সিনেমার মতো পালায় ২৫ আবাসিক

তিন দশক আগের হিন্দি সিনেমা ‘ত্রিদেব’-এর এই দৃশ্য সকলেরই প্রায় জানা। কিন্তু এ বার সেলুলয়েডের পর্দায় নয়, সোমবার আড়িয়াদহের ‘ধ্রুবাশ্রম’ হোমের নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীদের এমন ভাবেই মারধর করে চম্পট দিয়েছিল ২৫ জন নাবালক আবাসিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

তিন জন ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। কিন্তু যেমন ভাবেই হোক, তাদের বেরোতে হবে। তাই পরিকল্পনা করে জেলের ভিতরেই মারামারি জুড়ে দিল ওই তিন জন। পুলিশকর্মীরা মারামারি থামাতে গেলে তাঁদেরই কাবু করে চম্পট দিল ওই তিন বন্দি!

Advertisement

তিন দশক আগের হিন্দি সিনেমা ‘ত্রিদেব’-এর এই দৃশ্য সকলেরই প্রায় জানা। কিন্তু এ বার সেলুলয়েডের পর্দায় নয়, সোমবার আড়িয়াদহের ‘ধ্রুবাশ্রম’ হোমের নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীদের এমন ভাবেই মারধর করে চম্পট দিয়েছিল ২৫ জন নাবালক আবাসিক। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাদের মধ্যে ১৩ জনকে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হোম সূত্রের খবর, ওই আবাসিকদের থেকেই জানা গিয়েছে, বহু আগে থেকেই সব পরিকল্পনা ছিল পাকা। শুধু অপেক্ষা ছিল ঠিক সময়ের। সোমবার দুপুর থেকে অশান্তির সলতে পাকানো শুরু করে ওই আবাসিকেরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তারা নিজেদের মধ্যে ব্যাপক মারপিট জুড়ে দেয়। ছুটে আসেন হোমের নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীরা। তখনই তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পরে ওই আবাসিকেরা। রক্ষীদের ব্যাপক মারধর করে হোমের গেট ভেঙে বেরিয়ে পড়ে ২৫ জন।

Advertisement

আড়িয়াদহের এই হোম রাজ্যের সমাজকল্যাণ, নারী ও শিশু দফতরের অধীনে। এখানে সাজাপ্রাপ্ত, অভিযুক্ত ও বিচারাধীন নাবালকদের রাখা হয়। আবাসিক পালানোর খবর পেয়েই ছুটে আসে বেলঘিরায় থানার পুলি‌শ। হাজির হন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পদস্থ কর্তা-সহ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক কর্তা ও সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা। ঘটনা শুনে রাতেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা।

সোমবার দফতরের তিন শীর্ষকর্তা হোমে গিয়ে আবাসিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রীকে রিপোর্ট দেন। পরে শশীদেবী বলেন, ‘‘অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুপারকে সাসপেন্ড করে কী ভাবে, কেন এমন ঘটল— তার কারণ লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে।’’

দফতর সূত্রের খবর, তদন্ত কমিটির কর্তাদের কাছে আবাসিকেরা মূলত অভিযোগ করেছে, নৈহাটি-ভাটপাড়ার কিছু কুখ্যাত দুষ্কৃতী বয়স ভাঁড়িয়ে হোমে থেকে রীতিমতো ‘মস্তানি’ চালাচ্ছে। প্রায়ই খাবার খেতে না দেওয়া, মারধর করা— সবই করে ওই দুষ্কৃতীরা। নিজেদের ইচ্ছা মতো তারা হোমের বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করে আসে। আবাসিকদের আরও অভিযোগ, প্রতিবাদ করলে হোমের কর্মীদের হুমকির মুখে পড়তে হয়। সব জেনেও নির্বিকার হোমের সুপার সুব্রত দাস। তিনি নিয়মিত হোমেও আসেন না।

সোমবার ওই ঘটনার পরেই বেলঘরিয়া, দক্ষিণেশ্বর, কামারহাটি, দমদম সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ শুরু করে পুলিশ। জানানো হয় রাজ্যের সব থানাকে। হোম সূত্রের খবর, ওই ২৫ জনের মধ্যে যেমন খুন, ছিনতাই, ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আসামি রয়েছে, তেমন রয়েছে বাংলাদেশিও। নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করে পালানোর বিষয়ে বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগও দায়ের করেন হোম কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতেই বেলঘরিয়া স্টেশন ও দক্ষিণেশ্বর থেকে সাত আবাসিককে উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ বিমানবন্দর থানার নারায়ণপুরের বাবলাতলায় ছয় কিশোরকে সন্দেহজনক ভাবে ঘুরতে দেখে তাদের ধরে পুলিশ। জেরায় জানা
যায়, তারা ‘ধ্রুবাশ্রম’-এর বাসিন্দা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন