখতে পারবেন দর্শনার্থীরা। পুলিশের একাংশও বলছে, পুজোর সন্ধ্যায় চেতলা, নিউ আলিপুরে ঢুকলে ভি়ড় ঠেলে বেরোতে ভোগান্তি হতে পারে অনেকেরই। এক প্রবীণ পুলিশ অফিসার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বছর কয়েক আগে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ভি়ড়ের চোটে নাকাল হওয়ার কথা। এ বার নিউ আলিপুরের ভিড়ও কি তবে তেমনই মারাত্মক হবে, প্রশ্ন তুলছেন বহু নাগরিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন