‘সাহেবি’র পাশে ভারতীয় পরিচিতির পথে ভিক্টোরিয়া

শুধুই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পল্লিসমাজের পাণ্ডুলিপি যেমন রয়েছে ভিক্টোরিয়ায়, তেমনই দারাশুকোর করা অনুবাদের পাণ্ডুলিপিও রয়েছে এই গর্ভগৃহে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৪
Share:

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ‘কলোনিয়াল ইতিহাস’ থাকবে কি থাকবে না, তার পক্ষে-বিপক্ষে এর আগে থেকেই অনেক মত রয়েছে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল মানে শুধুই প্রিন্স আলেকজ়ান্দ্রা, ডিউক অব কেন্ট নয়! ভিক্টোরিয়া মানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর দুষ্প্রাপ্য অনেক পাণ্ডুলিপিও।

Advertisement

ঔপনিবেশিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের সঙ্গে প্রায় সমার্থ হয়ে যাওয়া ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এত বছরের নিজস্ব ‘সাহেবি’ চরিত্রকে সঙ্গে রেখে এ বার ‘ভারতীয় পরিচিতি’ তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছে। চলতি সপ্তাহেই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানেও তাদের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! এমনিতে প্রত্যেক বছর পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী করেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ। এ বারেও তেমনটাই করবেন। দিলীপকুমার রায়কে লেখা দু’টি চিঠি সেই প্রদর্শনীতে জায়গা পাবে।

কিন্তু সেই চিঠির প্রদর্শনী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ‘প্রাচ্য-পরিচয়’ প্রতিষ্ঠার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এমনটাই জানাচ্ছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ। কারণ, ভিক্টোরিয়ার গর্ভগৃহে রবীন্দ্রনাথের আরও কিছু পাণ্ডুলিপি রয়েছে। যেমন ১৯২৬ সালে বুদাপেস্টে বসে রবীন্দ্রনাথের লেখা পুরো একটি খাতাই ভিক্টোরিয়ার গর্ভগৃহে সযত্নে রয়েছে। খাতাটির নাম ‘লেখন’। শুধুমাত্র সেই খাতাটির জন্য একক প্রদর্শনীর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অবশ্য শুধুই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পল্লিসমাজের পাণ্ডুলিপি যেমন রয়েছে ভিক্টোরিয়ায়, তেমনই দারাশুকোর করা অনুবাদের পাণ্ডুলিপিও রয়েছে এই গর্ভগৃহে। এমনিতে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ ভারতীয় চিত্রকলার প্রদর্শনী হয়ে থাকে ভিক্টোরিয়ায়। তা ছাড়াও ভারতীয় চিত্রকলা ও দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপির যে অমূল্য সম্ভার রয়েছে, ধাপে ধাপে তা জনসমক্ষে আনার পরিকল্পনা করেছেন কর্তৃপক্ষ। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে মূলত চেনেন সাহেবদের মূর্তি বা পাশ্চাত্য চিত্রকলার সম্ভার-কেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু কলোনিয়াল আর্টের বাইরেও আমাদের কাছে ভারতীয় চিত্রকলা ও পাণ্ডুলিপির অমূল্য সম্ভার রয়েছে। ধাপে ধাপে আমরা সামনে আনব।’’

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, এগুলো যে আগে সামনে আসেনি তা নয়। তবে সেটা এসেছে বিচ্ছিন্ন এবং অসংগঠিত ভাবে। কখনও সে প্রদর্শনের ঘর বদল হয়েছে, কখনও তা প্রদর্শিত হয়েছে নির্দিষ্ট কোনও ‘থিম’-এর সঙ্গে সাযুজ্যহীন ভাবে। যেমন টিপু সুলতানের হাতে লেখা নোটবুক, যেখানে তিনি যুদ্ধের কৌশল বর্ণনা করেছেন বা তাঁর হাতে আঁকা ছবি, শেষ বার প্রদর্শিত হয়েছিল বহু বছর আগে। এ বার দীর্ঘ সময় পরে সেগুলো জনসমক্ষে আনার পরিকল্পনা করেছেন কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু অনেকে এই ‘ভারতীয় পরিচিতি’ খোঁজার মধ্যে আলাদা অর্থও খুঁজে পাচ্ছেন। কেন্দ্রের অতি সক্রিয় ‘জাতীয়তাবাদ’ কি কোনও ভাবে কাজ করেছে নিজস্ব পরিচয়চিহ্ন বদলে? কর্তৃপক্ষ বলছেন, একদমই নয়! তার সঙ্গে এই ভাবমূর্তি পরিবর্তনের কোনও সম্পর্ক নেই। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ‘কলোনিয়াল ইতিহাস’ থাকবে কি থাকবে না, তার পক্ষে-বিপক্ষে এর আগে থেকেই অনেক মত রয়েছে। যেমন শশী তারুরই এখানে এসে মত দিয়েছিলেন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে শুধুমাত্র ব্রিটিশ শাসনের শোষণচিহ্ন হিসেবে তুলে ধরা দরকার। ফলে ভিক্টোরিয়ার সম্ভারের মতো একে নিয়ে বহুমতও রয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে ‘অতি উগ্র’ ভারতীয়ত্বের সামান্য সংযোগও নেই বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ভিক্টোরিয়ার আধুনিকীকরণ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে যেমন গ্যালারিগুলির সংস্কার, অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ-সহ একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তেমনই এর অনন্ত সম্ভারকেও পরিকল্পিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘এটা এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মিউজ়িয়াম হিসেবে তৈরি হয়েছিল। সে ইতিহাস তো আর আমরা মুছে ফেলছি না। সেটা থাক। কিন্তু ঔপনিবেশিকতার বিনির্মাণও তো প্রয়োজন! তাই সেটারই পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন