অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
ভরদুপুরে গল্ফ গ্রিনের রাস্তা ধরে ছুটছে দুই যুবক। পিছনে ধাওয়া করছে ষন্ডা চেহারার আরও দুই যুবক। তাদের হাতে বন্দুক।
মঙ্গলবার দূরদর্শন কেন্দ্রের সামনে এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন পথচারীরা। সিনেমার শ্যুটিং চলছে কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। ভুলটা ভাঙল কিছুক্ষণ পরে। দেখা গেল, সামনে ছুটতে থাকা দুই যুবকের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে নিয়ে আসছেন পিছনে থাকা ষন্ডা চেহারার যুবকেরা। পথচারীরা বুঝলেন সিনেমা নয়, চোখের সামনে যা ঘটে গেল, পুরোটাই বাস্তব। ষন্ডা চেহারার ওই দুই যুবক আদতে পুলিশ!
পুলিশ জানিয়েছে, তোলাবাজির অভিযোগে ওই দুই দুষ্কৃতীকে ধরা হয়েছে। তাদের এক জনের নাম তারক ছেত্রী। সঙ্গী অজয় সাউয়ের নামেও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কাছে ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তারক মাসখানেক আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তার পরেই ফের এক ব্যবসায়ীর কাছে টাকা চেয়ে হুমকি দিয়েছিল সে। বেশ কয়েক বার ওই ব্যবসায়ীকে ধমকেওছিল। এর পরে যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানান ওই ব্যবসায়ী। দুষ্কৃতীদের সরাসরি ধরতে না গিয়ে অন্য পথে হাঁটেন যাদবপুর থানার অতিরিক্ত ওসি দেবাশিস দত্ত। তাদের ধরতে রীতিমতো ফাঁদ পাতেন তিনি। সেই ফাঁদে পা দেয় দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে তারককে ফোন করা হয়। তাকে বলা হয়, যে ব্যবসায়ীর থেকে সে টাকা চেয়েছে, তিনি টাকা দিতে চান। মঙ্গলবার দুপুরে গল্ফ গ্রিনে এসে সেই টাকা নিয়ে যেতে বলা হয়। এতে রাজিও হয়ে যায় তারক। পরিকল্পনা মতোই এ দিন সাউথ সিটির কাছে টাকা নিতে আসে তারক ও অজয়। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন যাদবপুর থানার অতিরিক্ত অফিসার ইন-চার্জ দেবাশিস দত্ত ও সাব ইনস্পেক্টর সুমন বিশ্বাস।
পুলিশের গাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই তারক ট্যাক্সি নিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কোনও ভাবে সে আঁচ করেছিল ওই চত্বরেই পুলিশ রয়েছে। বেগতিক বুঝে লর্ডসের মোড় থেকে বাজার এলাকার দিকে যেতে শুরু করে তারকের ট্যাক্সি। পুলিশের গাড়িও পিছু নেয়। চালকের আসনে ছিলেন খোদ দেবাশিস দত্ত। পিছনের গাড়িটি দেখে তখন তারক ও অজয়ও প্রায় নিশ্চিত, পিছনে পুলিশ রয়েছে। গাড়ির গতি বাড়াতে থাকে তারা। উদয়শঙ্কর সরণির কাছে তাদের ট্যাক্সির পথ আটকায় পুলিশের গাড়ি। তখন ট্যাক্সি থেকে নেমে ফের লর্ডসের মোড়ের দিকে দৌড়তে থাকে তারক ও অজয়। পিছনে বন্দুক উঁচিয়ে পুলিশও।
শেষমেশ প্রায় পাঁচশো মিটার ছুটে তারক ও অজয়কে ধরে ফেলেন দেবাশিস ও সুমন। তাদের তল্লাশি করে মেলে ক্ষুর, দেশি পিস্তল, কার্তুজ। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হেয়ার স্ট্রিট ও লেক থানায় তারকের নামে ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে তোলাবাজি ও খুনের অভিযোগও। অস্ত্র আইনে ও তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তারক ও অজয়কে।