কড়ি ফেললে তবেই মিলবে খাদ্য-রিপোর্ট

ভাগাড়-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে গত মাসে একাধিক রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছিল বিধাননগর পুরনিগম, দমদম, দক্ষিণ দমদম-সহ একাধিক পুরসভা। সন্দেহজনক খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলি কনভেন্ট রোডে সরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার প্রায় এক মাস পরে এখনও সেই রিপোর্ট হাতে পায়নি পুরসভাগুলি।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০২:২৯
Share:

ফাইল চিত্র।

ফেল কড়ি পাও রিপোর্ট! সরকারি পরীক্ষাগারের বার্তায় খাদ্য অভিযানের রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে বিপাকে একাধিক পুরসভা।

Advertisement

ভাগাড়-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে গত মাসে একাধিক রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছিল বিধাননগর পুরনিগম, দমদম, দক্ষিণ দমদম-সহ একাধিক পুরসভা। সন্দেহজনক খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলি কনভেন্ট রোডে সরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার প্রায় এক মাস পরে এখনও সেই রিপোর্ট হাতে পায়নি পুরসভাগুলি। টাকা দিলে তবেই ওই রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে সরকারি পরীক্ষাগারের তরফে জানানো হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

দমদম পুরসভার এক কর্তা জানান, রিপোর্টের কথা জানতে চেয়ে সরকারি পরীক্ষাগারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্তু তাতে বিড়ম্বনা বেড়েছে। কারণ? ওই কর্তার দাবি, তাঁদের বলা হয়েছে, নমুনা পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। তবে টাকা না দিলে মিলবে না রিপোর্ট। সংশ্লিষ্ট পুর কর্তার কথায়, ‘‘নমুনা পিছু ১৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। আমরা আটটি নমুনা পাঠিয়েছিলাম। সেই হিসাবে ১২ হাজার টাকা দিতে হবে। নমুনা পরীক্ষা করাতে গেলে টাকা দিতে হবে, তা জানা ছিল না।’’ এই পরিস্থিতিতে এ যাত্রায় যাতে ছাড় মেলে, সে জন্যে জেলাশাসক অন্তরা আচার্যকে চিঠি দিয়েছে দমদম পুরসভা।

Advertisement

টাকা চাওয়া হয়েছে বিধাননগর পুরনিগমের কাছেও। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘নমুনা পরীক্ষার খরচ রয়েছে। জেলা থেকে একাধিক পুরসভা নমুনা পাঠিয়েছে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে অন্তত ২২টি খাবারের নমুনা পাঠিয়েছি। আমাদের কাছে ১২০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছে।’’ রিপোর্ট যে দ্রুত পাওয়া জরুরি, তা নিয়ে একমত প্রণয়। পুরনিগমের এক কর্তার কথায়, ‘‘রেস্তোরাঁর মালিকেরা তো জানতে চাইবেনই। দ্রুত রিপোর্ট না পেলে অভিযান বন্ধ করে দিতে হবে।’’ পাশাপাশি, পরীক্ষার জন্য টাকা চাওয়া হলে আগামিদিনে পুরসভাগুলি এ ধরনের অভিযানে কতটা উৎসাহী হবে, সে প্রশ্নও উঠেছে।

এই পরিস্থিতিতে আরও এক সমস্যার সামনে পুর কর্তৃপক্ষেরা। যে সব রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়েছিল, তারাও নমুনায় কিছু পাওয়া গিয়েছে কি না জানতে আগ্রহী। কারণ তাদের দাবি, পুরসভার ওই পদক্ষেপের ফলে ওই সমস্ত রেস্তোরাঁ এবং খাবারের দোকানের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ দমদম পুর কর্তৃপক্ষ নাগেরবাজার সংলগ্ন একটি শপিং মলের ফুডকোর্টে অভিযান চালিয়ে সেখানকার খাবারের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ওই শপিং মল কর্তৃপক্ষ সরকারি রিপোর্টে কিছু পাওয়া গিয়েছে কি না, তা নিয়ে মৌখিক ভাবে পুর প্রতিনিধিদের কাছে খোঁজখবর করেছেন। একই রকম প্রশ্নের মুখে বিধাননগর পুরনিগম এবং দমদম পুরসভা। বিধাননগর পুরনিগম সূত্রের খবর, তথ্য জানার অধিকার আইনে অভিযানের ফল জানতে চেয়ে আবেদন করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সুভাষবাবু জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, পুর বিষয়ক দফতর ছাড়াও কলকাতা, বিধাননগর হাওড়া এবং দমদম পুরসভাকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠান, ক্যান্টিনের মেনু থেকে মাংস বাদ পড়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান চালানো হল। মানুষ আতঙ্কিত হলেন। অথচ রিপোর্টের দেখা নেই কেন?’’

তবে স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রিপোর্ট তৈরি হয়নি তা-ও নয়। তবে রিপোর্টে কী আছে, তা প্রকাশ্যে আনা হবে কি না, তা এই বিষয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায় কমিটির এক্তিয়ারভুক্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন