হাত পুড়ছে ভাইফোঁটায় পাত পেড়ে খাওয়াতেও

উত্তর থেকে দক্ষিণ— কলকাতার প্রায় সব বাজারেই মাছ থেকে আনাজের দাম লাগামছাড়া। বিক্রেতাদের বক্তব্য, পাইকারি বাজারে আনাজের জোগান কম। তা-ই বাজার আগুন।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

পুজোর আগে থাকতেই আনাজের দাম চড়ছিল। অষ্টমী, নবমীর ভোগ রান্না করতে গিয়ে চড়া দামেই আনাজ কিনতে হয়েছিল সবাইকে। আর লক্ষ্মীপুজোয় বাজারদর দেখে চোখ কপালে উঠেছিল আমজনতার।
আজ, শনিবার ভাইফোঁটার দিনেও থলি হাতে আগুন-বাজারেই ঢুকতে হবে বাঙালিকে।

Advertisement

উত্তর থেকে দক্ষিণ— কলকাতার প্রায় সব বাজারেই মাছ থেকে আনাজের দাম লাগামছাড়া। বিক্রেতাদের বক্তব্য, পাইকারি বাজারে আনাজের জোগান কম। তা-ই বাজার আগুন। অন্য দিকে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, যে কোনও উৎসবের আগেই বাজারে আনাজের দাম বেড়ে যায় কী করে? তাঁদের অভিযোগ, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম ভাবে আনাজের দাম বাড়িয়ে ফাটকা মুনাফা ঘরে তোলেন।
তবে বৃষ্টির খামখেয়ালিপনা ও কালীপুজোর চাঁদার জুলুমের কারণে গত কয়েক দিন ধরেই পাইকারি বাজারগুলিতে আনাজের জোগান কমে গিয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় আনাজে বেশ কিছুটা টান।

আনাজের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার কোলে মার্কেটের চিফ সুপারভাইজার উত্তম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, পাইকারি বাজারে দামের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। যাঁর কাছে আনাজ আছে, তিনিই দাম ঠিক করছেন। সেই দামেই জিনিস কিনতে হচ্ছে। দর কষাকষির সুযোগ নেই। এক জন না কিনলে, অন্য জন কিনছেন। ফলে খুচরো বাজারেও দাম বাড়ছে।

Advertisement

কৃষি বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, এ বছর গত এক মাস ধরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। তার সঙ্গে রয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। ফলে একটু আগে থেকেই যে সব চাষি শীতের আনাজ লাগিয়েছিলেন, তাঁদের ফলন কিছুটা মার খেয়েছে। আনাজের খেতে জল জমে যাওয়ায়, গাছ পচে গিয়ে ফুল ঝরে যাচ্ছে। আনাজও দ্রুত বাড়ছে না।

শুক্রবার কলকাতার বাজারগুলিতে ঝিঙে, পটল, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যাটো— সব কিছুরই দাম ছিল বেশ চড়া। মোটামুটি ভাল ছোট ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকা কেজি, টম্যাটো ৮০ টাকা, ভাল বেগুন ৮০ টাকা, ভাল মানের ঝিঙে-পটলও ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত এক মাস ধরে লঙ্কার দাম চলছে ১৫০ টাকা কেজি। হঠাৎ করে ধনেপাতা ৫০০ টাকা কেজি হয়ে গিয়েছে। শহরের বাজারগুলিতে এখন ওজনে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে। নতুন সিম ১৫০-২০০ টাকা কেজি। দাম বেড়েছে ক্যাপসিকাম, গাজর, বিন-সহ অন্য আনাজেরও। লাল পেঁয়াজের দামও ৫০ টাকা কেজিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাজারে গিয়ে কার্যত নাকানি-চোবানি খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাধ্য হয়েই কাটছাঁট করতে হচ্ছে বাজেটের।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, টানা এক মাস ধরে চড়া দামে তাঁদের দৈনন্দিন বাজার করতে হচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের টাস্ক ফোর্স আছে ঠিকই। কিন্তু তাদের ভূমিকা কী, তাঁরা বুঝতে পারেন না। মাস মাইনেতে সংসার চালাতে গিয়ে তাঁরা হিমসিম খাচ্ছেন।

বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে মেনে নিয়েছেন, আনাজের দাম বেশ চড়া। সাধারণ মানুষের তাতে অসুবিধাও হচ্ছে। বিষয়টি তাঁরা কৃষি দফতর-সহ এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চকে জানিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, অত্যধিক বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফলন মার খাচ্ছে। ফলে জোগানও কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন