দুই যাত্রায় একই ফল, বলি শিশুরা

এ যেন ঝুঁকি নেওয়ার প্রতিযোগিতা! প্রায় একই রকম দু’টি দুর্ঘটনা। এবং দু’টি ক্ষেত্রেই বড়দের অসচেতনতার মাসুল নিজেদের প্রাণ দিয়ে গুনল দু’টি শিশু। এক জনের বয়স ছয়, অন্য জনের আট। শনিবার সকালে একটি ঘটনা ঘটেছে মহাত্মা গাঁধী রোডে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০১:০৯
Share:

তিথি গুপ্ত।

এ যেন ঝুঁকি নেওয়ার প্রতিযোগিতা! প্রায় একই রকম দু’টি দুর্ঘটনা। এবং দু’টি ক্ষেত্রেই বড়দের অসচেতনতার মাসুল নিজেদের প্রাণ দিয়ে গুনল দু’টি শিশু। এক জনের বয়স ছয়, অন্য জনের আট। শনিবার সকালে একটি ঘটনা ঘটেছে মহাত্মা গাঁধী রোডে। অন্য ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে, তারাতলার কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’টি ঘটনাতেই ছোটদের মাথায় হেলমেট পরানোর প্রয়োজন মনে করেননি তাদের অভিভাবকেরা।

Advertisement

শনিবার সকালের ঘটনায় গোটা পরিবার চেপেছিল মোটরবাইকে। বাবা, মা আর দুই মেয়ে। বড়দের মাথায় ছিল হেলমেট। দুই মেয়ে খোলা মাথায়। মহাত্মা গাঁধী রোডে বাইকের চাকা ট্রামলাইনে পড়তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চার জন ছিটকে রাস্তায় পড়েন। তখন পিছন থেকে একটি বাস এসে পিষে দেয় ছোট মেয়েটিকে। তার পরে আর চোখ খোলেনি ছ’বছরের শিশুটি।

পুলিশ সূত্রের খবর, হাওড়ায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সপরিবার যাচ্ছিলেন বেলেঘাটার মনোজ গুপ্ত। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটি সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইকের উপরে পড়ে যায়। তখন টাল সামলাতে না পেরে মোটরবাইকের চাকা ট্রামলাইনের উঠে পড়াতেই বিপত্তি ঘটে। পিছন থেকে আসা হাওড়ামুখী একটি বাস মনোজবাবুর ছোট মেয়ে তিথিকে পিষে দিয়ে চলে যায়। শিশুটিকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

তিথির বাবার আক্ষেপ, ‘‘সাইকেলটি আমার উপরে না পড়লে এটা ঘটত না।’’ মনোজবাবু সাইকেলকে দায়ী করলেও পুলিশের বক্তব্য, মোটরবাইকে চার জন থাকায় মনোজবাবু টাল সামলাতে পারেননি। তার উপরে শিশুটির মাথায় হেলমেটও ছিল না। এক পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ‘‘মানুষ সচেতন না হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে না।’’ এ দিন ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘দিনের ব্যস্ত সময়ে এই রাস্তায় সাইকেল বা রিকশা চালানো নিষিদ্ধ। তা-ও পুলিশের সামনেই সবাই আইন ভাঙছে।’’ এ দিন দুর্ঘটনার পরে পুলিশ বাসটিকে আটক করে। গ্রেফতার হয়েছেন বাসের চালক।

অন্য দিকে, রাত দশটা নাগাদ মোটরবাইকে চেপে ফেরার পথে একটি ট্যাঙ্কার ধাক্কা মারলে তার চাকায় পিষে মৃত্যু হয় আট বছরের এক শিশুর। এ ক্ষেত্রেও যথারীতি শিশুটির মাথায় হেলমেট ছিল না। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম তুহিনা রায় (৮)।

শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে তারাতলার কাছে। পুলিশ জানায়, পর্ণশ্রীতে মামার বাড়ি থেকে বাইকে চেপে তুহিনা-সহ চার জন বরাহনগরে ফিরছিলেন। কাকার মোটরবাইকের পিছনে ছিল তুহিনা। সঙ্গে মা ও দিদি। পুলিশ জানিয়েছে, তারাতলার কাছে বজবজের দিক থেকে আসা একটি ট্যাঙ্কার ধাক্কা মারে ওই মোটরবাইকে। রাস্তা খারাপ থাকায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি বাইকের চালক। সকলেই রাস্তায় পড়ে যান। ট্যাঙ্কারের চাকায় পিষে যায় তুহিনা। এসএসকেএমে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি তিন জন জখম হয়েছেন। ট্যাঙ্কারচালক শিবকুমারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রাজ্য জুড়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার চলছে। বাইক আরোহীদের মাথায় হেলমেট না থাকাটাও যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ— তারও প্রচার চলছে। কিন্তু, মানুষের হুঁশ ফিরছে কই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন