তৃণমূল আরও কত বাড়ল, পরীক্ষা তারই

এক সময়ে যা ছিল বামেদের খাসতালুক, গত ভোটে সেই দমদম পুরসভা দখল করে তৃণমূল। সে বার প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত প্রার্থী দিয়েছিল বামফ্রন্ট। এ বার সেখানেই উলটপুরাণ! সব ওয়ার্ডে প্রার্থীই দিতে পারেনি তারা। দমদম পুরসভায় মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ২২। ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডই ছিল বামেদের মূল শক্তি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

দমদম শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৯
Share:

এক সময়ে যা ছিল বামেদের খাসতালুক, গত ভোটে সেই দমদম পুরসভা দখল করে তৃণমূল। সে বার প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত প্রার্থী দিয়েছিল বামফ্রন্ট। এ বার সেখানেই উলটপুরাণ! সব ওয়ার্ডে প্রার্থীই দিতে পারেনি তারা।

Advertisement

দমদম পুরসভায় মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ২২। ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডই ছিল বামেদের মূল শক্তি। এই আটটি ওয়ার্ড, অর্থাৎ বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেট থেকে দুর্গানগর স্টেশন— এক সময়ে ছিল পঞ্চায়েত এলাকা। নয়ের দশকে এলাকাটি দমদম পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০৫-এর পুরভোট পর্যন্ত সেখানে কখনও হারেনি বামফ্রন্ট। কিন্তু গত পুর-নির্বাচনে
৬ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া সবেতে জেতে তৃণমূল।

দমদম পুরসভায় বিজেপি-র ঘাঁটি বলতে শুধু গোরাবাজার এলাকা। গত লোকসভা ভোটে সেখানে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৪৪ ভোটে এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৮ ভোটে জিতেছিল তারা। অনেকের মতে, সে বার দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে দু’বার জয়ী প্রার্থী তপন শিকদার ছিলেন বলেই ওয়ার্ড দু’টি বিজেপি-র দখলে এসেছিল। তপনবাবু প্রয়াত হওয়ায় এ বার দমদমে বিজেপি-র সংগঠন কতটা কাজ করবে, প্রশ্ন উঠেছে। যদিও বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কামেশ্বর তিওয়ারি বলেন, ‘‘এ বারও আমরা ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড দখলে রাখতে পারব।’’ ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হরিন্দর সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের কোনও প্রভাব এ বার পড়বে না।’’ অন্য দিকে, দমদমে কংগ্রেসের সংগঠন যে ক্রমশই দুর্বল হচ্ছে, তা গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই স্পষ্ট। তাই কংগ্রেস কেমন লড়বে, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

Advertisement

এই অবস্থায় দমদমে তৃণমূলের রথে বিরোধীরা কতটা রাশ টানে, সেটাই এখন দেখার বলে মত অনেকের। এবার তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে সক্রিয় ভূমিকা ছিল স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। প্রার্থী নিয়ে দলে খুব বিরোধও নেই এখানে। তাই নিজেদের জয় নিশ্চিত ধরে নিয়ে ব্রাত্যবাবুদের দাবি, এখানে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে লড়াই বিজেপি ও সিপিএম-এর মধ্যে। তৃণমূল জিতেই আছে। যদিও গত লোকসভা ভোটের কংগ্রেস প্রার্থী শক্তি মৈত্র বলেন, ‘‘৬, ৯ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের জেতার আশা আছে।’’

আসন্ন পুরভোটে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও পুর-পরিষেবা যে দমদমে খুব ভাল, তা অবশ্য সবাই বলছেন না। পি কে গুহ রোডের অবস্থা বেশ খারাপ। অভিযোগ, সেখানে চার মাস অন্তর পিচ পড়ে আর দু’মাসে তা খারাপ হয়। নিকাশিও কিছু জায়গায় খারাপ। পি কে গুহ রোড সংলগ্ন এলাকা বা মল রোডে অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। বিজেপি প্রার্থী নবকুমার সরকার, কুশকুমার সিংহ বা চিতুকুমার সাউরা জানান, বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাঁরা বলছেন, ক্ষমতায় এলে পুর-পরিষেবার হাল ফিরবে।

যদিও গত পাঁচ বছরে পুর-পরিষেবার লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল নেতা তথা ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বরুণ নট্টর। এ বার ১১ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন বরুণবাবু। দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের বড় সাফল্য দমদম মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি করা।’’

এ দাবি নস্যাৎ করে বামফ্রন্টের দাবি, আগে ওই হাসপাতাল ছিল গরিবদের জন্য। এখন আর তা নেই। আরও অভিযোগ, এই এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সিন্ডিকেট-রাজ কায়েম করতে যে ভাবেই হোক জিততে চাইছে তৃণমূল। এমনকী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সন্ত্রাসের জন্য নামই তুলে নিয়েছেন। তবু ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী পর্ণশ্রী রায় ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ ঘোষ বলছেন, ভোট অবাধ হলে অধিকাংশ ওয়ার্ডই ফিরে পাবে সিপিএম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন