COVID-19

পশু চিকিৎসকদের প্রতিষেধকের ব্যবস্থা হয়নি, প্রায় বন্ধ পোষ্য-চিকিৎসা

করোনা অতিমারির এই পরিস্থিতিতে পশু চিকিৎসকদের বড় অংশই এখন কাছে গিয়ে অনুভব করে নেওয়ার সেই প্রক্রিয়া এড়িয়ে চলছেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৮:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

কী হয়েছে? শরীরের কোথায় কষ্ট? সেটা ওদের জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ওদের চিকিৎসা করতে হয় কাছে গিয়ে, গায়ে হাত দিয়ে অনুভব করে নেওয়ার ভিত্তিতে। করোনা অতিমারির এই পরিস্থিতিতে পশু চিকিৎসকদের বড় অংশই এখন কাছে গিয়ে অনুভব করে নেওয়ার সেই প্রক্রিয়া এড়িয়ে চলছেন বলে অভিযোগ। সবটাই সেরে ফেলতে চাওয়া হচ্ছে ভিডিয়ো কলে। ফলে পোষ্যের অভিভাবকদের বড় অংশেরই প্রশ্ন, নিজের কী হয়েছে যারা বোঝাতেই পারে না, তাদের সমস্যা কি আদৌ দূর থেকে ভিডিয়ো কল করে বুঝে নেওয়া সম্ভব?

Advertisement

এমনই সমস্যার কথা শোনাচ্ছিলেন হাজরার তমালিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কুকুরের রক্তবমি বন্ধ হচ্ছিল না কয়েক দিন ধরে। যে পশু চিকিৎসক কুকুরটিকে দেখতেন, তিনি করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। অনলাইনে খুঁজে একের পর এক চিকিৎসককে ফোন করলেও কেউই বাড়ি এসে তাকে দেখে যেতে রাজি হননি। গত সোমবার তার মৃত্যু হয়। তমালিকা বলেন, “পোষ্যের তো করোনা হয় না! কিন্তু মানুষের করোনার ভয়েই ওরা মারা যাচ্ছে।”

পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষেরই এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ, পশু চিকিৎসকদের ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ধরে নিয়ে প্রতিষেধক না দেওয়া। তাই সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই বাড়ি গিয়ে অসুস্থ পোষ্যকে দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়ছে সব স্তরে।” অভিরূপবাবু আরও জানান, যে অভিভাবকের বাড়িতে করোনা হয়েছে, তাঁরা না হয় পোষ্যের হ্যান্ডলরের আসা বন্ধ করেছেন। কিন্তু যাঁদের করোনা হয়নি, এমন অনেকে নিজেরাও ভয়ে আর পোষ্যকে নিয়ে বেরোচ্ছেন না। হঠাৎ করে অভ্যাসে বদল হওয়ায় পোষ্যের মানসিকতায় গভীর প্রভাব পড়ছে। এর সঙ্গেই বিশ্ব জুড়ে হওয়া অতিমারির জেরে কিডনি ডায়েট, হেপাটিক ডায়েট বা ডায়াবেটিক ডায়েটের মতো বিদেশ থেকে আসা বহু খাবার পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

চিকিৎসক কৌস্তুভ বসু আবার বললেন, “ওষুধেরও ব্যাপক আকাল চলছে। এই সময়টায় পোষ্যের ‘টিগ ফিভার’ হতে পারে। তখন আমরা অনেক সময়ে মানুষের ব্যবহৃত ডক্সিসাইক্লিন দিই। কিন্তু করোনার ভয়ে সেই ওষুধ কেউ কেউ এত পরিমাণ কিনে রেখেছেন যে, বাজারে আর তা পাওয়াই যাচ্ছে না।”

দীর্ঘদিনের পশু চিকিৎসক শ্যামল গুহ আবার জানালেন, সরকারি ক্ষেত্রের ভয়াবহ অবস্থার কথা। তিনি বলেন, “আমার ৫৭ বছর বয়স। ২১ বছর চিকিৎসা ও অধ্যাপনার কাজ করেছি। এমন অবস্থা আগে দেখিনি। আমাদের জন্য সামান্য প্রতিষেধকেরও ব্যবস্থা করা হয়নি! নিজেদের উদ্যোগেই নিতে হয়েছে। এর জেরে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। আগে বিকেল পর্যন্ত খোলা থাকলেও বেলগাছিয়ায় প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্তই খোলা রাখা হচ্ছিল। কিন্তু পর পর অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে সেখানে। ফলে সেই ক্লিনিক পুরো বন্ধ রাখতে হয়েছে। কোনও পোষ্য সরকারি পরিষেবা পাবে কী ভাবে? তার মধ্যে চিকিৎসকেরাও ওদের দেখতে বাড়ি যাচ্ছেন না।”

সরকারি পরিষেবা কী ভাবে পাবে, সেই উত্তর জানা নেই রাজ্য ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি জওহরলাল চক্রবর্তীরও। তিনি শুধু বললেন, “পশু চিকিৎসকদের ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসেবে দ্রুত যাতে প্রতিষেধক দেওয়া হয় সেই জন্য চিঠি দিয়েছি। প্রতিষেধক না পাওয়া পর্যন্ত এই মুহূর্তে পোষ্যের চিকিৎসায় গতি আনা মুশকিল।” এই মুশকিল আসান হবে কী করে? উত্তর নেই প্রশাসনের কারও কাছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন