যোগ্যতা ছাড়াই সাঁতার শেখাচ্ছেন অনেকে, নিয়ম মানছে না ক্লাবগুলো

দিন পনেরো আগে সাঁতার শিখতে শুরু করা এক শিক্ষানবিস এখন সহজেই নজর এড়িয়ে ডুবে যান অতলে। প্রশ্ন উঠে যায়, যাঁদের নজর রাখার কথা, যাঁদের সজাগ থাকার কথা, সেই প্রশিক্ষকদের আন্তরিকতা নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ১৯:২০
Share:

কোনি ছবির ক্ষিদ্দা।

ক্ষিদ্দা’রা কি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন?

Advertisement

দিন পনেরো আগে সাঁতার শিখতে শুরু করা এক শিক্ষানবিস এখন সহজেই নজর এড়িয়ে ডুবে যান অতলে। প্রশ্ন উঠে যায়, যাঁদের নজর রাখার কথা, যাঁদের সজাগ থাকার কথা, সেই প্রশিক্ষকদের আন্তরিকতা নিয়ে। আর তখনই উঠে আসে ক্ষিদ্দা-র প্রসঙ্গ। এখন পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা সুইমিং পুলের প্রশিক্ষকদের মাঝে ক্ষিদ্দা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন।

টালা থেকে টালিগঞ্জ ব্যাঙের ছাতার মতো তৈরি হচ্ছে সুইমিং পুল। কয়েক বিঘত জায়গা বার করতে পারলেই নীল জলের টলটলে পুল তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার হিড়িক পড়ে যাচ্ছে। অ্যান্ডারসন ক্লাবের সঙ্গে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত উদয় ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘কয়েক বছর সুইমার হিসেবে সাঁতার কাটার পরেই অনেকে এখন প্রশিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, প্রশিক্ষক হওয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণ তা তাঁদের নেই।’’ এর ফলে, জলে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে, বাচ্চাদের হাত-পা ছোঁড়া শেখানো পর্যন্ত আটকে থাকছে প্রশিক্ষকের কাজ। কিন্তু, ক্ষিদ্দা হয়ে উঠছেন না কেউই।

Advertisement

২০০২ সালের ঘটনা। মঙ্গলবার যে জলাশয় কেড়ে নিল সঙ্গীতা দাসের প্রাণ, ওই হেদুয়াতেই সাঁতার শিখতে এসে সে বার ডুবে মারা গিয়েছিলেন পূজা জায়সবাল। ন্যাশনাল নামে যে ক্লাবের সদস্য ছিলে পূজা তার সম্পাদককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সে বার কলকাতা পুরসভা সমস্ত সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। ক্লাবে ডুবুরি রাখা, যন্ত্রপাতি রাখা এবং প্রশিক্ষকদের ‘লাইফ সেভিং’ বা ডুবন্ত মানুষকে বাঁচানোর প্রশিক্ষণ থাকাটা জরুরি বলেও নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। ক্লাবগুলি তখনই জানিয়েছিল যে ডুবুরি রাখা সম্ভব না হলেও বাকি নির্দেশ মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু, সঙ্গীতার মৃত্যু জানিয়ে দিয়ে যায়, সে নিয়ম মানা হয়নি।

জানা গিয়েছে, লাইফ সেভিং এই প্রশিক্ষণ অ্যান্ডারসন সহ কয়েকটি জায়গায় দেওয়া হয়। অ্যান্ডারসনে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষা নেওয়া হয়। উদয়বাবু জানিয়েছেন, ইদানীং প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে ১০ শতাংশও পাস করতে পারেন না। সেই প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে জলের তলায় টানা ৯০ সেকেন্ড থাকতে হবে। জলের তলায় ২৫ মিটার সাঁতার কাটার ক্ষমতা থাকতে হবে। ২২ সেকেন্ডের মধ্যে জামা-জুতো খুলে জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অভিযোগ, এখন গজিয়ে ওঠা বেশিরভাগ পুলের প্রশিক্ষকদের কাছেই এই সার্টিফিকেট নেই।

হেদুয়ারই সেন্ট্রাল সাঁতার ক্লাবের প্রশিক্ষক তাপস ভট্টাচার্য জানান, আগেকার দিনের বেশিরভাগ প্রশিক্ষকই বিনা মূল্যে, ভালোবেসে প্রশিক্ষণ করাতে আসতেন। ফলে, তাঁদের আন্তরিকতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলতে পারেননি কেউই। সেখানেই ক্ষিদ্দা-রা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু, ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছুদিন সুইমার হিসেবে সাঁতার কাটার পরে অতিরিক্ত রোজগারের আশায় অনেকে প্রশিক্ষক হয়ে য়াচ্ছেন। দেখা গিয়েছে, সাধারণ চাকরি করা যুবক-যুবতী ভোরবেলা এবং অফিস থেকে ফিরে বিকেলবেলা প্রশিক্ষণ দিয়ে কিছু টাকা রোজগার করছেন। সে অবশ্য সামান্যই টাকা। অভিযোগ, এঁদের বেশিরভাগেরই ওই লাইফ সেভিং প্রশিক্ষণ নেই।

কলকাতার অন্যতম পুরনো সুইমিং পুল সল্টলেকের বিসি ব্লকে। সেখানে ৩৭ বছর ধরে সাঁতার শেখাচ্ছেন স্মরজিৎ পাল। টুলু-দা নামেই তিনি জনপ্রিয়। ৬৩ বছর বয়স। তাঁর কথায়, ‘‘জলে নেমে সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ চলাকালীন পাড়েও কয়েকজনকে নজর রাখতে হয়। একসঙ্গে এত বাচ্চা শেখে যে জলে নেমে প্রশিক্ষকের পক্ষে সবার উপরে নজর রাখাটা সম্ভব নয়। যাঁরা পাড়ে থাকেন, তাঁদেরই বিশেষ করে ওই লাইফ সেভিং প্রশিক্ষণ থাকার উচিত। আমার আছে। তা না থাকলে ডুবন্ত মানুষকে বাঁচাবো কী করে?’’

কয়েকজন ক্ষিদ্দা তা হলে আজও বেঁচে আছেন!

আরও খবর

হেদুয়ায় তরুণীর মৃত্যু দেখাল সাঁতার শিক্ষায় বিশেষ সাবধানতা জরুরি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন