মৃত্যু এখনও থামাতে পারেনি শব্দবাজির দাপট

বন্দর লাগোয়া রবীন্দ্রনগর ডি ব্লকের একতলা বাড়ি, ‘একটুকু বাসা’। বাড়ির নাম দিয়েছিলেন স্বপ্নাদেবীর স্বামী পীযূষকান্তি। স্বামীর ছবির সামনে বসে স্বপ্না বলছিলেন ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবরের কথা। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়ির পাশে এক নাগাড়ে শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছিল।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২০
Share:

প্রয়াত পীযূষকান্তি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না সরকার। নিজস্ব চিত্র

সাত বছর পরেও এক কালীপুজোর রাতের স্মৃতি তাড়া করে ফেরে তাঁকে। আর এ বছর পাঁচ মাসের নাতির কথা ভেবে বুক কাঁপছে ষাটোর্ধ্ব স্বপ্না সরকারের।

Advertisement

বন্দর লাগোয়া রবীন্দ্রনগর ডি ব্লকের একতলা বাড়ি, ‘একটুকু বাসা’। বাড়ির নাম দিয়েছিলেন স্বপ্নাদেবীর স্বামী পীযূষকান্তি। স্বামীর ছবির সামনে বসে স্বপ্না বলছিলেন ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবরের কথা। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়ির পাশে এক নাগাড়ে শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছিল। হৃদ্‌রোগী পীযূষবাবু অসুস্থ বোধ করছিলেন। বাড়ির বারান্দা থেকে একাধিক বার অনুনয় করলেও বাজি ফাটানো থামেনি। নিরুপায় হয়ে এক প্রতিবেশী বন্ধুকে নিয়ে পীযূষবাবু রবীন্দ্রনগর থানায় মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন। থানার অফিসাররা পীযূষবাবুকে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি পীযূষবাবু।

স্বপ্নাদেবী জানান, থানা থেকে বাড়ি আসার পথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৭৪ বছরের বৃদ্ধ। প্রতিবেশী বন্ধু অটোয় পীযূষবাবুকে বাড়ি নিয়ে আসেন। ছেলে প্রবুদ্ধ ওই অটোতেই স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবাকে। সেই রাতেই পীযূষবাবুর মৃত্যু হয়।

Advertisement

স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বপ্নাদেবী প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। তিনি বলেন, ‘‘ওরা কমবয়সি ছেলে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলে ওদের জেলে ভরে দিত। কিন্তু আমার স্বামীর মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি আশপাশের মানুষের। প্রতি বছরই শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছে। এমনকি, ওই ঘটনার পরের বছর পুলিশ এলাকায় প্রচার চালানোর পরেও শব্দবাজি ফেটেছিল। আমার নাতিটা পাঁচ মাসের। ওর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।’’

পরিস্থিতি যে বদলায়নি, তা জানালেন স্বপ্নাদেবীদের এক প্রতিবেশীও। তাঁর অভিযোগ, ২৭ অক্টোবর একাধিক বার শব্দবাজি ফাটাতে নিষেধ করার পরেও তা বন্ধ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা বাজি ফাটাচ্ছিলেন, তাঁরা সে দিন বলেছিলেন, কালীপুজোর দিন বাজি ফাটবেই। সহ্য করতে না পারলে দরজা-জানলা বন্ধ করে কানে তুলো দিয়ে বসে থাকতে হবে।’’

পীযূষবাবুর বাড়ির কাছেই কালীপুজো হয়। ওই পুজো কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘ওই মৃত্যুর পর আমরা শব্দবাজি ফাটাতে নিষেধ করি। তবুও ছেলেরা শব্দবাজি ফাটায়। কী করব বলুন! ’’

এ বছর শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ভরসা রাখছেন স্বপ্নাদেবী। তাঁর আশা, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে সক্রিয় হবে পুলিশ-প্রশাসন। যাতে ‘একটুকু বাসা’র মতো কোনও বাড়িতে কালীপুজোর রাতে আঁধার না নামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন