বরোয় নেই, ভোটে আছেন তিন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা

ছিল জোকা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। চলাচলের পথ কাঁচা, নিকাশি বলতে বাড়ির পাশে মাটি কেটে জল বের করা, এবং পানীয় জল বলতে পাতকুয়ো বা নিদেন পক্ষে গ্রাম জুড়ে দু’একটা অগভীর নলকূপ। ল্যাম্প পোস্টই ছিল না। সন্ধ্যে হলেই রাস্তাঘাট ডুবে যেত অন্ধকারে। বছরের পর বছর এ ভাবেই চলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৮
Share:

ছিল জোকা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। চলাচলের পথ কাঁচা, নিকাশি বলতে বাড়ির পাশে মাটি কেটে জল বের করা, এবং পানীয় জল বলতে পাতকুয়ো বা নিদেন পক্ষে গ্রাম জুড়ে দু’একটা অগভীর নলকূপ। ল্যাম্প পোস্টই ছিল না। সন্ধ্যে হলেই রাস্তাঘাট ডুবে যেত অন্ধকারে। বছরের পর বছর এ ভাবেই চলেছে। হঠাৎই সে সব গ্রামে হচ্ছে কংক্রিটের রাস্তা, বসছে পুরসভার কল। ২০ মিটার অন্তর বিদ্যুতের পোলে জ্বলছে সোডিয়াম ভেপার আলো। মাত্র আড়াই বছরে জোকার কয়েকটি গ্রামের চিত্র এ ভাবেই পাল্টেছে। আসলে কলকাতা পুরসভার মানচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে ওই সব গ্রাম।

Advertisement

২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর জোকা ১ এবং ২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকা কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যুক্ত হয়। তাতে কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ১৪১ থেকে বেড়ে হয় ১৪৪। ওই তিনটি ওয়ার্ড অবশ্য এখনও কোনও বরোর সঙ্গে যুক্ত হয়নি। পুর সূত্রে খবর, ভোটের পর আলাদা একটা বরো করা হবে।

এ বারই প্রথম কলকাতা পুর-নির্বাচনে ভোট দেবেন এলাকাবাসীরা। ভোট চাইতে যাওয়া প্রার্থীদের কাছে সেই কথাই বলছেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

ওই তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪২ নম্বরে গ্রাম বেশি। টালিগঞ্জ টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও পাড় হয়েই এম জি রোড ধরে কবরডাঙা মোড়। সেখান থেকে বাঁ দিকে ঢুকেই নেপালগঞ্জ রোডের দু’পাশে একটার পর একটা গ্রাম। মিদ্দির চক, রামনগর, জিয়াদার গড়। রাস্তার বাঁ পাশ বরাবর চলেছে নোংরা জলের খাল। শুরুর দিকটা পানা পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু পরে কাজ শুরু হয়নি। রাস্তার ধারেই দোকান শুকদেব বেরার। ভোটের খবর জানতেই সামনের একটা দেওয়াল লিখন দেখিয়ে বললেন, ‘‘আমরা তো কলকাতা পুরসভায় ঢুকেছি। এ বার বরাত ফিরতে শুরু হয়েছে।’’ ৩০ বছর ধরে থাকেন মিদ্দির চকে। বললেন, ‘‘খালের ওই পাড়েই বাড়ি। ওই যে বাঁশের সাঁকো দেখছেন। ওটার উপর দিয়ে পারাপার করি।’’ শোনালেন, বছর তিনেক আগেও ইট ফেলা রাস্তায় যেতে হত। আলোও ছিল না। এখন অবশ্য পোল বসেছে। সন্ধ্যে হলেই আলো জ্বলে। ভোটের প্রশ্ন উঠতেই ‘‘যাঁরা এত সব কাজ করেছেন, তাঁদের ভোট তো দিতেই হবে।’’

সাঁকো পেরিয়ে নেতাজি পল্লি। ঢোকার কাঁচা রাস্তা কংক্রিট হয়েছে। দেখেই বোঝা যায় নতুন হয়েছে। প্রায় মুখেই একটা পুরসভার কল। তার নীচে সারি দিয়ে রাখা গোটা চল্লিশেক পাত্র। বেলা ১২টায় পুরসভার জল আসবে। ‘‘তা ধরতে হবে তো’’- বললেন বয়স্ক এক বাসিন্দা। পাশেই পাকা নালা দেখিয়ে জানান, এটিও কাঁচা ছিল, বছরখানেক হল পাকা হয়েছে।

ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় এক গৃহবধূ আল্পনা। এখন তো আপনারা কলকাতা পুরসভার বাসিন্দা। ভোট দিচ্ছেন তো? ‘নিশ্চয়ই দেব’- বললেন আল্পনা। তবে পরিষেবা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিমেন্টের রাস্তা হয়েছে ঠিকই। তবে পুরো গ্রামে তা নেই। রাত বিরেতে অসুখবিসুখ হলে রোগীকে নিয়ে যাওয়া সমস্যা হয়। টাইম কলও কম। আরও দরকার।’’ পথচলতি আরেক মহিলার প্রশ্ন, ‘‘কাছাকাছি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম নেই। পুরসভা কি কোনও ব্যবস্থা করবে?’’

১৪২ ওয়ার্ডে লড়াই তৃণমূলের রঘুনাথ পাত্রের সঙ্গে সিপিএমের সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ওয়ার্ডের প্রায় ৪০ ভাগ গ্রামীণ এলাকা। বিজেপি-র প্রার্থী ফ্রান্সিস স্যামসন কোরিয়া বলেন, ‘‘এলাকায় জলের জন্য হাহাকার চলছে।’’ গ্রামে এখনও অনেক কাজ যে বাকি রয়েছে তা স্বীকার করেন তৃণমূলের প্রার্থীও। বলেন, ‘‘যা কিছু হয়েছে গত তিন বছরে। এতদিন বামেরা তো কিছুই করেনি।’’ জবাবে জোকা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সিপিএমের বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আলো, নিকাশি বা জঞ্জাল অপসারণের জন্য কলকাতা পুরসভা যে খরচ করে তা কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতে করা যায় না। তৃণমূলের হাতেও তো অনেক পঞ্চায়েত রয়েছে সেখানে দেখলেই বোঝা যাবে।’’ তবে কাজের নিরিখে দলের জেতার ব্যাপারে আশাবাদী রঘুনাথ জানান, জায়গা প্রস্তুত। ভোটের পরই এখানে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন করা হবে। তাতে জলের সমস্যা মিটবে।

১৪৩ ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২৫ হাজার। শাসক দলের প্রার্থী ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। বিদায়ী বোর্ডে ১২৪ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁর বিরুদ্ধে সিপিএমের প্রার্থী শৌভিক চৌধুরী। বললেন, ‘‘কলকাতা পুরসভায় ঢুকলেও পরিকাঠামো এখনও দুর্বল। সাধারণ মানুষের বদলে প্রোমোটারদের স্বার্থ দেখার তোড়জোড় চলছে।’’ এলাকার বাসিন্দা রবি মণ্ডল বলেন, ‘‘এক লাফে এলাকার জমির দাম ১০-১২ গুণ বেড়ে গিয়েছে।’’ তা অবশ্য অস্বীকার করেননি তৃণমূলের প্রার্থী ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য। তবে তাঁদের আমলে এ সব এলাকাকে কলকাতা পুরসভায় যুক্ত হওয়ায় ভোটে বাড়তি সুবিধা মিলবে বলেই মনে করছেন তিনি।

১৪৪ নম্বরে তৃণমূলের শেফালি প্রামাণিকের সঙ্গে লড়াই সিপিএমের ফুলু মণ্ডলের। গত লোকসভা ভোটে এখানে মাত্র ৬০০ ভোটে পিছিয়ে ছিল সিপিএম। ফুলুদেবীর বক্তব্য, ‘‘জোকার উন্নয়ন তো বাম আমলেই। এটা তো মানুষ জানে।’’ সন্ত্রাস না হলে ভোটে সিপিএমই জিতবে তাঁর দাবি। মাত্র সাড়ে ৯ হাজার ভোটার এই ওয়ার্ডে। তৃণমূলের প্রার্থী শেফালি রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত ছিলেন না। স্বামী তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। বললেন, ‘‘এলাকায় যা কিছু হয়েছে মমতাদির জন্যই। ভোটে আমরাই জিতব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন