ভাঙাচোরা গাড়ির সারি। নিউ মার্কেট থানার সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
চিত্র ১: এন্টালি থানা। সামনে সার দিয়ে দাঁড় করানো দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিত্যক্ত গাড়ি। কোনও মোটরবাইকের হেডলাইট ভাঙা, কোনও গাড়ির আবার চাকা ফেটে পড়ে রয়েছে।
চিত্র ২: প্রগতি ময়দান থানা। ছবিটা একই। থানার মধ্যে জায়গার অভাবে রাস্তার পাশেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির সারি। তোবড়ানো মোটরবাইক দীর্ঘ দিন পড়ে থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
চিত্র ৩: তালতলা থানা। সামনেই দিনের পর দিন পড়ে আছে ভাঙাচোরা গাড়ি। বৃষ্টিতে জল জমে গাড়ির চাকায় জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা।
উপরের উদাহরণগুলি নতুন নয়। শহরের অধিকাংশ থানার সামনে পড়ে থাকা দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি সরাতে কলকাতা পুরসভার তরফে দফায় দফায় নোটিস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবস্থা পাল্টায়নি। থানাগুলিতে মশার বাড়-বাড়ন্তের জন্য কলকাতার পূর্বতন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় লজ্ঝড় গাড়িগুলিকে দায়ী করেছিলেন। কলকাতা পুরসভার বর্তমান মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘থানাগুলির সামনে পুরনো গাড়ি, বাজেয়াপ্ত সামগ্রী দিনের পর দিন পড়ে থাকে। বর্ষায় জমা জলে থানা সংলগ্ন এলাকায় মশা ডিম পাড়ে। গাড়িগুলি সরাতে আমরা একাধিক বার থানাগুলিকে নোটিস দিয়েছি। কিন্তু পুলিশের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে, জায়গার অভাবে গাড়ি সরানো যাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও পুরসভার তরফে থানাগুলিতে নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’ এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘থানার সামনে পড়ে থাকা দুর্ঘটনাগ্রস্ত, বাজেয়াপ্ত গাড়ি বানতলা এবং হেস্টিংস ডাম্পিং গ্রাউন্ডে রাখা হয়। কিন্তু গাড়ির যা ভিড়, সেখানেও আর জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে থানায় গাড়ি রাখতে হচ্ছে। তবে ওই গাড়িগুলি সরাতে বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে।’’
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ৬৯টি থানার অধিকাংশেরই হাল এমনই। বেশ কিছু থানায় সাপের উপদ্রবে আতঙ্কে রয়েছেন পুলিশকর্মীরা।
তার উপরে এ বার থানার মধ্যে পরিত্যক্ত গাড়িতে মশা জন্ম নেওয়ায় নাজেহাল অবস্থা তাঁদের। কসবা থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িগুলি মশার আঁতুড়ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
শুধু তাই নয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই গাড়িগুলি পড়ে থাকায় থানার পরিবেশও হয়ে উঠছে অস্বাস্থ্যকর। এমনই এক আতঙ্কের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন প্রগতি ময়দান থানার এক পুলিশকর্মী। ওই থানার সামনে ডাঁই হয়ে থাকা লজ্ঝড়ে গাড়িগুলির মধ্যে বাসা বেঁধেছে সাপের দল। ওই পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘সাপগুলি মাঝেমধ্যেই থানায় ঢুকে পড়ে। একই সঙ্গে জন্ম নিচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা।’’ একই অভিজ্ঞতা বেহালা, পর্ণশ্রী, ঠাকুরপুকুর, মোমিনপুর, এন্টালি, তালতলা, তপসিয়া, পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশকর্মীদের। এন্টালি থানার এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘বর্ষায় থানা সংলগ্ন ব্যারাকে মশার উপদ্রব বাড়ে। গত বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ জন।’’ কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘বর্ষায় মশার ডিম পাড়ার আদর্শ জায়গা শহরের বিভিন্ন থানা সংলগ্ন এলাকা। পুরসভার তরফে থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়। জল জমা ঠেকাতে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা থানায় থানায় নিয়মিত অভিযান চালান।’’
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী, থানায় আটক হওয়া গা়ড়ির দাবিদার ৬ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজ দেখিয়ে তাঁর গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন। ছ’মাস পেরিয়ে যাওয়াপ পর ওই সব গাড়ি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সেখানেও জায়গার অভাব দেখা দিয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ-পশ্চিম) মিরাজ খালিদ বলেন, ‘‘থানাগুলিতে পড়ে থাকা পুরনো গাড়িতে বর্ষার সময়ে যাতে কোনও ভাবেই জল জমতে না পারে, সে বিষয়ে ডিভিশনের সব থানার ওসি-দের সতর্ক করা হয়েছে।’’