বাকি আর মাত্র দশ দিন। তাতে থোড়াই কেয়ার! রাজ্য সরকারের আরোপ করা শর্ত কার্যত উড়িয়ে দিয়ে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে ওলা, উবের। যা দেখেশুনে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়েছেন, যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে শর্ত না মানলে স্থায়ী লাইসেন্স দেওয়া হবে না সংস্থাগুলিকে। কিন্তু মন্ত্রী হুমকি দিলেও তা নিয়ে এখন দোটানায় পরিবহণ দফতর।
কারণ, এক দিকে উল্টোডাঙা বা বড়বাজারের ঘটনার পরে ওলা, উবেরের প্রতি কঠোর হওয়াই উচিত বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরের একাংশের কর্তারা। অন্য দিকে, হঠাৎ করে ওলা, উবেরের লাইসেন্স বাতিল করলে হাজার-হাজার যুবক বেকার হয়ে যাবেন— সেই আশঙ্কাও রয়েছে। তাই সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছে সরকার। বিষয়টির একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে চলতি সপ্তাহেই ওই দুই সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসারও তোড়জোড় শুরু হয়েছে পরিবহণ দফতরের অন্দরে।
চলতি বছরের শুরুতে ওলা, উবেরের মতো সংস্থাগুলির উপরে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছিল রাজ্য সরকার। কথা ছিল, ওই শর্ত পূরণ করলে তবেই সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া হবে। ওই শর্তগুলি হল— ১) প্রত্যেক সংস্থার ২৪X৭ কন্ট্রোল রুম থাকবে। ২) প্রতি দু’বছর অন্তর লাইসেন্স নবীকরণ করাতে হবে। ৩) পরিবহণ পরিষেবার সাধারণ শর্ত পুরণ করতে না-পারলে সরকার লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। ৪) নিয়মিত পারফরম্যান্স অডিট করাতে হবে। ৫) গাড়িতে সংস্থার লোগো থাকবে। ৬) গাড়িতে জিপিএস পরিষেবা এবং ‘ফিজিক্যাল প্যানিক বাটন’ রাখতে হবে। ৭) গাড়িতে সিসি ক্যামেরার নজরদারি রাখতে হবে। ৮) চালক সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য সরকার অনুমোদিত নিরাপত্তা সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে তা জমা দিতে হবে প্রশাসনের কাছে।
প্রাথমিক ভাবে সরকারের আরোপ করা শর্ত মানতে কিছু সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল সংস্থাগুলি। সেই মতো গত ১৫ জুন পর্যন্ত ওই সময় দেয় সরকার। কিন্তু তার পরেও সংস্থাগুলির তরফে ফের সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি করা হয়। বিশেষত, সিসি ক্যামেরা বসানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে জানায় সংস্থাগুলি। এর পরেই সংস্থাগুলিকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অস্থায়ী লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই সময়সীমার মধ্যে সব শর্ত মানা হলেই দু’বছরের জন্য স্থায়ী লাইসেন্স দেওয়ার কথা সংস্থাগুলিকে।
কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি বলেই দাবি অধিকাংশ পরিবহণ-কর্তাদের। এক কর্তার কথায়, ‘‘কল সেন্টার থেকে শুরু করে গাড়িতে ফিজিক্যাল প্যানিক বাটন, সিসি ক্যামেরা বা চালকদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে এখনও কোনও হেলদোল নেই ওলা, উবেরের। গত সপ্তাহের ধর্ষণের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, চালকদের সম্পর্কে তথ্য ছাড়াই তাঁদের রাখা হচ্ছে।’’
এ সম্পর্কে পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। পরিবহণ কর্তাদেরই একাংশের মতে, ‘‘চালকদের সবিস্তার ওই সংস্থাগুলি নেবে কেন? পাসপোর্টের ক্ষেত্রেই ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ করা হয়। অন্য সব ক্ষেত্রেই এটা করা কার্যত অসম্ভব। কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় প্রতি দিন শ’য়ে শ’য়ে যুবক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। সবার ক্ষেত্রেই অতীতের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নিতে গেলে লাইসেন্স দিতে প্রচুর সময় লাগবে। এক পরিবহণ-কর্তার মতে, ‘‘যেখানে সরকারই চালকদের সবিস্তার তথ্য নিতে পারছে না, সেখানে সংস্থাগুলি পারবে কী করে!’’ ওই কর্তা বলেন, ‘‘প্রথমে পুলিশকে এই কাজ করতে বলা হয়। কিন্তু তারাও করতে চায়নি। এখন সংস্থাগুলিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।’’
আপাতত তাই, ওলা, উবেরকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে সরকার। তিন-চার দিনের মধ্যে সংস্থাগুলির সঙ্গে বসে সমাধান সূত্র বের করতে চাইছে সরকার।