মনমতো মাদকে সেজে ওঠে পার্টি

মদ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে চলে অবাধ মাদক সেবনও। চরস, গাঁজা, ব্রাউন সুগার, কোকেন, এলএসডি, নেশার ট্যাবলেট — বিভিন্ন ধরনের মাদকের জোগান থাকে সেখানে। পার্টিতে এসে বিনা খরচে মদ-খাবার এবং মাদক সেবন করতে ইচ্ছুক তরুণীরাও চলে আসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৮
Share:

চলছে উদ্দাম পার্টি।—নিজস্ব চিত্র

এক রাতে পঁচিশ বা তিরিশ হাজার টাকা খরচ করতে পারলেই হল। ১০-১৫ জন সমমনস্ক মানুষকে এক জায়গায় জড়ো করে ‘পার্টি’-র আয়োজন করে দেওয়া হবে যে কোনও সময়ে। দূরে কোথাও নয়, খাস শহর কলকাতায়।

Advertisement

মদ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে চলে অবাধ মাদক সেবনও। চরস, গাঁজা, ব্রাউন সুগার, কোকেন, এলএসডি, নেশার ট্যাবলেট — বিভিন্ন ধরনের মাদকের জোগান থাকে সেখানে। পার্টিতে এসে বিনা খরচে মদ-খাবার এবং মাদক সেবন করতে ইচ্ছুক তরুণীরাও চলে আসেন। আয়োজকের যোগাযোগে থাকেন এই তরুণীর দল। কলেজপড়ুয়া ছাত্রীদেরও দেখা মেলে এই সব পার্টিতে। বড়দিন, নতুন বছরের প্রাক্কালে বেড়ে যায় পার্টির সংখ্যা। শুধু বিনা পয়সার মদ-খাবার-মাদক নয়, এই তরুণীদের টেনে আনতে পার্টির নিমন্ত্রণ যায় কিছু ‘সেলিব্রিটি’র কাছেও। শিল্প, বিনোদন বা অন্য জগতে জনা দশেক পরিচিত মুখেরা উপস্থিত থাকেন সেই পার্টিতে। যাঁদের টাকায় পার্টির আয়োজন করা হয়, তাঁদের এবং সেলিব্রিটিদের সঙ্গে তরুণীদের অবাধ মেলামেশা চলে।

হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট বা কারও বিশাল ফ্ল্যাটে সেই পার্টির আয়োজক থাকেন এক জন। বাকিরা অতিথি। এমন সব পার্টিতে মাদক সরবরাহ করেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু থাকেন অন্তরালে। পুলিশ, নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) হন্যে হয়ে খুঁজেবেড়ায় তাঁদের। শনিবার এ ভাবেই চরস-সহ ধরা পড়েছেন হেনরি লরেন্স মান্না, রবার্ট ডিক্সন এবং নিখিল লাখওয়ানি। জানা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে ডিক্সন এবং নিখিল দু’জনেই ওই সব পার্টিতে মাদক সরবরাহের কাজ করতেন। নিজেরাও নিয়মিত মাদক সেবন করতেন।

Advertisement

এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত এই দু’জনের কাছ থেকে মাদক নিতেন, তাঁদের একটা তালিকা হাতে এসেছে। আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে উচ্চ সারিতে থাকা এই শহরের বহু মানুষের নাম পাওয়া গিয়েছে সেখানে। উচ্চশিক্ষিত, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সেলিব্রিটিদের নামের সেই তালিকা থেকে কয়েক জনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথাও বলেছেন এনসিবি অফিসারেরা। শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এক-একটি পার্টিতে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম চরস লাগে। এই উচ্চপ্রতিষ্ঠিত মানুষেরাই ডিক্সন ও নিখিলের কাছ থেকে সেই চরস নিয়ে যেতেন। হাই প্রোফাইল এই সব ক্লায়েন্টদের সঙ্গে মূল যোগাযোগটা রাখতেন নিখিলই।

নিখিলদের কাছ থেকে পাওয়া এই তালিকায় অনেক কলেজ পড়ুয়ারাও আছেন বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। এনসিবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘শহরের এই সব রাত- পার্টিতে গেলে দেখা যায় স্কুল ও কলেজপ়়ড়ুয়ারা কী ভাবে অবাধে মাদক সেবন করছে।’’

দিলীপ শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘এই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের শুরুটা হয় সিগারেট, হুক্কা থেকে। এর পরেই ধীরে ধীরে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েন।’’ শহরে এত হুক্কা বার গজিয়ে উঠেছে, এগুলিতে এই স্কুল-কলেজপড়ুয়াদের ভিড়ই বেশি। যে সব প্রতিষ্ঠান থেকে এই ধরনের অভিযোগ আসছে, সেই সব স্কুল-কলেজে গিয়ে সচেতনতা শিবির করছে এনসিবি।

অধিকর্তা জানিয়েছেন, গত মাসে আসানসোলের একটি স্কুলের পাশে গজিয়ে ওঠা হুক্কা বারে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত যাতায়াতের খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে সচেতনতা শিবির করে এসেছে এনসিবি। শহর কলকাতারও বিভিন্ন স্কুলেও নিয়মিত সচেতনতার প্রচার চলছে। তবে এই বিষয়ে সেই ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকদেরই যে প্রধান ভূমিকা থাকে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন দিলীপবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন