স্কুলবাসে লরির ধাক্কায় জখম খুদেরা, আতঙ্ক

ফের যান শাসনে ‘গাফিলতি’র মাসুল গুনল একটি স্কুলবাস। বালি-বোঝাই লরির সঙ্গে সংঘর্ষে ওই দুর্ঘটনায় কম-বেশি আহত হল খুদে পড়ুয়ারা। চিকিৎসকেরা বলছেন, শারীরিক আঘাত গুরুতর না হলেও, মানসিক আঘাত সামলে উঠতে সময় লাগবে তাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০২:১১
Share:

দুর্ঘটনার পরে। সোমবার, নিউ টাউনে। — নিজস্ব চিত্র

ফের যান শাসনে ‘গাফিলতি’র মাসুল গুনল একটি স্কুলবাস। বালি-বোঝাই লরির সঙ্গে সংঘর্ষে ওই দুর্ঘটনায় কম-বেশি আহত হল খুদে পড়ুয়ারা। চিকিৎসকেরা বলছেন, শারীরিক আঘাত গুরুতর না হলেও, মানসিক আঘাত সামলে উঠতে সময় লাগবে তাদের। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের আকাঙ্ক্ষা মোড়ের কাছে বারোতলা মোড়ে। সাতসকালে ওই ব্যস্ত মোড়ে লরি কী করে আসে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীরা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, নিউ টাউনের মেজর আর্টারিয়াল রোড থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে লরিটি স্কুলবাসটিকে ধাক্কা মারে। ঘটনার পরেই পালায় লরিচালক। পুলিশের অনুমান, ভেজা মাটিতে লরির চাকা পিছলে গিয়েই দুর্ঘটনা।

পুলিশ জানায়, দ্য নিউ টাউন স্কুলের ওই বাসে ৩-১৪ বছরের প্রায় ২০ জন পড়ুয়া ছিল। তাদের তিন জনকে পর্যবেক্ষণের জন্য ভর্তি রাখা হয়েছে হাসপাতালে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকদের অনেকেরই অভিযোগ, আকাঙ্ক্ষা মোড়ের কাছে সারাদিনই লরি দাঁড়িয়ে থাকে। এলাকায় বেশ কিছু স্কুল থাকায় রোজ সকালে নিউ টাউন জুড়ে চষে বেড়ায় স্কুলবাস, স্কুলগাড়ি। তবুও যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সজাগ নয়। বারোতলা মোড়েও যান শাসন থাকে না বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। তাঁদের দাবি, বারোতলা মোড়-সহ এলাকার বিভিন্ন ছোট মোড়ে গাড়ি-বাস-লরি তীব্র গতিতে উঠে আসে রাজপথে। একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল হলেও সেখানে না রয়েছে সিগন্যাল, না পুলিশি নজরদারি।

Advertisement

সাধারণত এলাকায় লরি চলাচলের সময় নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট। পুলিশ সূত্রে খবর, বিধাননগর কমিশনারেট তৈরির সময়ে রাজারহাটের একটি বড় অংশ নিউ টাউনে সংযোজিত হয়েছে। বারোতলা মোড় তার মধ্যেই। কিন্তু এ পর্যন্ত সেখানে লরি চলাচলের ‘নোটিফিকেশন’ তৈরি হয়নি। কমিশনারেটের অন্যত্র দুপুর ১টা-৪টে ও রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত লরি চলতে পারে। নোটিফিকেশনের বিষয়টি এড়িয়ে বিধাননগরের এডিসিপি (ট্রাফিক) জয় টুডু শুধু বলেন, ‘‘এই ধরনের বহু রাস্তার জন্যই আমরা নিউ টাউন কর্তৃপক্ষের কাছে সিগন্যাল পোস্ট তৈরির প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’’ নিউ টাউন কর্তৃপক্ষের তরফে হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। নিরাপত্তার বিষয়টিকে কখনও হাল্কা ভাবে নিই না। পুলিশের প্রস্তাব মতোই সিগন্যাল পোস্ট তৈরি করে দেওয়া হয়। আজকের ঘটনাটি খতিয়ে দেখে যা করণীয়, করা হবে।’’

রাত পর্যন্ত বালি-বোঝাই লরিটির চালককে খুঁজে পায়নি পুলিশ। খোঁজ চলছে লরির মালিকেরও। আকাঙ্ক্ষা মোড়ের কাছে দিনের বিভিন্ন সময়ে সিন্ডিকেটের লরি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। রাজারহাট থেকে আসা ওই লরিটিও সিন্ডিকেটের বালি আনছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এ দিনের ঘটনায় ফের প্রশ্নে স্কুলবাসে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা। স্কুলবাসে কেন সিট-বেল্ট থাকবে না, সে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিতে সিট-বেল্ট ছিল। তবে অভিভাবকদের একাংশই জানাচ্ছেন, সিট-বেল্ট থাকলেও সব বাচ্চারাই যে তা বেঁধে শান্ত ভাবে বসে থাকবে, এমনটা তাঁরা আশা করেন না। জানা গিয়েছে, এ দিনও বেশির ভাগ পড়ুয়াই সিট-বেল্ট বাঁধেনি।

তবে এই স্কুলবাসটির বিরুদ্ধে রক্ষণাবেক্ষণের অভিযোগ তোলেননি অভিভাবকেরা। এক অভিভাবক লাভলি বসুর কথায়, ‘‘বাসটি নতুন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। রয়েছে সিট-বেল্ট, সিসিটিভি। প্রতিটি পড়ুয়াকে দেওয়া ‘রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিটি কার্ড’-এর সাহায্যে বাচ্চা কখন বাসে উঠছে, কখন স্কুলে পৌঁছচ্ছে, সব তথ্যই অ্যাপ মারফত পেয়ে যাই আমরা। ফলে, সে সব দিক থেকে বাচ্চা সুরক্ষিত।’’ এ দিন সকালে মেয়েকে স্কুলে পাঠাননি লাভলি। তবে দুর্ঘটনার খবর শুনে ছুটে এসেছিলেন সল্টলেকের হাসপাতালে।

ওই স্কুলের সিইও বিনীত কানসাল বলেন, ‘‘গত বছর চালু হওয়া আমাদের স্কুলে এখন এল কে জি থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত বাচ্চারা পড়ে। আমাদের কুড়িটি বাসই নতুন। অন্য গাড়ি এসে ধাক্কা মারলে কী করব? খবর পেয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাসপাতালে যান।’’ ওই স্কুলবাসে চালক ছাড়াও এক জন পুরুষ ও এক জন মহিলা কর্মী ছিলেন বলেও বিনীত জানান।

দুর্ঘটনার পরে পিছনে থাকা নিউ টাউন ডিপিএস স্কুলের একটি বাসের শিক্ষিকা, চালক ও খালাসি নেমে উল্টে পড়া বাসের কাচ ভেঙে বাচ্চাদের উদ্ধার করেন। সাহায্য করেন স্থানীয়েরাও। কিছু পরে দ্য নিউ টাউন স্কুলেরই আর একটি বাস এসে অক্ষত পড়ুয়াদের স্কুলে নিয়ে যায়। আহতদের প্রথমে ভিআইপি রোডের এক হাসপাতাল ও পরে সল্টলেকের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টে পড়া বাসটির চালক উত্তম সামন্তের মাথায়, হাতে-পায়ে চোট লাগে। তাঁর কথায়, ‘‘বাস আস্তেই চলছিল। আচমকা পাশ থেকে প্রচণ্ড ধাক্কা। আমাদের বাসটা উল্টে যায়। প্রথমে তো বুঝতেই পারছিলাম না কী হয়েছে। সামনে ফাঁকা রাস্তা। তার পরে দেখি পাশ থেকে লরি ধাক্কা মেরেছে।

ডিপিএস নিউ টাউনের অধ্যক্ষ সোনালি সেন বলেন, ‘‘আমরাও চিন্তিত। শুধু আমাদের স্কুলই নয়, এলাকায় কিছু বড় বড় স্কুল আছে। রোজ প্রচুর স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ির যাতায়াত। এ ভাবে নিয়ন্ত্রণহীন মোড়, বেপরোয়া লরি নিয়ে পুলিশকে সতর্ক হতেই হবে।’’ সোনালিদেবী জানান, স্থানীয় স্কুলের অধ্যক্ষদের নিয়ে ২৫ অগস্ট পুলিশের একটি বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে বিষয়গুলি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করতে চান তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন