বাজে কদমতলা ঘাট। শনিবার শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
বদলে গিয়েছে গঙ্গার ছবি! কিন্তু দূষণের ছবিটা পুরোপুরি বদলেছে কি?
গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতা পুরসভা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো তুলে ফেলছিল। কিন্তু বিসর্জনের পরদিন গঙ্গার ছবিটা বদলাচ্ছিল না। শহরতলি থেকে ভেসে আসা কাঠামোয় নোংরা হচ্ছিল নদী। শনিবার, লক্ষ্মীপুজোর দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, কলকাতার ঘাট সাফসুতরো তো বটেই, মাঝগঙ্গাতেও অবিরাম কাঠামো ভাসার ছবিটা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার শহরতলির পুরসভাগুলিও কাঠামো জলে ভেসে যেতে দেয়নি। দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে পাড়ের সঙ্গে। ধীরে ধীরে তা তুলে ফেলাও হচ্ছে। ফলে কাঠামো ভেসে কলকাতার ঘাটে চলে আসার সুযোগ পায়নি। কয়েকটি ছোট ঘাটে সেই সব পরিকাঠামো না থাকায় কিছু প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। সেগুলি ভেসে আসছে।
পরিবেশবিদদের একাংশের মতে, দূষণ ঠেকাতে হলে বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই কাঠামো তুলে ফেলা উচিত। তা না হলে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হলে প্রতিমার রং, শোলার গয়না থেকে রাসায়নিক গিয়ে মেশে জলে। ফলে দূষণের মাত্রা বাড়ে। পরিবেশবিজ্ঞানী তন্ময় রুদ্র বলছেন, গঙ্গায় কাঠামো ভেসে যেতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু শহরতলির ঘাটের কাছে প্রতিমা বেঁধে রাখলেও তা জলের সংস্পর্শে আসছে। ফলে দূষণ হচ্ছেই। তা হলে উপায় কী?
এখানেই ফের সামনে আসছে গঙ্গায় বিসর্জন বন্ধ করার প্রসঙ্গ। নৈহাটির কালীপুজোয় হোসপাইপ দিয়ে প্রতিমা ধুয়ে ফেলার রেওয়াজ রয়েছে। গোটা রাজ্যে বিসর্জনের ক্ষেত্রে কি সেই প্রথাই চালু করা সম্ভব নয়? সম্প্রতি এমনই একটি আর্জি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত। এ বছর সময় কম থাকায় জাতীয় পরিবেশ আদালত কোনও নির্দেশ দেয়নি। তবে বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, এই বিসর্জন চালু করা যায় কি না, তা রাজ্য সরকারের ভেবে দেখা উচিত।
দইঘাটে।
পরিবেশ আদালতের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, শুধু গঙ্গায় বিসর্জন বন্ধ করলেই হবে না। অন্য নদীতেও বিসর্জন বন্ধ করতে হবে। কারণ, অনেক নদীই গঙ্গায় মিশেছে। সেই সব নদীতে বিসর্জন হলে, গঙ্গায় প্রতিমার কাঠামো ভেসে আসবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতে, বিসর্জনের দূষণ শুধু গঙ্গায় নয়, গঙ্গা অববাহিকার ছোট ছোট নদী-খালগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে হবে। কারণ ওই নদী-খালের অনেকগুলি গঙ্গার সঙ্গে যু্ক্ত। সেগুলি দূষিত হলে গঙ্গাও রেহাই পাবে না।
এমনটা আদৌ কি করা সম্ভব? এখানেই পরিবেশকর্মী ও বিজ্ঞানীদের অনেকে ভরসা রাখছেন রাজ্য সরকারের উপরে। তাঁরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে বিসর্জনের শোভাযাত্রাকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছেন, ঠিক সে ভাবেই তিনি নির্দেশ দিলে বিসর্জনের নৈহাটি মডেলও কলকাতা এবং শহরতলিতে চালু করা সম্ভব। তন্ময়বাবুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে আমরা আর্জি জানাচ্ছি।’’ পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, এর সঙ্গে মানুষের ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। তাই এখনই ‘জোর করে’ নৈহাটি মডেল চালু করার কথা ভাবছেন না তাঁরা। তবে শোভনবাবুর সংযোজন, ভবিষ্যতে যদি মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়, তখন হয়তো নৈহাটি মডেলও চালু করা সম্ভব হবে।