Jewellery

কোভিড-দেহ সৎকারে ছ’মাসে আরও দুই চুল্লি

অনেকেরই অভিযোগ, মৃতের পরিবারকে সব কিছু খোলাখুলি না জানানোর ফলেই বাড়ে বিভ্রান্তি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২০ ০৬:৪৯
Share:

করোনায় কারও মৃত্যু হলে মৃতের পরিবারকে সরকারি ফর্মে সই করে লিখতে হয়, দেহ পাওয়ার দাবি জানাচ্ছে না তারা। কিন্তু সেই দেহ নিয়ে এর পরে কী হয়? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খায় পরিজনদের মনে।

Advertisement

অনেকেরই অভিযোগ, মৃতের পরিবারকে সব কিছু খোলাখুলি না জানানোর ফলেই বাড়ে বিভ্রান্তি।

বর্তমানে শহরের দু’টি জায়গায় করোনায় মৃতদের শেষকৃত্য হয়। দাহ করার হলে ধাপায়, বেওয়ারিশ দেহ সৎকারের দু’টি পুরনো বৈদ্যুতিক চুল্লিতে। আর কবরস্থ করতে হলে কাঁকুড়গাছি কবরস্থানে। ধাপার ওই জায়গাটি পুরসভার সাত নম্বর বরোয়। তপসিয়ায় ওই বরোর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসেই দাহকাজ সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট নেওয়া হয়। কাঁকুড়গাছি কবরস্থানের রিপোর্ট সরাসরি যায় পুর স্বাস্থ্য বিভাগে। হাসপাতালগুলি জানাচ্ছে, পরিবার ফর্মে সই করে দিলে দেহ নিয়ে যেতে পুলিশ ও পুরসভাকে জানানো হয়। খবর যায় স্বাস্থ্য দফতরেও। পুলিশ গ্রিন করিডর তৈরি করে দেয় শববাহী গাড়ির জন্য।

Advertisement

সম্প্রতি ধাপার ওই শ্মশানে যেতে গিয়ে দেখা গেল, বাইপাস থেকে সে দিকে যাওয়ার রাস্তার মুখেই পুলিশ চৌকি। রয়েছে সিসি ক্যামেরাও। পুরসভার জঞ্জালের গাড়ি আর শববাহী গাড়ি ছাড়া প্রবেশাধিকার নেই কারও। তবে কাছেই জনবসতি থাকায় ওই বাসিন্দাদের ছাড় রয়েছে। কোনও মতে ভিতরে গিয়ে ফের থামতে হল চুল্লির প্রায় ৫০০ মিটার দূরে। দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। প্লাস্টিকের বোতল, সাইকেলের টায়ার, ভাঙা কাচের পাত্র, ছেঁড়া টেডি বিয়ার— কী নেই সেখানে! ওই জায়গাতেই করোনার দেহ নামিয়ে চলে যেতে হয় গাড়িচালকদের।

সেখানেই দেখা মিলল পিপিই পরা এক ব্যক্তির। অচেনা লোক দেখে থমকে দাঁড়ালেন। একটু পরেই বেরিয়ে এলেন আরও এক জন। নিজেকে প্রধান ডোম দাবি করে বললেন, “নাম বলতে পারব না। যা বলার এখনই বলুন। সন্ধ্যা ৭টা-৮টার পরে আর সময় থাকে না।”

কেন? জানালেন, দিনভর পুরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ চলে সেখানে। সন্ধ্যায় ওই কর্মীরা চলে গেলে শুরু হয় দাহকাজ। তাঁর দাবি, “হাসপাতালগুলিকেও বলা আছে, সন্ধ্যার পরে দেহ পাঠাতে। তবু চলে এলে আমাদেরই কেউ গিয়ে দেহ ভিতরে এনে রাখে। প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থাতেই সৎকার হয় দেহের।”

দূর থেকে একটি চিমনি দেখিয়ে ওই ব্যক্তি জানান, দু’টি চুল্লির সঙ্গে লাগানো ওই চিমনি দিয়েই ধোঁয়া বেরিয়ে যায়। ওই চুল্লির কাছেই দু’টি ঘর রয়েছে। একটিতে দেহ এনে রাখা হয়। পাশেরটায় তাঁদের থাকার ব্যবস্থা। কিছুটা দূরে আরও দু’টি চুল্লি তৈরি হচ্ছে। পরে বললেন, “দুটো চুল্লিতে হয় নাকি! এখনও বেশ কিছু সৎকার বাকি।”

আরও পড়ুন: ৫০ কোটি টাকা পাচারের ভুয়ো খবর ট্র্যাফিককে

কতগুলো? উত্তর মেলে না। কাঁকুড়গাছির কবরস্থানের নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে অবশ্য ভিতরে যাওয়া যায়নি সে দিন।

সৎকার না-হওয়া কতগুলি দেহ জমে রয়েছে? উত্তর দেননি পুর প্রশাসনের কেউই। সাত নম্বর বরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর জীবন সাহা বলেন, “ওখানে আমি কখনও যাইনি।” স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষও স্পষ্ট উত্তর দেননি। বললেন, “জায়গাটা ভাল করে সাজানো হবে। ছ’মাসে নতুন দু’টি চুল্লিও তৈরি হয়ে যাবে।” কিন্তু করোনায় মৃতদের দেহ নিয়ে এত গোপনীয়তা কেন? অতীনের দাবি, “গোপনীয়তার ব্যাপার নেই। করোনা শ্মশানে কারও যাওয়া নিরাপদ নয়।” ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর স্বপন সমাদ্দার বলেন, “সরকারকে চিঠি লিখলে সৎকার দেখতে দেয় শুনেছি। কিন্তু সময় লাগে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন