প্রতীকী ছবি।
সম্পত্তিকর আদায়ে নয়া পদ্ধতি ‘ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট’ কলকাতায় চালু হয়েছে ৮ মাস আগে। সেই পদ্ধতি প্রয়োগে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারও চালিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৮ মাসে মোট করদাতার মাত্র ৬ শতাংশ সাড়া দিয়েছেন। যা দেখে চোখ কপালে উঠেছে পুরবোর্ডের কর্তাদের।
অথচ সকলের ভাল হবে, এই বুঝিয়েই নতুন পদ্ধতি চালু করেছিল পুর প্রশাসন। তা হলে নতুন পদ্ধতিতে যেতে কেন অনীহা করদাতাদের? এই প্রশ্ন এখন ভাবাচ্ছে পুরকর্তাদের। মঙ্গলবার পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের পদস্থ অফিসার-সহ পুর কমিশনার খলিল আহমেদ এবং কর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনারকে নিয়ে বৈঠক করেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পুরসভা সূত্রের খবর, ইউনিট এরিয়া পদ্ধতিতে করদাতাদের কী ভাবে টানা যায় তার পথ খুঁজতে বলা হয়েছে কর মূল্যায়ন দফতরকে।
বর্তমানে কলকাতা শহরে করদাতার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার করদাতা নতুন পদ্ধতিতে কর দেওয়ার জন্য আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন। পুরসভার এক আমলার কথায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে যাঁদের কর কমেছে তাঁরাই ওই আবেদন করেছেন। আর যাঁদের কর বেড়েছে তাঁরা পুরনো পদ্ধতিতেই সম্পত্তিকর দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের এক আধিকারিক জানান, নতুন পদ্ধতি চালু করার আগেই জানানো হয়েছিল যে সম্পত্তিকর আদায়ের ক্ষেত্রে পুর আইন সংশোধন করে ‘ক্যাপ ইন’ চালু করা হচ্ছে। অর্থাৎ, কারও সম্পত্তিকর ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হলে তাঁকে দিতে হবে বর্তমান করের থেকে ২০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ ১২০ টাকা। ২০০ টাকা দিতে হবে না। তেমনই কারও কর ১০০ টাকা থেকে কমে ৫০ টাকা হলে সে ক্ষেত্রে কমানো হবে ১০০ টাকার ২০ শতাংশ, অর্থাৎ ৮০ টাকা। ৫০ টাকা নয়। পুরকর্তাদের ধারণা হয়েছিল ক্যাপ ইনের ব্যবস্থা থাকায় অনেকেই তা মেনে নেবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টোটাই হয়েছে। উত্তর কলকাতার হাতিবাগান, বাগবাজার, গিরিশ পার্ক এলাকার অনেকের অভিযোগ, নতুন কর কাঠামোয় তাঁদের সম্পত্তিকর এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। উত্তর কলকাতার এক বাসিন্দা জানান, পুরনো পদ্ধতিতে তাঁর বাড়ির বার্ষিক মূল্যায়ন ছিল ৪ লক্ষ টাকা। ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্টে তা হয়েছে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা। আর করের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লক্ষ টাকা। বার্ষিক মূল্যায়ন প্রায় ৯ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই সম্পত্তির মালিক আর নতুন পদ্ধতির জন্য আবেদন করেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখন পুর প্রশাসন ক্যাপ ইন চালু করে মাত্র ২০ শতাংশ কর বৃদ্ধির কথা বলছেন। কিন্তু ক্যাপ ইন প্রথা কি বরাবর চলবে? এর কোনও জবাব পুরসভা থেকে পাচ্ছি না।’’ ওই ব্যক্তির আশঙ্কা, এক বার নতুন কাঠামোয় আবেদন করলে পুরো রেকর্ড পুরসভার হাতে চলে যাবে। পরে ক্যাপ ইন তুলে দিলে করের বোঝা বরাবরের জন্য অনেকটাই বেড়ে যাবে। যা তাঁর পক্ষে দেওয়া অসম্ভব বলেই জানান তিনি। তাঁর মতো অনেকেই এ কারণে নতুন পদ্ধতিতে যেতে নারাজ বলে জানাচ্ছেন। পুরসভার কর দফতরের হিসেবে, এতে কর আদায় ধাক্কা খাচ্ছে। টান পড়ছে পুরসভার রাজস্বের ভাঁড়ারে।
ক্যাপ ইন কি পরে উঠে যাবে? প্রশ্ন করা হয়েছিল পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের এক অফিসারের কাছে। তিনি কোনও জবাব দিতে পারেননি। মঙ্গলবারের বৈঠকে সে সব নিয়েই নানা আলোচনা হয়। বৈঠকে হাজির এক অফিসার জানান, কেন মানুষ নতুন পদ্ধতিতে যেতে নারাজ তা ভালো দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র শোভনবাবু। কোনও পদ্ধতি জটিল থাকলে তা সরল করার চেষ্টা করতেও বলেছেন মেয়র। এই পদ্ধতি মানুষের উপর যাতে বোঝা না হয়, তা-ও দেখার নির্দেশ দেন তিনি। পুরসভা সূত্রের খবর, দিন সাতেকের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে কর মূল্যায়ন দফতরকে।