ট্রাফিক স্ট্যান্ড কি আদৌ জরুরি, প্রশ্ন কর্তাদেরই

পুলিশ অবশ্য থাকে। তবে যান-চলাচল নিয়ন্ত্রণই হোক বা জরিমানা নেওয়া কিংবা রাস্তা পারাপারে সাহায্য করা— প্রায় সবটাই হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে।

Advertisement

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৭:৪৭
Share:

বিশ্রামাগার। এক্সাইড মোড়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

চিত্র ১: বেলা সাড়ে ১২টা, এক্সাইড মোড়: পুলিশের ট্রাফিক স্ট্যান্ডের ভিতরে শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধা। বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করছেন পুলিশকর্মী।

Advertisement

চিত্র ২: দুপুর দেড়টা, মল্লিকবাজার মোড়: ট্রাফিক স্ট্যান্ডে পুলিশ নেই, জড়িয়ে-পেঁচিয়ে পড়ে রয়েছে তার।

চিত্র ৩: রাত সওয়া ১১টা, যদুবাবুর বাজার: পুলিশহীন ট্রাফিক স্ট্যান্ডে নিজেকে ট্রাফিক পুলিশ ঠাউরে ‘যানবাহন’ নিয়ন্ত্রণ করছে মত্ত এক ব্যক্তি।

Advertisement

পুলিশ অবশ্য থাকে। তবে যান-চলাচল নিয়ন্ত্রণই হোক বা জরিমানা নেওয়া কিংবা রাস্তা পারাপারে সাহায্য করা— প্রায় সবটাই হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে।

উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করলে বেপরোয়া গড়ির সামনে নিরাপদে যানশাসন করতে পারবে ট্রাফিক পুলিশ— এই ভাবনা থেকেই তৈরি হয়েছিল ট্রাফিক স্ট্যান্ড। কিন্তু কলকাতায় যেখানে উপরের চিত্রগুলোই চেনা ছবি, সেখানে প্রশ্ন উঠে যায় স্ট্যান্ডগুলি থাকার যৌক্তিকতা নিয়েই।

এ ব্যাপারে লালবাজারের ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের একাংশ যা বলছেন, তাতেও বেরিয়ে আসছে একই ছবি। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘কলকাতার রাস্তাঘাট, যান-চলাচলের যা অবস্থা, তাতে ওই স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে গেলে বহু জায়গাতেই ঠিক মতো যান শাসন করা যাবে না, ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধেও।’’ তিনি বলেন, ‘‘এক্সাইড মোড়ের কথা ভাবুন। আমরা ট্রাফিক স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ডিউটি করলে ওখানে তো যান শাসনের দফারফা হয়ে যাবে!’’ এর পাশাপাশি ট্রাফিককর্তাদের অনেকেই বলছেন, কলকাতায় যানবাহনের অনুপাতে মোটরযান চলাচলের রাস্তা নিতান্তই কম— মাত্র ৬ শতাংশ। যান-শাসনের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় বহু মানুষকে পারাপারে সাহায্য করতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ডিউটি করলে সেটা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন ওই পুলিশ অফিসারেরা।

বহু জায়গাতেই তাই ট্রাফিক স্ট্যান্ডে পুলিশকর্মী থাকেন না। থাকেন তার কাছাকাছি, রাস্তার উপরে। অনেক সময়েই রোদে পুড়ে, জলে ভিজে ডিউটি করতে হয়। আর ফাঁকা স্ট্যান্ডগুলো কোথাও হয়ে গিয়েছে ভবঘুরেদের আশ্রয়, কোথাও বা রাস্তার কুকুরের বিশ্রামাগার। কোথাও আবার ট্রাফিক স্ট্যান্ডই আবর্জনা ফেলার জায়গা।

একেবারে পরিত্যক্ত না হলেও শহরের ট্রাফিক স্ট্যান্ডগুলি কম ব্যবহৃত হচ্ছে, তা মানছেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারও। তবে এখনই অবশ্য স্ট্যান্ডগুলি তুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে পুলিশকে ডিউটি করতেই হয়। তবে তুলনায় কম হলেও রোদ-জল-বৃষ্টিতে ওই স্ট্যান্ডগুলি ব্যবহার করে পুলিশ।’’ ট্রাফিকের এক শীর্ষ কর্তা জানান, স্ট্যান্ডগুলি যাতে বেদখল না হয়, সে দিকে অবশ্যই নজর দেওয়া হবে।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, এ ধরনের স্ট্যান্ডের পরিকল্পনা প্রথম করা হয় ২০০২-০৩ সালে। সেই সময়ে শহরের রাস্তায় এত যানবাহন ছিল না, যান শাসনের পরিস্থিতিও এত জটিল হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তার পরে ১৩-১৪ বছরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। ট্রাফিক স্ট্যান্ডগুলি আর আদৌ প্রয়োজনীয় কি না, অন্তত বেশ কয়েকটি রাস্তার মোড়ে— সেই প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাফিক পুলিশের কয়েক জন কর্তাই। তাঁদের মতে, কিছু জায়গা থেকে ট্রাফিক স্ট্যান্ড তুলে দেওয়া উচিত, অথবা স্ট্যান্ড রাখতে হলে সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলোর চেহারা ও জায়গা নিয়েও ভাবতে হবে।

এক সময়ে ট্রাফিক পুলিশকে দাঁড়াতে হতো ট্রাফিক বক্সে। কাঠের চৌকো ব্লক, মাথার উপরে উপরে কোনও আচ্ছাদন ছিল না। রোদ-বৃষ্টি আটকাতে সেই আচ্ছাদন পরে করা হল ঠিকই, কিন্তু চৌকো ব্লকের উপর দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে ট্রাফিক পুলিশের অসুবিধা হত। দুর্ঘটনা এড়ানোর ক্ষেত্রেও তেমন সুরক্ষিত ছিল না ব্লকগুলি।

এখন যে নীল-রুপোলি রঙা গোলাকার ট্রাফিক স্ট্যান্ডগুলো শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যায়, তাতে আলো ও পাখার বন্দোবস্তও আছে। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, গোটা কলকাতায় এ ধরনের স্ট্যান্ড আছে দেড়শোরও বেশি। ২০০৬ সালে বেপরোয়া গাড়ির কবলে পড়েছিল আগেকার একটি পলকা ট্রাফিক বক্স। তার পরেই বর্তমান চেহারায় স্ট্যান্ডগুলিকে গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লাগেন লালবাজারের কর্তারা। সিমেন্টের বেদির উপরে বসানো শক্তপোক্ত ওই স্ট্যান্ড অনেকটাই নিরাপদ। অনেক ক্ষেত্রে রোড ডিভাইডারের কাজও করে ওই ট্রাফিক স্ট্যান্ড। তা ছাড়া, এর গায়ে নীল রঙের টেপ বা ফিতের উপরে আলো পড়লে প্রতিফলিত হয়। ফলে চালকেরাও সতর্ক হয়ে যান।

ট্রাফিককর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, এই ধরনের বিবর্তন যদি হতে পারে, তবে বর্তমান সময় ও অবস্থার কথা চিন্তা করে আরও এগিয়ে ভাবতে অসুবিধা কোথায়? ডিসি ট্রাফিকের কথায় অবশ্য এখনই আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন