Cyclone Yaas

নদীর পাড়ে অবৈধ খনন, ভেসে গেল একাধিক গ্রাম

বুধবার বিদ্যাধরীর শাখা নদীর জল প্লাবিত হয়ে দেগঙ্গার চাঁপাতলা, গাংধুলাট, চকগাংধুলাট ও বারমেসিয়ার মতো বিভিন্ন গ্রাম ভেসে যায়।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২১ ০৬:৩৯
Share:

ভগ্নপথ: টানা বৃষ্টিতে উঠে গিয়েছে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের পিচ। শুক্রবার, খলিসাকোটার কাছে। নিজস্ব চিত্র

খাল কেটে কুমিরের মতোই এ যেন পাড় কেটে বিপদ ডেকে আনা! বছরের পর বছর প্রশাসনের ‘নজর এড়িয়ে’ সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবং অবৈধ ভাবে নদী থেকে পলি তোলার নামে পাড়ের মাটি কাটার কাজ চলছিল। যার জেরে দেগঙ্গায় আলগা হচ্ছিল বিদ্যাধরীর শাখা নদীর পাড়। ইয়াসের তাণ্ডবে এবং ভরা কটালের ধাক্কায় সেই দুর্বল পাড়ই বুধবার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় ভেসে গেল বহু গ্রাম। গৃহহীন হলেন অগুনতি মানুষ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্তারা জানান, প্রায় ২০০ বিঘা কৃষি জমি এবং ১৫০ হেক্টর মাছের ভেড়ি জলে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য বিদ্যাধরীর শাখা নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেওয়াকেই দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। বৃহস্পতিবারও দেখা গিয়েছে, দেগঙ্গার দু’নম্বর ব্লকের তেলিয়ায় জলের তোড়ে ভেসে আসছে পলিমাটি বোঝাই একটি নৌকা। ওই মাটি ইট তৈরিতে কাজে লাগে বলে জানা গিয়েছে।

বুধবার বিদ্যাধরীর শাখা নদীর জল প্লাবিত হয়ে দেগঙ্গার চাঁপাতলা, গাংধুলাট, চকগাংধুলাট ও বারমেসিয়ার মতো বিভিন্ন গ্রাম ভেসে যায়। ওই এলাকার ১৫টি জায়গায় জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে নদীর বাঁধ। গ্রামের মানুষ বালির বস্তা ফেলেও প্লাবন ঠেকাতে পারেননি। শুক্রবারের খবর, বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কটালে সেই বাঁধ তাঁদের কতটা নিরাপত্তা দেবে, তা নিয়ে চিন্তিত গ্রামবাসীরা।

Advertisement

বিদ্যাধরীর ওই শাখা নদীর ১৫ কিলোমিটার অংশ গিয়েছে হাড়োয়া, দেগঙ্গা, শাসনের মতো এলাকার মাঝখান দিয়ে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই সমস্ত এলাকায় একশো থেকে দেড়শো ইটভাটা রয়েছে, যার অধিকাংশই বেআইনি। বিদ্যাধরীর পাড়ের মাটি কেটে ওই সব ইটভাটায় তা পাচার করা হয়। এই চক্রে স্থানীয় অনেক বড় বড় মাথাও জড়িত বলে অভিযোগ।

এলাকার গ্রামগুলির বাসিন্দারা জানান, সেখানে জীবিকা বলতে কারও মাছের ভেড়িতে কাজ, নয়তো চাষাবাদ। কিন্তু সেই সব কাজে কর্মীর সংখ্যা সীমিত। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী গ্রামের গরিব মানুষকে রোজগারের লোভ দেখিয়ে নদীর পাড়ে কোদাল হাতে নামিয়ে দিচ্ছে।

দেগঙ্গা ১ ও ২ এবং চাঁপাতলা— এই তিনটি ব্লক পড়ে হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায়। বিদ্যাধরীর শাখা নদীটি ওই তিনটি ব্লকে অনেকটাই বিস্তৃত। নদীপাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ মেনে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘এই দুর্যোগের জেরে আমার বিধানসভা এলাকার গাংধুলাট গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ। গাংনিয়া থেকে গাংধুলাট পর্যন্ত ৮০০ মিটার অংশে একটি বাঁধ তৈরি জরুরি। এর আগেও প্রশাসনকে বলেছি, মাটি কাটার বিষয়টি কড়া হাতে দমন করতে হবে। গ্রাম পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদকেও এ ব্যাপারে আরও কড়া হতে হবে। আমি ওদের সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক করব।’’

অন্য দিকে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফারহাদ বলেন, ‘‘এ সব ঠেকাতে আগেও প্রশাসনের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আগামী দিনে আরও কঠিন পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন