শিল্পাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াল দুষ্কৃতীরা

তোলা চেয়ে বোমা-গুলি, জখম দুই

মঙ্গলবার ভরদুপুরে প্রায় দশ মিনিটের এই দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে ভয়ে কাঁটা হয়ে রইলেন কামারহাটির নওদাপাড়ার উত্তরায়ন সরণির বাসিন্দারা। পুলিশ জানায়, ওই দোকানের মালিক গৌরাঙ্গবাবু এবং তাঁর কাছে টাকা নিতে আসা ইট ব্যবসায়ী রঞ্জিত সিংহ গুলিতে জখম হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৬
Share:

হাসপাতালে আনা হয়েছে ব্যারাকপুরে গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী শেখ চাঁদুকে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বেলা ১২টা সবে পেরিয়েছে। হঠাৎ স্বামীর আর্ত চিৎকার শুনে বাড়ির বারান্দায় বেরিয়ে এসেছিলেন স্ত্রী। সঙ্গে মেয়ে। তাঁরা দেখলেন, বাড়ির উল্টো দিকে তাঁদের ইমারতি দ্রব্যের দোকানের বারান্দায় রক্তাক্ত অবস্থায় বসে ওই মহিলার স্বামী গৌরাঙ্গ গুহ। দোকান ঘিরে এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে চার যুবক। পড়ছে বোমাও। আর ওই ব্যক্তি চিৎকার করে বলছেন, ‘‘ডাকাত পড়েছে! তোমরা ঘরে ঢুকে যাও। দরজা বন্ধ করে দাও।’’

Advertisement

মঙ্গলবার ভরদুপুরে প্রায় দশ মিনিটের এই দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে ভয়ে কাঁটা হয়ে রইলেন কামারহাটির নওদাপাড়ার উত্তরায়ন সরণির বাসিন্দারা। পুলিশ জানায়, ওই দোকানের মালিক গৌরাঙ্গবাবু এবং তাঁর কাছে টাকা নিতে আসা ইট ব্যবসায়ী রঞ্জিত সিংহ গুলিতে জখম হয়েছেন। দু’জনই বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলি রঞ্জিতবাবুর পিঠের বাঁ দিক দিয়ে পাঁজরে ঢুকে হার্টের কিছুটা দূরে আটকে গিয়েছে। আর গৌরাঙ্গবাবুর বাঁ পায়ের নীচে গুলি লেগেছে।

কামারহাটি পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডে উত্তরায়ন সরণির বেণীর মাঠ এলাকা খুব ঘিঞ্জি পাড়া। বড় রাস্তার উপরেই গৌরাঙ্গবাবুর দোকান ও গুদাম। তার গা ঘেঁষে থাকা দেড়শো মিটার লম্বা গলির শেষ প্রান্তে রয়েছে প্রায় ১২ ফুটের পাঁচিল। স্থানীয়রা পুলিশকে জানান, কালো গেঞ্জি-প্যান্ট পরা বছর কুড়ি-বাইশের ওই চার দুষ্কৃতীর মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। ঘটনার কিছু ক্ষণ আগে তারা ওই পাঁচিল টপকে আসার সময়ে কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা বারণ করেছিলেন। তখন তারা বলেছিল, ‘‘কোনও সমস্যা নেই। আমরা এমনিই যাচ্ছি।’’ তাণ্ডবের পরে ওই গলি দিয়ে একই ভাবে পাঁচিল টপকে চলে যায় তারা।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, নিশ্চিন্তে হেঁটে এসে ঘিঞ্জি এলাকার দোকানে তাণ্ডব করার সাহস পেল কী করে ওই দুষ্কৃতীরা? ঘটনার পরে এলাকায় বসেছে পুলিশ পাহারা। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার রাজেশকুমার সিংহ বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা স্থানীয়, না বাইরের, তা স্পষ্ট নয়। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে।’’

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাসিন্দারা আতঙ্কিত। গলিতে দোকানের সামনে বোমার দাগ। গৌরাঙ্গবাবুর পরিজনেরা জানান, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা করলেও কখনও এমন সমস্যা হয়নি। কেউ টাকাও চায়নি। সম্প্রতি প্রোমোটিংয়ের কাজও শুরু করেছেন গৌরাঙ্গবাবু। তাঁর মেয়ে নবনীতা পাল জানান, প্রতি মঙ্গলবারের মতো এ দিনও ইট সরবরাহের টাকা নিতে নিজেই গাড়ি চালিয়ে এসেছিলেন বারাসতের নীলগঞ্জের বাসিন্দা রঞ্জিতবাবু। দু’জনে মিলে দোকানে বসে কথাবার্তা বলছিলেন। তখনই গৌরাঙ্গবাবু ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে চিৎকার শুরু করেন। স্ত্রী শঙ্করীদেবী বলেন, ‘‘ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে দেখি, বোমা-গুলির বৃষ্টি। তাই রাস্তায় নামতে পারিনি। দুষ্কৃতীরা চলে যেতে দোকানে গিয়ে দেখি, দু’জনই রক্তে ভাসছেন।’’ এর পরে রঞ্জিতবাবুর গাড়িতে চাপিয়েই দু’জনকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।তার পর বাইপাসের হাসপাতালে।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ওই চার দু‌ষ্কৃতী দোকানে ঢুকে মোটা টাকা ‘তোলা’ চাইলে দু’জনেই দিতে অস্বীকার করেন। তখন এক দুষ্কৃতী গুলি চালাতেই তাকে ধরে ফেলেন রঞ্জিতবাবুরা। এর পরে বাকিরা এসে তাণ্ডব শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দা মণিদীপা নাথ বলেন, ‘‘আচমকা গুলির শব্দ শুনে ভয়ে জানলা বন্ধ করতে গিয়ে দেখি, চার দিক বোমার ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছিল।’’

পুলিশ কমিশনার জানান, রঞ্জিতবাবু যে প্রতি মঙ্গলবার আসেন, তা জানত দুষ্কৃতীরা। তিনি বলেন, ‘‘আঘাত করে টাকা ছিনতাই, না ছিনতাই করার জন্য আঘাত করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন