UGC

বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার ও যন্ত্র মিলবে ‘ভাড়ায়’!

ইউজিসি-র সচিব রজনীশ জৈনের তরফে উপাচার্যদের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, এই ব্যবস্থা চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু আয় হবে।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫২
Share:

ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নতুন নির্দেশ। ফাইল চিত্র।

অর্থসাহায্যের ক্ষেত্রে কার্পণ্য, অথচ ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পরের পর নির্দেশ দিয়েই চলেছে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ। ইউজিসি-র নবতর নির্দেশ, এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার, গবেষণাগার ও যন্ত্রপাতি অন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা ব্যবহার করতে পারবেন। দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশ পাঠিয়ে ইউজিসি বলেছে, গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার ব্যবহার করতে দেওয়ার বিনিময়ে কিছু অর্থ নেওয়া যাবে। শিক্ষা মহলের একাংশের প্রশ্ন, আর্থিক সাহায্যের বদলে এ ভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার কার্যত ‘ভাড়া’ দেওয়ার নির্দেশ কেন?

Advertisement

ইউজিসি-র সচিব রজনীশ জৈনের তরফে উপাচার্যদের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, এই ব্যবস্থা চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু আয় হবে। অন্য দিকে, যে-সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সব সুবিধা যথাযথ নয়, সেখানকার পড়ুয়া ও গবেষকেরা এগুলি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। বলা হয়েছে, যন্ত্রপাতি বা গ্রন্থাগার ব্যবহারের অগ্রাধিকার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও গবেষকদেরই।

শিক্ষা জগতের একাংশের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো দেখাশোনা বা সংস্কারের অর্থের জোগান যথেষ্ট নয়। এমন সময়ে এই নির্দেশ কতটা বাস্তবসম্মত? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চরম অর্থকষ্টে ভুগছে। উপাচার্য সাহায্যের আবেদন করেছেন প্রাক্তনীদের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় সোমবার বলেন, ‘‘ইউজিসি এক দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে টাকা দিচ্ছে না। অন্য দিকে, নিত্য দিন নতুন নতুন নির্দেশের ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসাবে ব্যবহার করছে।’’ তাঁর অভিযোগ ও প্রশ্ন, রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম অচল হয়ে পড়ছে। তারা কী ভাবে সেগুলি অন্যদের ব্যবহার করতে দেবে? তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের বক্তব্য, বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি তুলনায় নতুন বা ছোট প্রতিষ্ঠানকে পরিকাঠামোগত সাহায্য করে, সেটা খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাঁর কথায়, ‘‘নীতিগত ভাবে আমি এটা সমর্থন করি।’’

Advertisement

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সভানেত্রী মহালয়া চট্টোপাধ্যায় এবং সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিজ্ঞান গবেষণার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম বণ্টনে বিপুল অসাম্য আছে। উচ্চ মানের যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য রাজ্য সরকার-পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কর্মচারী দেওয়া হয় না। গবেষকেরাই চালান। অন্য প্রতিষ্ঠানকে পরিষেবা দিতে গেলে তাঁরা নিজেদের কাজ করবেন কখন?

দ্বিতীয় অভিযোগ, বিভিন্ন প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ পাওয়া যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে যন্ত্র ক্রয়ে যতটা আগ্ৰহী, তার রক্ষণাবেক্ষণে ততটা নয়। তৃতীয়ত, যন্ত্রপাতির বেশির ভাগই বিদেশ থেকে কিনতে হয়। যন্ত্রাংশ এ দেশে পাওয়া যায় না। ফলত, অনেক যন্ত্র বেশ কিছুটা সময় খারাপ হয়ে থাকে। তাই অন্য প্রতিষ্ঠানকে আদৌ কতটা সাহায্য করা যাবে, সেই সংশয় থাকছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন