নিউটাউনের দুই ‘সিন্ডিকেট-মাফিয়া’, ভজাই ও হায়দরকে বুধবার সকালে গ্রেফতার করে বিধাননগর পুলিশ। বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই দু’জনকে পাকড়াও করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, দু’জনকেই অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনের কাছ থেকেই আটক করা হয়েছে একটি করে রিভলভার ও কয়েক রাউন্ড করে গুলি। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ভজাই যদি হন বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ, তা হলে হায়দরের পাশে রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ। তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে যাঁদের সম্পর্ক এখন কার্যত সাপে-নেউলে বলেই সবাই বলে থাকেন।
কিন্তু ভজাই বা হায়দরের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ তো নতুন নয়। তা হলে হঠাৎ এই ধরপাকড় কেন?
পুলিশের একাংশ বলছে, বাম আমলে শুরু হওয়া সিন্ডিকেট অসুখ এখন দগদগে পচা ঘা-য়ে পরিণত হয়েছে। হাজার চেষ্টা করেও সেই ঘায়ের দুর্গন্ধ আর ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তা বারবার ঠেলে বেরিয়ে আসছে। তার জেরে মারামারি, খুন-জখম সবই চলছে প্রকাশ্যে। শুধু নিউটাউনেই নয়, রাজ্যের সর্বত্রই এই গোষ্ঠীসংঘর্ষ কোথাও বালি খাদান নিয়ে কোথাও বা ইমারতি মালপত্র সরবরাহ নিয়ে প্রকাশ্যে আসছে।
নিউটাউন এলাকার বাসিন্দাদারা জানান, বাম আমলে নিউটাউন, থাকদাঁড়ি এলাকায় গজিয়ে ওঠা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ছিল গৌরের হাতে। তার শাগরেদ ছিল রুইস-ভজাই। এক সময় গৌরের সঙ্গে রুইসের গোলমালে ভাগ হয়ে যায় দল, এলাকা। বামেরা শক্তি হারাতেই এলাকা দখল শুরু করেন তৃণমূল নেতারা। পালাবদলের আগেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন ভজাই। গৌরের বদলে হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন এলাকার ‘দাদা’। ফলে সিন্ডিকেটের বেশির ভাগটাই ভজাইয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বিধাননগরের এক পুলিশকর্তার কথায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে নিউ টাউনে গোলমাল বেধেছিল ভজাই ও হায়দর গোষ্ঠীর। তাতেই বোঝা গিয়েছিল, ভজাইয়ের সঙ্গে টক্কর দিতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে হায়দররা।
ভজাই এবং হায়দরদের নিয়ে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সম্পর্কে কী বলছেন এলাকার বিধায়ক ও সাংসদ? এ দিন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের কোনও গোষ্ঠী নেই। আমাদের একটাই ছাতা, তৃণমূল কংগ্রেস। এক জনই নেত্রী, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ আর সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বক্তব্য, ‘‘এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসন যথাযথ কাজ করেছে।’’