লাগাতার বেপরোয়া গাড়ি, ফের মৃত ১, জখম ২৯ জন

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার চলছে রাজ্য জুড়ে। তবু নিরাপদে গাড়ি চালানোর সচেতনতা এখনও যে সে ভাবে দানা বাঁধেনি, সোমবার ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তিনটি দুর্ঘটনা। বিকেলে শ্যামবাজারে বেপরোয়া দুই বাসের মুখোমুখি ধাক্কায় জখম হলেন মোট ২৭ জন যাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৮
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত দু’টি বাস। (ডান দিকে) উদ্ধার করা হচ্ছে জখম এক চালককে। সোমবার, শ্যামবাজারে। — নিজস্ব চিত্র

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার চলছে রাজ্য জুড়ে। তবু নিরাপদে গাড়ি চালানোর সচেতনতা এখনও যে সে ভাবে দানা বাঁধেনি, সোমবার ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তিনটি দুর্ঘটনা। বিকেলে শ্যামবাজারে বেপরোয়া দুই বাসের মুখোমুখি ধাক্কায় জখম হলেন মোট ২৭ জন যাত্রী। বাসের মধ্যে আটকে পড়ে গুরুতর জখম হন দুই চালকও। করাত দিয়ে বাস কেটে তাঁদের বার করে দমকল। দুপুরে নিয়ম ভাঙা লরিতে পিষ্ট হয়ে পার্ক সার্কাসে মৃত্যু হয় এক স্কুটার আরোহীর। দুপুরেই টালিগঞ্জের অশোকনগরে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় জখম হন আর এক মহিলাও। দিন কয়েক আগেই আলিপুরে বেপরোয়া ভাবে ছোটানো গাড়ি ফুটপাথে উঠে পড়ে পিষে দিয়েছিল তিন জনকে। তার পরেও যে শহরের হুঁশ ফিরেছে কি, এ দিনের ঘটনাই সেই প্রশ্ন তুলে দিল।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের সামনে আর জি কর রোডে একই রুটের দুই বাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একটি বাসের যাত্রীরা বেলগাছিয়া থেকেই গতি কমাতে বলছিলেন। উল্টো দিক থেকে আসা বাসটির যাত্রীরাও বারবারই গতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলছিলেন। অভিযোগ, কোনও চালকই তা কানে তোলেননি। তার পরেই দুর্ঘটনা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ফুটপাথের ব্যবসায়ী রাজু সাউ বলেন, ‘‘দোকানে ছিলাম। আচমকা বাসের টায়ার ফাটার মতো বিকট শব্দ। ছুটে গিয়ে দেখি, মুখোমুখি ধাক্কা খেয়েছে দুটো বাস। গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে।’’ পুলিশ জানায়, যাত্রীদের চিৎকারে ছুটে আসেন দু’পাশের ফুটপাথের ব্যবসায়ীরাই। প্রাথমিক ভাবে তাঁরাই উদ্ধারকাজে হাত লাগান। দু’টি বাস থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চালকদের বার করা যাচ্ছিল না। পরে দমকল এসে তাদের উদ্ধার করে আরজিকরে পাঠায়।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দু’টি বাসের প্রত্যেকটিতেই জনা কুড়ি যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে দু’জন শিশু। আহত আট জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার জেরে প্রায় আধ ঘণ্টা আর জি কর রোড বন্ধ থাকে। যানজট হয় এলাকায়।

মা বাসন্তী বৈরাগ্যকে নিয়ে পাতিপুকুর থেকে বাসে চেপেছিলেন বিশ্বনাথ বৈরাগ্য। এ দিন বিকেলে আরজিকরের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয় বাসন্তীদেবীকে। বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘পাতিপুকুর থেকেই বাস যথেষ্ট বেপরোয়া ছুটছিল। চালককে বারবার বলেও লাভ হয়নি। শ্যামবাজার পেরোতেই আমি ছিটকে বাসের মধ্যেই এক জনের উপরে পড়ি। মা আমার চেয়েও বেশি চোট পেয়েছেন।’’ শিয়ালদহ থেকে বাসে ওঠেন শ্যামবাজারের প্রৌঢ় রাধেশ্যাম শাসমল। ছিটকে পড়ে কোমরে আঘাত লাগে ওই প্রৌঢ়ের। আর জি করে ভর্তি বেলগাছিয়ার তনবীর আশরফও। তিনি বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গতিতে আমাদের বাসটা আর একটাকে ওভারটেক করতে যাচ্ছিল। আর সেই সময়েই সামনের দিক থেকে আসা বাসের মুখোমুখি ধাক্কা।’’

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস-সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী। ঘাতক বাস দু’টিকে আটক করা হয়েছে। বেপরোয়া বাস চালানোর মামলা রুজু হয়েছে চালকদের বিরুদ্ধে।

অন্য দিকে, দুপুর ১টা নাগাদ পার্ক সার্কাসে লালবাতির নিষেধ মেনে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা বছর ছাপান্নর আনোয়ার আজিজের স্কুটার। কিন্তু পিছন থেকে বেপরোয়া ট্রাক ধাক্কা দেয় তাঁকে। ঘটনায় জখম হন এক ডাব বিক্রেতাও। পুলিশ স্কুটার আরোহীকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রাকটি বেপরোয়া গতিতে এজেসি বোস রোড উড়ালপুল থেকে নেমে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিংয়ের দিকে যাচ্ছিল। সার্কাস অ্যাভিনিউ এবং ঝাউতলা লেনের মোড়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিলেন আজিজ। তাঁদের দাবি, ট্রাকটি প্রথমে স্কুটার আরোহীকে চাপা দিয়ে পথের পাশে দাঁড়ানো ডাব বিক্রেতাকে ধাক্কা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা নাসিম আলি জানান, পুলিশ এসে দুই ব্যক্তিকেই হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, রমেশ শাহ (২৭) নামে ওই ডাব বিক্রেতা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর বা পায়ে চোট লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পণ্যবাহী ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোয় এই বিপত্তি। ট্রাকটি আটক করেছে পুলিশ। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দুপুর ১২টা নাগাদটালিগঞ্জের অশোকনগরে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় জখম হন এক মহিলা। পুলিশ জানায়, গৌরী হালদার নামে স্থানীয় বাসিন্দা ওই মহিলা এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ গাড়িটিকে আটক এবং চালক রাজীব পাণ্ডেকে গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল রাজীব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন